উৎসবের মুখে আমরা সকলেই ত্বকচর্চায় একটু বেশিই ধ্যান দিয়ে থাকি। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে আমরা সবসময় তৎপর। কিন্তু এক দিনে বা এক সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের শ্রী ফিরিয়ে আনা সত্যি করেই অসাধ্য কাজ। সারা বছর ধরেই জারি রাখতে হয় ত্বকের পরিচর্যা। Premature Skin Aging, সৌন্দর্যকে ম্লান করে। তাহলে দেরি করে লাভ কী, উৎসবের শুরুতেই আপনিও নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করে দিন। সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য কী করণীয় সেই পরামর্শ নিয়ে হাজির গৃহশোভা।
খাবারের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন : ডায়েটে রাখুন টাটকা ফল, সবুজ শাকসবজি, প্রোটিন এবং ভিটামিন। ভিটামিন সি-যুক্ত আহার, ফ্যাট এবং শর্করামুক্ত আহার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে। কম চিনি শরীরের ইনসুলিন স্তর স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। টাটকা ফল ও সবুজ শাকসবজি সুস্থ ত্বকের জন্য অত্যন্ত জরুরি উপাদান।
ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়ামে ত্বক পরিষ্কার থাকে। দৌড়ানো, জগিং ইত্যাদি শরীরের রক্তপ্রবাহ উন্নত করে ফলে ত্বকের গ্লো বাড়ে।
নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন : আমাদের শরীরে প্রচুর শিরা-উপশিরা রয়েছে যেগুলি শরীরে রক্ত বহন করে। ত্বককে সুস্থ রাখতে রক্তের প্রবাহ ঠিক থাকা একান্ত দরকার। রোজ কম করে ৮-১০ গেলাস জল পান করা উচিত। পর্যাপ্ত মাত্রায় টাটকা ফল-সবজি খাওয়া উচিত। তরমুজ, কমলালেবু, শসা, স্ট্রবেরি, ফ্রুটি, আঙুর ইত্যাদি যেসব ফলে জলের পরিমাণ বেশি, সেগুলি বেশি করে খাওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম দরকার : ৮ ঘন্টার টানা ঘুম শরীর সুস্থ রাখতে একান্ত দরকার। ঘুম ঠিকমতো না হলে ত্বকও অসুস্থ দেখতে লাগবে। শোওয়ার আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই লাগাবেন।
সম্পূর্ণ শরীরের যত্ন নিন : মুখ ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন গলা, ঘাড়, বুক, হাত-পা সবেরই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আঙুল এবং পায়ের নখেরও বিশেষ যত্নের দরকার হয়। ঈষদুষ্ণ জলে হাত ও পায়ের আঙুল খানিক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তোয়ালে দিয়ে রগড়ে ডেড স্কিন তুলে ফেলুন।
অ্যান্টি aging ট্রিটমেন্টস
বোটক্স : এটি সবথেকে জনপ্রিয় নন সার্জিকাল কসমেটিক ট্রিটমেন্ট। বলিরেখা এবং কপালের সূক্ষ্মরেখা যা কিনা এজিং-এর লক্ষণ, সেগুলি মুছে ফেলতে বোটক্স হল সবথেকে কার্যকরী ট্রিটমেন্ট। ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত এই চিকিৎসা চলে। অবশ্য যারা গর্ভবতী কিংবা শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছেন তাদের এই চিকিৎসা সেই সময় করানো উচিত নয়।
ফিলার্স : মুখের ত্বক মসৃণ ও মোলায়েম করতে এবং বলিরেখা দূর করতে জেল-এর মতো দেখতে ফিলার্স ইনজেক্ট করা হয়। এটি একটি কসমেটিক ট্রিটমেন্ট, যা কিনা বলিরেখা দূর করে মুখের ভলিউম বাড়ায়।
লিফটিং : এই পদ্ধতিতে সুতোর মতো জিনিস ত্বকে ভিতরে ঢোকানো হয়, যেটি ত্বক শুষে নেয়। এই সুতো সার্জারি ছাড়াই ফেস লিফটিং করে। এতে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। থ্রেড লিফটিং ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক মসৃণ করে, এছাড়াও ত্বকের টেক্সচার এবং টোন উন্নত করে ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়।
লেজার : বলিরেখা, ফোটোএজিং এবং পিগমেনটেশনের চিকিৎসার জন্য লেজার ব্যবহার করা হয়। এই ট্রিটমেন্ট ত্বকের কোলোজেন নির্মাণ বৃদ্ধি করে ত্বককে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বক কোমল এবং ইয়ং দেখতে লাগে।
পিল : পিল এক ধরনের জেল। Aging-এর কারণে হওয়া নানা সমস্যার চিকিৎসা এর দ্বারা করা হয়। ত্বকের বাইরের খারাপ হয়ে যাওয়া পরত তুলে ফেলতে পিল সাহায্য করে। এরপর স্বাভাবিক ভাবেই ত্বকের নতুন কোশ তৈরি হওয়া শুরু হয়। পিল-এর সাহায্যে ত্বকের ফাইন লাইনস, বলিরেখা, ডার্কস্পট, আন-ইভন স্কিনটোন এবং টেক্সচারেরও চিকিৎসা করা হয়।
মাইক্রোডার্মাব্রেজন : এটি খুবই সুফলদায়ী পদ্ধতি। ত্বকের ফাইন লাইনস দূর করে মৃত কোশ দূর করতে সহায়তা করে এবং কোলোজেন নির্মাণেও সাহায্য করে। এর সাহায্যে ত্বকের বাইরের ক্ষতিগ্রস্ত পরত হালকা করে তুলে ফেলা হয়। ফলে ভিতরে নতুন এবং সুস্থ কোশ আবার নতুন করে তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই পদ্ধতিতে সময় কম লাগে কারণ শুধুমাত্র ড্যামেজ ত্বকের অংশেরই চিকিৎসা করা হয়।
প্লেটলেট রিচ প্লাজমা (পিআরপি) : এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি যেটাতে প্রথমে রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এর পর ব্লাড-কে প্লেটলেটস-এর সঙ্গে মিশিয়ে রিচ প্লাজমা তৈরি করা হয়। এটিকে ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ইনজেক্ট করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
ইনজেকশন দেওয়ার আগে ওই অংশে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়। পিআরপি ইনজেক্ট করলে ত্বকে কোলোজেন এবং হায়ালুরোনিক অ্যাসিড তৈরি হওয়া শুরু হয় যা ত্বককে সারিয়ে তোলে। এটি ত্বকের বলিরেখা, ডার্ক সার্কলস, দাগছোপ, আন-ইভন স্কিনটোন, ব্রণর দাগ, ঝুলে যাওয়া ত্বক ইত্যাদির চিকিৎসায় সাহায্য করে।