প্রকাশ ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে চলে যাবার পর প্রায় দুমিনিট মোহাচ্ছন্নের মতো দরজা ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল বাসবী।
দুপুর দেড়টা নাগাদ খিচুড়ি খেতে বসেছিল বাসবী আর ঠিক সে সময়ই প্রকাশ এসে হাজির হল। পাঁচদিন আগে লক্ষীনগরের মোড়ের কাছে রাস্তা পার হবার সময় অটোর ধাক্কায় ছিটকে রাস্তায় পড়ে গিয়ে বাসবী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। চারপাশে জমে যাওয়া ভিড়ের মধ্য থেকে যখন কেউ এগিয়ে আসছিল না ওকে সাহায্য করতে তখন প্রকাশই বাসবীকে রাস্তা থেকে তুলে ওলা ডেকে, নিয়ে গিয়েছিল আকাশ নার্সিংহোমে।
ডান পায়ে পাতায় হেয়ার-লাইন ফ্র্যাকচার জুড়তে প্লাস্টার আর ফেটে যাওয়া মাথায় পাঁচটা স্টিচিং লাগিয়ে প্রকাশ ওকে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল সন্ধের দিকে। যাবার সময় ও বলেছিল দেখা করতে আসবে কোনও একদিন। কিন্তু এভাবে দুপুরের দিকে আগে না জানিয়ে ও এসে হঠাৎ হাজির হবে ভাবতে পারেনি বাসবী।
—চমকে গেছেন আমাকে দেখে, তাই না? প্রকাশ বলেছিল হেসে। অসময়ে এসে আপনাকে বিরক্ত করলাম।
বাসবী মাথা ঝাঁকিয়ে বলেছিল, না না, বিরক্ত হব কেন? আসুন ভেতরে।
—আপনি ওয়াকার ইউজ করছেন না কেন? ভাঙা পা তাড়াতাড়ি সারাতে হলে আপনাকে ওয়াকারের সাহায্য নিতে হবে।
—আমার মেয়ে রিয়াও আমাকে ওয়াকার নিতে বলেছে, বাসবী দরজা বন্ধ করতে করতে বলেছিল।
—আপাতত আমার হাতে ভর দিয়ে ভেতরে চলুন আপনি, প্রকাশ বলল হাত বাড়িয়ে দিয়ে দীর্ঘকায়, সুদর্শন যুবকটি বয়সে অন্তত দশ বছরের ছোটো হবে ওর থেকে কাজেই বাসবী বিনা দ্বিধায়, অসংকোচে প্রকাশের হাতে ভর দিয়ে পা টেনে টেনে এসে বসল সোফায়।
—সেদিন আপনি খুব বাঁচা বাঁচিয়ে দিয়েছেন আমাকে মিস্টার প্রকাশ।
—যখন বয়সে আপনার থেকে ছোটোই, তখন আমাকে নাম ধরে তুমি বলে সম্বোধন করলে খুশি হব।
বাসবী হেসে বলল, আচ্ছা তাই করব আমি। সেদিন তুমি এসে আমাকে রাস্তা থেকে না তুললে পেছন থেকে কোনও গাড়ি বা ভ্যান এসে যদি…
—আরে না না, অতটা ভয় পাবার মতো কিছু হয়নি। লোকজন তো জমেই গিয়েছিল আপনার চারপাশে, কেউ না কেউ ঠিক এগিয়ে আসত আপনাকে তুলে নিতে।
বাসবী ভ্রূ কুঁচকে বলল, বুঝতে পাচ্ছি তুমি দিল্লির ছেলে নও। এখানকার লোকজন কারও আপদ-বিপদে সহজে এগোতে চায় না। পকেটমার, ছিনতাইবাজ কাজ করে চলে যায় কিন্তু চ্যাঁচামেচি করলেও সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসে না। তা কোথাকার ছেলে তুমি বলো তো?
—আমার বাড়ি বেনারস। পড়াশোনা করেছি এলাহাবাদ আর বেঙ্গালুরুতে। চাকরি নিয়ে গুরুগ্রামে এসেছি ছমাস হল।
—খুব ভালো। বসো প্রকাশ, তোমার জন্য চা করে আনছি আমি।
—মাফ করবেন, এই ভরদুপুরে চা খাব না। আপনার দুপুরের খাওয়া হয়ে গিয়েছে?
বাসবী ভাবল হ্যাঁ বলবে, কিন্তু তারপর ওর মনে হল যে-লোকটা ওর প্রাণ বাঁচিয়েছে তাকে মিথ্যে বলবে না। আমার ঝি উমা খিচুড়ি রেঁধে রেখে গেছে আমার জন্য। তোমার যদি আপত্তি না থাকে একটু খিচুড়ি খেয়ে নাও আমার সঙ্গে।
প্রকাশ প্রথমে না না করলেও শেষ পর্যন্ত বাসবীর অনুরোধে খিচুড়ি খেতে বসে গেল ওর সঙ্গে।
—আগে থেকে জানিয়ে এলে তোমাকে এর থেকে ভালো কিছু রান্না করে খাওয়াতে পারতাম, বাসবী বলল খেতে খেতে। রাজমা-চাওল কিংবা পুরি-সবজি। তা এদিকে কোথায় এসেছিলে তুমি?
প্রকাশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, কেন আপনাকে দেখতে আসতে পারি না আমি? আজ তো শনিবার, আমার অফিস ছুটি।
—কী কাজ করো তুমি, প্রকাশ?
—আমি ইঞ্জিনিয়র, একটা আইটি কোম্পানিতে কাজ করি।
—খুব ভালো। আমার মেয়ে রিয়ার সঙ্গে তোমার কখনও আলাপ করিয়ে দেব। ও দুসপ্তাহ আগে পুণেতে গেছে কম্পিউটার সাযে্সে বিটেক কোর্স করতে। আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুব ভালো। বারো ক্লাসের পরীক্ষায় সাতানব্বুই পারসেন্ট পেয়েছে সাযে্সে। জযে্ট এন্ট্রান্সেও ভালো রেজাল্ট করেছে। বাসবী সস্নেহে তাকাল দেয়ালে টাঙানো, ফ্রেমে বাঁধানো, মা-মেয়ে যুগল ছবির দিকে। গালে গাল লাগিয়ে ওরা যেভাবে হাসছে তাতে ওদের মা মেয়ে নয়, দুই বোন বা ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
—আপনার সঙ্গে আপনার মেয়ে বয়সের তফাত খুব কম মনে হচ্ছে এই ছবিতে, প্রকাশ বলল ছবির দিকে চোখ রেখেই।
—ঠিকই বলেছ তুমি, ও আমার থেকে ঠিক সতেরো বছরের ছোটো। আমরা এখন বন্ধুর মতোই হয়ে গেছি।
খাওয়া হয়ে গেলে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ওরা এসে বসল সোফায়। একটু পরে প্রকাশ বলল, এখন আপনি বিশ্রাম করুন, আমি উঠি। সামনের বার এসে আপনাকে যেন ওয়াকার নিয়ে হাঁটছেন দেখতে পাই।
—নিশ্চয়ই দেখবে, কিন্তু তোমার সামনের বার কতদিন পরে আসবে সেটা তো বললে না?
প্রকাশ হেসে বলল, শনি-রোববার ছাড়া তো আমার আসা হবে না।
—এবার দয়া করে একটা ফোন করে এসো, যাতে তোমাকে আবার খিচুড়ি খেতে না হয়। আমার ফোন নাম্বারটা সেভ করে নাও তোমার মোবাইলে।
একটু পরে প্রকাশের হাতে ভর দিয়ে বাসবী দরজায় পৌঁছেছিল ওকে বিদায় জানাতে। কিন্তু দরজার ছিটকিনি না খুলে বাসবীর মুখটা দুহাতের মধ্যে নিয়ে ওকে স্তম্ভিত করে দিয়ে প্রকাশ চুমু খেল! বাসবী প্রথম ভেবেছিল প্রকাশ ওর সঙ্গে বেয়াড়া ঠাট্টা করছে, কিন্তু প্রকাশের উত্তপ্ত ঠোঁট ওর ঠোঁটের উপর চেপে রইল পুরো এক মিনিট কিংবা তারও বেশি সময়। তারপর মুখ তুলে বাসবীর দুই গালে চুমু খেয়ে নরম গলায় ও বলেছিল, আমি তোমাকে ভালোবাসি, বাসবী।
দরজা খুলে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ও নীচে চলে গেল আর হতভম্ব বাসবী পাথরের মূর্তির মতো দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল।
দুই
দুর্ঘটনার পর কীভাবে প্রকাশ ওকে রাস্তা থেকে তুলে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিত্সা করিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ রিয়াকে পরের দিনই জানিয়েছিল বাসবী। সেদিন সন্ধ্যার দিকে মায়ের শরীর কেমন আছে ফোনে জানতে চাইলে বাসবী মেয়েকে জানাল, প্রকাশ আজ ওকে দেখতে এসেছিল। খুব ভালো ছেলেটা, বলল বাসবী হালকা ভাবেই।
—হি ইজ আ গুড সামারিটান, মম। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি খুব আনন্দে রয়ে আজ, রিয়া বলল। প্রকাশ কি খুব হ্যান্ডসাম মম?
—তা বলতে পারিস। বেনারসের ছেলে, একটু বাউন্ডুলে টাইপের নইলে এভাবে না জানিয়ে ভরদুপুরে এসে হাজির হয়? আমি ভাবলাম খেয়েটেয়ে এসেছে, তাই চা অফার করলাম। চা না খেয়ে ছেলেটা শেষে আমার সঙ্গে বসে খিচুড়ি খেল।
—ভালোই তো, হ্যান্ডসাম গুড সামারিটানের সঙ্গে বসে খিচুড়ি খাওয়ার ভাগ্য কজনার হয় বলো?
—ধ্যাৎ, কী যে বলিস তুই। পাগলাটে টাইপের ছেলে ও, কখন কী করে বসে তার ঠিক নেই। প্রকাশ যে ওকে চুমু খেয়েছে সে খবরটা মেয়েকে জানাবার সাহস হল না বাসবীর। প্রকাশ যদি সত্যিই খেয়ালের বশে ওকে চুমু খেয়ে থাকে আর দুএকবার ওর খবরাখবর নিয়ে এখানে আসা বন্ধ করে দেয়? রিয়া জানতে পারলে মাকে ত্রিশোর্ধ মহিলাদের নতুন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, সে ব্যাপারে জ্ঞান দিতে শুরু করবে।
—পা কেমন আছে তোমার? রিয়া জিজ্ঞেস করল।
—ব্যথাটা চলে গেছে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতো ক্যালসিয়াম খেয়ে যাচ্ছি। ওয়াকার নিয়ে চলাফেরা করছি না বলে প্রকাশ খুব বকাবকি করে গেল।
—ঠিকই করেছে, আমি তো প্রথম দিনই বলেছিলাম তোমাকে। তা আমার কথা শুনলে তো! ওয়াকার না ইউজ করলে পায়ে পাতার উপর জোর পড়বে, হাড় জোড়া লাগতে সময় লাগবে।
—ঠিক আছে, ওয়াকার কিনে নেব আমি। কাল পাশের বাড়ির সুনীতাকে নিয়ে নার্সিংহোমে যাব কপালের স্টিচ কাটতে। এবার তোর খবর বল। কলেজ, হস্টেল সব ঠিক আছে তো?
রিয়া জানাল, ওর কলেজের ফ্যাকাল্টি খুব ভালো, প্রশ্ন করলে বিরক্ত হয় না। হস্টেলে ওর রুমমেট অঙ্কিতা খুব শান্ত, পড়ুয়া মেয়ে একটু ধার্মিক টাইপের, সকালে উঠে হনুমান চল্লিশা পড়ে, বৃহস্পতিবার সাঁইবাবার মন্দিরে যায়। ওর বাড়ি লখ্নউ-এ। হস্টেলের খাবারদাবার এ ক্লাস না হলেও মোটামুটি ভালো, টলারেব্ল বলা চলে। গতকাল ফ্রেশারদের জন্য যে-পার্টি দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ, তাতে রিয়া রং দে বাসন্তী গেয়ে খুব তালি পেয়েছে। পুণেতে গিয়ে রিয়া ওর কলেজ লাইফ ভালোভাবে উপভোগ করছে শুনে বাসবী নিশ্চিন্ত হল।
মেয়ে সঙ্গে কথা শেষ করে বাসবী এসে ওর শোবার ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়াল। ছত্রিশ বছর বয়সে বাসবী এখনও সুন্দরী, এমনকী রিয়ার ভাষায় ওকে সেক্সিও বলা চলে। গায়ে রং একটু চাপা আর মাঝারি উচ্চতার হলেও ওর বড়ো বড়ো প্রতিমার মতো টানা চোখ, ডিম্বাকৃতি মুখের গড়ন, পুরু ঠোঁট (রিয়ার ভাষায় বি স্টাংগ লিপ্স) আর লম্বা, ঘন, কালো চুল এখনও আকৃষ্ট করতে পারে প্রকাশের মতো অনেক কম বয়সি ছেলেকে। রসগোল্লা খেয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনে দিল্লির বাঙালি কলোনি চিত্তরঞ্জন পার্কে বড়ো হওয়া বাসবী এখন দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব দিল্লির পাণ্ডব নগরের বাসিন্দা।
মুখের উপর এসে পড়া চুল সরিয়ে দিয়ে আয়নায় হাসল বাসবী। কী দেখল প্রকাশ ওর মধ্যে যে দ্বিতীয়বার দেখা হতেই ওর এই অসুস্থ অবস্থায় চুমু খেয়ে বসল ওকে? পুরুষ মানুষকে সব সময় চেনা যায় না, বোঝা যায় না। লম্বা একটা শ্বাস নিল বাসবী। প্রকাশ এক আচেনা, আগন্তুক, আমাকে সাবধানে থাকতে হবে, বাসবী নিজেকে বোঝাল। কে জানে বেনারসের এই সুদর্শন ছেলেটি ওর সঙ্গে ভাব করে হয়তো শুধু উপভোগ করতে চায় তার শরীর, ওর সেবার বিনিময়ে যদি সেটাই সত্যি হয়ে দাঁড়ায় তবে ওকে স্পষ্ট ভাবে না করে দিতে হবে।
মনস্থির করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাসবী চলে গেল রান্নাঘরে এক কাপ চা করতে। না, কাল সুনীতার সঙ্গে বেরিয়ে নার্সিংহোম থেকে ফেরার পথে একটা ওয়াকার কিনতে হবে। না হলে হুট করে প্রকাশ যদি আবার এসে পড়ে কোনওদিন তাহলে, গালমন্দ শুনতে হবে তাকে।
তিন
পরের শনিবার সন্ধের দিকে প্রকাশ আবার এসে হাজির হল ফোন না করেই। বাসবী ওয়াকার ব্যবহার করছে দেখে ও খুশি হল, আরও খুশি হল ওর মাথার স্টিচ খুলে ফেলা হয়েছে দেখে।
—আজ তোমার কপাল ভালো প্রকাশ, বাসবী বলল সোফায় বসে। আমার ঝি ঊমা বিকেলে এসে সুজির হালুয়া করে দিয়ে গেছে, চায়ের সঙ্গে ওটাই দেব তোমাকে।
—কিন্তু ভাঙা পায়ে ভর দিয়ে তোমাকে আমার জন্য চা করতে হবে না, প্রকাশ বলল। প্রকাশ যে ওকে তুমি সম্বোধন করেছে তাতে আর আশ্চর্য হল না বাসবী।
—চা করতে কোনও অসুবিধা হবে না আমার, বলল বাসবী। ওয়াকার নিয়ে এখন আমি দিব্বি চলাফেরা করতে পারি।
—চলো রান্নাঘরে গিয়ে তোমায় সাহায্য করি আমি।
প্রস্তাবটা সরাসরি নাকচ করে দিতে চাইল না বাসবী। তাই বলল, সবতো হাতের কাছেই আছে, কী দরকার তোমার?
কিন্তু প্রকাশ ততক্ষণে রান্নাঘরে চলে গেছে, কাজেই ও যখন কেটলিতে জল ভরে, উপরের তাক থেকে চায়ের কাপ, ছাঁকনি ইত্যাদি এগিয়ে দিল, বাসবী কোনও বাধা দিল না। চায়ের জল যখন ফুটতে আরম্ভ করেছে ঠিক তখনই প্রকাশ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খেল আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল সেই যাদু মাখানো, হৃদয় দ্রবিভত করা তিনটে শব্দ— আমি তোমাকে ভালোবাসি।
প্রকাশ যখন ওর সঙ্গে রান্নাঘরে ঢুকল বাসবী তো তখনই জানত, প্রকাশ ওকে চুমু খাবে! তবু ওর হাত কাঁপল, নিশ্বাস ঘন হয়ে এল। আমাকে চা-টা করতে দাও প্রকাশ, ও কাঁপা গলায় বলল।
উত্তরে নব ঘুরিয়ে গ্যাসের উনুন বন্ধ করে দিয়ে প্রকাশ বলল, চা পরে খাওয়া যাবে।
ওরা দুজন যখন গভীর আবেগে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছিল ঠিক তখনই বেল বাজল দরজায়। পাশের বাড়ির সুনীতা এসেছে, আঁচল দিয়ে ঠোঁট মুছে ফিসফিস করে বলল বাসবী। তুমি আমার মেয়ে শোবার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকো যতক্ষণ না ও চলে যায়।
কিন্তু সে রাতে সুনীতা গল্পগাছা সেরে যখন উঠল তখন রাত সোয়া আটটা। ততক্ষণে রিয়ার বিছানায় শুয়ে প্রকাশ ম্যাগাজিনের পুরোনো একটা সংখ্যা নাড়াচাড়া করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাসবী এসে যখন ওকে জাগিয়ে তুলে সুনীতার দেওয়া পুরির সঙ্গে হালুয়া খেতে দিল তখন নতুন করে প্রেমপর্ব শুরু করার উত্সাহ হারিয়ে ফেলেছে ওরা দুজনেই।
সে রাতে বিছানায় শুয়ে বাসবীর মনে হল, প্রকাশকে ওর পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল নতুন করে প্রেমে পড়ার বয়স ও পেরিয়ে এসেছে। শরীরের একটা নিজস্ব দাবি আছে যেটা অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই বাসবীর কিন্তু সেটা মেটাতে গিয়ে নতুন ভাবে কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে চায় না ও। নতুন সম্পর্ক মানেই নতুন আবেগ আর আবেগ মানুষকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার কোনও ঠিকানা নেই। নাহলে মাত্র ষোলো বছর বয়সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ওর বাবার অফিসের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক, পাঞ্জাবি ছেলে রোহিত খন্নার সঙ্গে কালকাজি মন্দিরে গিয়ে মালা বদল করতে পারত না বাসবী।
বিয়েটা ওদের টিকেছিল ঠিক দেড় বছর কারণ ওই সময়ে মধ্যেই মেধাবী এবং পরিশ্রমী ছেলে রোহিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভালো সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছিল। পরিবারের গুঁতোয় আর পাঁচ কোটি টাকা পণের লোভে রোহিত লুধিয়ানার এক ধনী পরিবারের মেয়ে নেহাকে বিয়ে করে ফেলল। আর আঠারো বছর বয়সে ছমাসের মেয়ে কোলে নিয়ে পাণ্ডব নগরের দুকামরার ভাড়া বাড়িতে এসে উঠতে হয়েছিল বাসবীকে।
বাসবীর বাবা রণেন বোস কোর্টে কেস ঠুকে দিলে রোহন শেষ পর্যন্ত পাণ্ডব নগরের এই পাঁচশ পঞ্চাশ স্কোয়ার ফিটের ছোট্ট, দুকামরার ফ্ল্যাট আর মেয়ে ভরণপোষণ এবং শিক্ষার জন্য কুড়ি লাখ টাকা বাসবীর অ্যাকাউন্টে জমা করে ডিভোর্সের পেপারে সই করায় ওকে দিয়ে।
মেয়ে দশ বছরে পড়লে বাসবী ওকে সব কথা জানিয়ে দিয়েছিল কেন না একটু বড়ো হবার পর থেকেই রিয়া ওকে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করেছিল। সব শুনে ওই বয়সেই বুদ্ধিমতী রিয়া মাকে বলেছিল, তোমার বয়স কম, দেখতেও তুমি খারাপ নও। তুমি আবার বিয়ে করো, মম।
বাসবী হেসে বলেছিল, না রে, আমি বিয়ে টিয়ে করব না। আমি তোকে নিয়ে খুব ভালো আছি।
কয়েক বছর পর আরেকটু বড়ো হলে বাসবী মেয়েকে বলেছিল, সাবধান রিয়া, আমার মতো অল্প বয়সে প্রেমে পড়ে জীবনটা নষ্ট করবি না তুই। নিজের পায়ে ভালো ভাবে দাঁড়িয়ে তবেই বিয়ে কথা ভাববি।
তা রিয়া তো মার উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে। উনিশ বছরের মেয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও ছেলেকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। কিন্তু মা হয়ে বাসবী কি সেই ভুলটাই করতে বসল দ্বিতীয় বার?
পরের দিন সকাল দশটা নাগাদ রিয়া ফোন করলে বাসবী বলল, তোকে একটা কথা বলার ছিল রিয়া।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মোবাইলের স্পিকার অন করে রিয়া বলল, ভালো না খারাপ কথা সেটা আগে বলে দাও মম।
—সেটা নির্ভর করছে তুই কীভাবে নিবি আমার কথাটা তার উপর। আমার মনে হচ্ছে আমি প্রেমে পড়ে গেছি।
রিয়া চট করে ওর প্রতিক্রিয়া জানাল না। সম্ভবত খবরটা ভালো ভাবে হজম করতে একটু সময় নিল ও, তারপর বলল, তুমি ঠাট্টা করছ না তো মম? তা কার প্রেমে পড়লে তুমি? প্রকাশ?
—হ্যাঁ। বয়সে আমার থেকে বছর দশেকের ছোটো হবে ও।
—সেটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। কিন্তু ও যে তোমাকে সত্যি ভালোবাসে সেটা তোমার জানা দরকার।
—বার বার বাড়ি আসছে আর…
—তোমাকে চুমু খেয়েছে, তাই না?
—কী করব বল? রান্নাঘরে এসে পেছন থেকে জাপটে ধরে…
—ঘুরে দাঁড়িয়ে কষে একটা থাপ্পড় মারলে না কেন?
—কী করে থাপ্পড় মারব ওকে? ও যে আমার জীবন বাঁচিয়েছে, আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নার্সিংহোমে চিকিত্সা করিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে।
—সত্যিকার গুড সামারিটানরা কিন্তু সাহায্যপ্রার্থীকে প্রেম নিবেদন করে না, মম। ওর যে আর কোনও প্রেমিকা নেই বা ও যে বিবাহিত নয় সেটা জানার প্রযোজন বোধ করলে না তুমি? কী আশ্চর্য! ও যে তোমার সঙ্গে দুদিন ফুর্তি করে কেটে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কী?
—ওকে এসব কথা জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। এখন কী করব তুই বল আমাকে।
—ও তোমাকে বিছানায় নিয়ে যায়নি তো?
—না, আর চাইলেও আমি রাজি হব না।
—গুড। সিচুযেন এখনও তোমার কন্ট্রোলেই আছে। ও আবার এসে চুমু খেতে চাইলে বা প্রেম নিবেদন করলে ওকে স্পষ্ট বলে দিও তুমি ওর আন্টির বয়সি, কাজেই তোমাকে ও যেন আন্টি বলেই ডাকে আর আন্টির সন্মান দেয়। ওকে সোজাসুজি বলবে ও যেন ওর নিজের বয়সি কোনও মেয়ে খুঁজে নেয় প্রেম ভালোবাসার জন্য।
—ঠিক আছে, তুই যেরকম বললি সে রকমটাই করব আমি।
—গুড গার্ল। যা বললাম তাই করবে। কলেজের সময় হয়ে গেছে, আমাকে এখন ছুটতে হবে। বাই মম।
চার
সাতদিন পর রোববার সকালে প্রকাশ এসে বলল, আমাকে কিছুদিনের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে, বাসবী।
রিয়ার উপদেশ মনে ছিল বাসবীর, তবু কেন ওর বুকের মধ্যে আলোড়ন শুরু হয়ে গেল ও বুঝতে পারল না।
—কোথায় যাচ্ছ তুমি?
—সিয়াটেল, ইউএসএ। ছমাসের ট্রেনিং হবে ওখানে।
—খুব ভালো। মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা করল বাসবী। নতুন দেশ দেখবে, চাকরিতে আরও উন্নতি হবে।
—কিন্তু তোমাকে তো ওখানে দেখতে পাব না।
—আমি তো তোমার আন্টির বয়সি প্রকাশ। আমার বয়স কত জান তুমি? চল্লিশে পা রেখেছি আমি। নিজের বয়সটা চার বছর বাড়িয়ে প্রকাশকে ওর থেকে দূরে সরে যাবার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিল বাসবী। তারপর বলল, আমাকে তুমি আন্টি বলে ডাকলেই খুশি হব আমি।
—নেভার! আমি তোমাকে ভালোবাসি, বাসবী।
—কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না, বলতে গিয়ে বলতে পারল না বাসবী। নিজের বয়সি কোনও মেয়েকে তুমি খুঁজে নাও প্রকাশ, বাসবী বলল রিয়ার উপদেশ মনে রেখে।
আর ঠিক তখনই প্রকাশ এসে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল প্রবল আবেগে, বাসবীর শ্বাস রোধ করে। দুমিনিট পর ওর ঠোঁট থেকে মুখ তুলে নিয়ে প্রকাশ বলল, আমার ভালোবাসার কী প্রমাণ চাও তুমি আমার কাছ থেকে, বলো?
—ছ’মাস পর আমেরিকা থেকে ফিরে এলে এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে কথা বলব আমি, বাসবী বলল ওর চোখে চোখ রেখে। বাসবী জানে ছ মাসের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে দুজনের জীবনে। বিদেশে গিয়ে প্রকাশ কোনও অল্প বয়সি, সুন্দরী মেয়ে সংস্পর্শে এসে ওকে ভুলে যেতে পারে।
—ঠিক আছে, তাই হবে। কিন্তু ছমাস পর ফিরে এলে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না তুমি। তুমি হয়তো জানো না তোমাকে রাস্তা থেকে কোলে তুলে নেবার সময়-ই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি আমি। আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ।
বাসবী মুখ ফিরিয়ে নিল কেন না ওর চোখে জল এসে গিয়েছিল। ভাগ্যের এ কী বিড়াম্বনা? প্রকাশ যদি দশ বছর আগে আসত ওর জীবনে তাহলে ওকে বিয়ে করতে কোনওই অসুবিধা ছিল না বাসবীর। এমনকী রিয়াও কোনও বাধা দিত না ওদের বিয়েতে।
বাসবীর অনুরোধ সত্ত্বেও প্রকাশ চা খেতে রাজি হল না সেদিন। ও বলল বাইরে যাবার জন্য ওকে কিছু কেনাকাটি করতে হবে আর দেখা করতে হবে কয়েকজন কলিগের সঙ্গে। যাবার আগে শুধু এটুকুই জানিয়ে গেল প্রকাশ যে আমেরিকায় গিয়ে বাসবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখবে ও।
সন্ধ্যার দিকে রিয়া ফোন করলে বাসবী জানাল প্রকাশ অধ্যায়ে যবনিকা টেনে দিয়েছে ও কোনওরকম ঝগড়াঝাঁটি না করেই। প্রকাশ যে ট্রেনিং নিতে আমেরিকার সিয়াটেলে চলে যাচ্ছে তাও জানাল রিয়াকে।
—ভেরি গুড মম। ইউ হ্যাভ ডান দ্য রাইট থিং। ছমাসের মধ্যে ও ওর পার্টনার ঠিক পেয়ে যাবে, হয়তো সুযোগ পেলে আমেরিকায় ও সেটল করে যাবে। ওখানের কোনও মেয়েকে বিয়ে করলে গ্রিন কার্ড পেতেও সুবিধা হবে ওর।
—ওখানে গিয়ে ও আমাকে ফোন করবে বলে বলেছে। ভাবছি ওর ফোন এলে আমি তুলব না, কী বলিস তুই?
—নো মম, ডোন্ট বি সিলি। আফটার অল হি ইজ আ গুড সামারিটান। ফোন করলে কথা বলবে জাস্ট অ্যাজ আ ওয়ে উইশিং আন্টি।
—কিন্তু আন্টি বললে ও যে খুব রেগে যায়।
—ওকে, ওকে, দেন ট্রিট হিম অ্যাজ আ ফ্রেন্ড, অ্যাজ আ গুড সামারিটান। গুড সামারিটানদের ডিসকারেজ করতে নেই কারণ ওদের সংখ্যা কমে আসছে পৃথিবীতে।
রিয়ার সঙ্গে কথা বলে মন হালকা হয়ে গেল বাসবীর। ঈশ্বরের ইচ্ছায়-ই প্রকাশ দূরে সরে যাচ্ছে যাতে ওর সঙ্গে সম্পর্কটা দানা বাঁধতে না পারে, ভাবল বাসবী স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে
পাঁচ
প্রথম সপ্তাহটা ভয়ে ভয়ে কাটল বাসবীর প্রকাশের ফোন আসবে ভেবে। রিয়া যতই বলুক একটা জোয়ান, শক্ত-সমর্থ ছেলে যে ওকে কোলে তুলেছে, ওর ঠোঁটে চুমু খেয়েছে বেশ কয়েকবার, তাকে প্রেমিকের সিংহাসন থেকে নামিয়ে বন্ধুত্বের নড়বড়ে চেয়ারে বসানো সহজ কাজ নয়। কিন্তু তিনমাস পরেও প্রকাশের ফোন না আসায় বাসবীর সেই সমস্যাটা মিটে গেল।
রিয়া শুনে বলল, মম, আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম ও ওর পার্টনার জোগাড় করে নেবে। সিয়াটেল তো আইটি হাব, বেশ কয়েক হাজার ইন্ডিয়ান থাকে ওখানে। আচ্ছা শোনো, ক্রিসমাস ভ্যাকেশনে আসছি আমি পাঁচদিনের জন্য। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
—আমারও তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কথা বলতে বলতে চোখে জল এসে গেল বাসবীর। প্রায় ছমাস মেয়েকে দেখেনি ও।
ক্রিসমাসের ছুটিতে রিয়া এলে পাঁচটা দিন মা আর মেয়ে খুব আনন্দে কাটাল। ওরা দুজন তো বন্ধুর মতোই ছিল আগে থেকে। এখন ছমাস দূরে থাকার পর সেই বন্ধুত্বটা আরও গাঢ় হয়েছে। একসঙ্গে মলে যাওয়া, সিনেমা দেখা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া… দেখতে দেখতে পাঁচটা দিন কীভাবে উড়ে চলে গেল টেরও পেল না ওরা।
বাসবী বাঙালি রান্নাবান্না শেখবার তেমন সুযোগ পায়নি, তবু বাংলা চ্যানেলে রান্নার রেসিপি দেখে নিয়ে রিয়ার পুণে ফিরে যাবার আগের দিন শুক্তোনি আর মোচার ঘন্ট করে খাওয়াল মেয়েকে।
রিয়া চলে যাবার দুসপ্তাহ পর বাসবী যখন ধীরে ধীরে ওর একক জীবনে আবার অভ্যস্ত হয়ে উঠছে তখনই ফোন এল প্রকাশের। সকাল দশটার দিকে এল ফোনটা, আমেরিকায় তখন প্রায় রাত বারোটা। ফোন ধরে হ্যালো বললে ওপাশ থেকে প্রকাশ জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন আপনি আন্টি?
প্রকাশের মুখে এই প্রথম আন্টি ডাক শুনে বাসবী হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। ঢোক গিলে কোনওমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো প্রকাশ?
—আমিও খুব ভালো আছি আন্টি। অনেকদিন আপনাকে ফোন করব ভেবেছি, কিন্তু ঠিক সাহস করে উঠতে পারিনি। তা আপনার পা ঠিক আছে এখন?
—হ্যাঁ, চলতে ফিরতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না।
—খুব ভালো। আপনার মেয়ে রিয়া কেমন আছে?
রিয়ার নাম শুনে খুশি হয়ে বাসবী বলল, ক্রিসমাসের ছুটিতে ও এখানে এসেছিল। দুজনে মিলে খুব ঘোরাঘুরি করেছি, সিনেমা দেখেছি, রেস্তোরাঁয় খেয়েছি। ও তো এখন আমার বন্ধুই!
—তা তো বুঝতেই পারছি। আমার দুঃখটা কী জানেন আন্টি, বয়সে অনেক ছোটো মেয়েকে বন্ধু করতে আপনার কোনও বাধা নেই কিন্তু কম বয়সি কাউকে নিজের প্রেমিক হিসেবে মেনে নিতে আপনার ঘোর আপত্তি আছে। এই ডাব্ল স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে জীবন কাটাতে আপনার যে-কোনও অসুবিধা হচ্ছে না সেটাই খুব আশ্চর্য লাগছে আমার!
বাসবী বুঝল প্রকাশ ঝোপ বুঝে কোপ মেরে বসেছে। অপ্রস্তুত হয়ে ও বলল, এসব কথা এখন থাক না প্রকাশ। তোমার ওখানে কেমন সময় কাটছে বলো।
—দিনটা কীভাবে কেটে যায় টের পাই না কারণ ট্রেনিং-এ বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়। রাত কাটানোই একটু কষ্টকর।
—ওখানে কোনও বন্ধুবান্ধব নেই তোমার?
—আছে বইকি তবে বন্ধু তো বন্ধুর-ই কাজ করতে পারে। কিন্তু তার বাইরেও তো একটা জীবন আছে।
প্রকাশের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বাসবী বলল, তা বান্ধবী জুটিয়ে নাও না কেন? রিয়া বলল তোমার ওখানে হাজার হাজার ভারতীয় আছে।
—তা আছে কিন্তু আমার তো বান্ধবীর প্রযোজন নেই, আমার আপনার মতো একজন সুন্দরী আন্টির প্রযোজন। নিজের অজান্তেই বাসবী খিল খিল করে হেসে উঠল।
—তুমি তো গুড সামারিটান, পরোপকারী। বাইরে বেরোলে রাস্তাঘাটের দিকে নজর রেখো। কখনও কোন সুন্দরী ভারতীয় বা আমেরিকান আন্টি দুর্ঘটনাগ্রস্ত দেখলে এগিয়ে যাবে।
—কিন্তু এখানে তো অটো নেই আন্টি আর যে স্পিডে গাড়ি চলে এখানে, তাতে অ্যাক্সিডেন্ট হলে গুড সামারিটানরা অ্যামবুলেন্স ডেকে আন্টিকে সোজা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। যাক জেনে খুশি হলাম আন্টি আপনি বহাল তবিয়তেই আছেন আর আপনার মেয়েকাম-বন্ধু…
বাসবী আর সহ্য করতে পারল না। বার বার আন্টি ডাকটা একটা বিশ্রী ঠাট্টার মতো কানে বিঁধছিল ওর। প্লিজ প্রকাশ আমাকে আর আন্টি ডাকতে হবে না তোমাকে।
—তাহলে কী ডাকব আপনাকে, ম্যাডাম?
—আগে যা ডাকতে তাই ডেকো।
—বাসবী ডার্লিং!
—প্রথমটাই যথেষ্ট নয় কি?
—অলরাইট। থ্যাংক ইউ সো-ও-ও মাচ, বেবি।
বাসবী আরেকবার খিল খিল করে হাসল। সত্যিই তো, সতেরো বছরের ছোটো মেয়ে যদি বন্ধু হতে পারে, তবে দশ বছরের ছোটো প্রকাশ প্রেমিক হতে বাধা কোথায়?
রিয়ার সঙ্গে এই নিয়ে তর্ক করবে বাসবী আর ও জানে এবার ওর স্মার্ট, বিদুষী মেয়ে ওর কাছে হেরে যাবে।