মেক-আপ, হেয়ারস্টাইল, পোশাক– সবকিছু প্রাধান্য পায়, শুধু পায়ের সৌন্দর্য নিয়েই তেমন সচেতনতা দেখা যায় না। অথচ কুশ্রী পা সাজগোজের অনেকটাই মাটি করে দিতে পারে। পায়ের আকর্ষণীয়তা বজায় রাখা তাই অত্যন্ত জরুরি।
পায়ের গোড়ালির অবস্থা আগে পরখ করুন। গত শীতে যদি সেটার অবস্থা চূড়ান্ত খারাপ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আগে গোড়ালি মেরামতে মন দিন। একটু সচেতনতা, একটু যত্ন – ব্যস এটুকু হলেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন চুল থেকে নখ, সর্বাঙ্গসুন্দরী।
সাপ্তাহিক রুটিন
– ঈষদুষ্ণ জলে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ও লেবুর রস দিয়ে দিন, তারপর ওই জলে ১০-১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন।
– পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষে, পরিষ্কার জলে পা ধুয়ে, শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছুন তারপর ফুট ক্রিম লাগিয়ে নিন।
– পা ডোবানোর জন্য, সপ্তাহে একবার অ্যাভন ফুট ওয়ার্কস রিফ্রেশিং সিট্রাস ফুট সোপ অথবা ফরেস্ট এসেন্সিয়াল লাগজারি ফুট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
– পায়ের শুষ্কতা দূর করতে প্রতিরাতে বিসি ল্যাবরেটরিজের রি-কন্ডিশনিং কেয়ার ফর ড্রাই ফিট অথবা যে-কোনও বাদামযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন।
– প্রতি রাতে অল্প গরম জলে পা ডুবিয়ে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে বা কোনও স্ক্রাবিং ক্রিম দিয়ে রগড়ে, পায়ের ত্বকের মৃত কোশ ঝরিয়ে ফেলুন।
পেডিকিয়োর
বিউটি পার্লারে আজকাল পেডিকিয়োর করান বহু মহিলাই। এই পদ্ধতিতে পায়ের মাসাজ ও ক্লিনিং দুই-ই করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন পায়ের নার্ভের যোগ রয়েছে শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ অংশের সঙ্গে। তাই সঠিক ফুট মাসাজের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, স্ট্রেস দূর হয়। তাই বাড়িতে সম্ভব না হলে পা পরিষ্কার ও মাসাজের কাজে বিউটি পার্লারের সাহায্য নিন। পায়ের ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে মাসে একবার পায়ে ব্লিচ করান। এতে Beauty of feet বাড়বে।
এক্সফোলিয়েশন
সপ্তাহে দুই দিন পায়ের মৃত কোশ ঝরান। এই এক্সফোলিয়েশনে পায়ের ত্বক নরম হবে। বাজারে নানা ধরনের স্ক্রাব আজকাল পাওয়া যায়। রাইস ব্র্যান স্ক্রাব বা অ্যাপ্রিকট স্ক্রাব এই কাজে অত্যন্ত উপযোগী।
ফিশ পেডিকিয়োর কখনও নয়
এই পদ্ধতিতে একটি জলে ভরা ফিশ ট্যাংকে পা ডোবানো হয়। ওই পাত্রে রাখা মাছগুলি পায়ের মৃতকোশ খেয়ে নেয়। তবে এই পদ্ধতি অনেক বিশেষজ্ঞই এড়িয়ে চলতে বলেন। কারণ অনেকসময় মাছেরা নখের চারপাশের নরম ত্বক-কে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এর কারণে ত্বক ও নখের মাঝখানে ফাঁক তৈরি হয় এবং এখানে ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া একই জলে একাধিক ক্লায়েন্টকে পেডিকিয়োর করানো হয়, ফলে একজনের পায়ের ত্বকের সংক্রমণ অন্যজনের ত্বককে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
ফাটা গোড়ালি সারান
হালকা গরম জলে ২-৩ চামচ নুন দিয়ে স্টিম বাথ নিন। তারপর পা ধুয়ে মুছে অ্যালোভেরা যুক্ত ফুট ক্রিম লাগান।
পাকা কলা হাত দিয়ে চটকে, এতে অলিভ অয়েল মিশিয়ে রোজ রাতে ফাটা গোড়ালি মাসাজ করুন।
গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ প্রতিদিন পা পরিষ্কার করার পর ব্যবহার করুন, পা ফাটার সম্ভাবনা কমবে।
জরুরি সতর্কতা
জুতো বা স্যান্ডেল থেকে তৈরি হওয়া ফোসকা বা ক্ষত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমের সাহায্যে সারান। ক্ষত থাকা অবস্থায় পেডিকিয়োরের ঝুঁকি নেবেন না।
পায়ে কড়া পড়ে থাকলে ড.শোল্স এর বিশেষ ধরনের রিমুভার ব্যবহার করুন। ওষুধে জারানো এই প্যাড ব্যবহার করলে কড়া বসে গিয়ে পায়ের নীচের চামড়া ক্রমশ মোলায়েম হয়ে যাবে।
পায়ের নখ ছোটো রাখুন ও চৌকো শেপে কাটুন।
পায়ের কমফর্ট অনুযায়ী জুতো পরুন, ফ্যাশন-কে আমল দিতে গিয়ে পায়ের সমস্যা ডেকে আনবেন না।
অনেকেরই পায়ে বেশি ঘাম হয়, দীর্ঘক্ষণ মোজা পরে থাকলে পায়ের চামড়া সাদা হয়ে যায় ও পায়ের ফাঁকে ইনফেকশন হয়। এগুলি প্রতিরোধ করতে টানা দীর্ঘ সময় ধরে মোজা ও পা ঢাকা জুতো পরে থাকবেন না, মাঝে মাঝে পায়ে হাওয়া লাগান। মোজা পরার আগে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ট্যালকম পাউডার দিন। রাতে শোবার আগে ফিটকিরি দেওয়া জলে পা ডুবিয়ে রাখুন।
পায়ের যত্ন শুধু শীতেই নয়, সারা বছর ধরে নিন। বিউটি পার্লারেই যান বা বাড়িতে নিজে করুন, মাসাজ এবং ক্লিনিং খুবই জরুরি। নিয়মিত পায়ে ফুট ক্রিম দিন। দেখবেন আপনার পায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবেন সব্বাই।