রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমি পুতিন, ছোট্ট রাষ্ট্র ইউক্রেনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে যুদ্ধ শুরু করেছেন। আতঙ্কে দেশ ছেড়েছে ইউক্রেনের ২৫ লক্ষ মানুষ। প্রতিবেশী দেশগুলো উপচে পড়ছে ঘরছাড়া এই মানুষগুলোর পরিবারকে আশ্রয় দিতে। এদের জীবন কীভাবে কাটবে, কী এদের ভবিষ্যৎ, সেই প্রশ্নের উত্তর গোটা বিশ্বের কাছে নেই।

আমেরিকা ও ইউরোপ এই পরিস্থিতিতে যা করতে পারা সম্ভব, তা করেছে। কিন্তু পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটার ভয়ে সকলেই পদক্ষেপ করতে ত্রস্ত। এত বছরের সংঘর্ষ ও ত্যাগের বিনিময়ে ইউক্রেন যে-স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা বস্তুত বিফলে যেতে চলেছে। দুর্বলকে দাসত্ব করতে হবে, এই-ই জগতের রীতি।

ইউক্রেনের পরিণতি কী হবে, সময়ই তা বলবে। কিন্তু ভুললে চলবে না এখানকার মহিলদের আত্মত্যাগ, যারা নিজের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের যুদ্ধে পাঠানোর যন্ত্রণা স্বীকার করেছে। নিজেরা বাচ্চা ও অসক্ত সদস্যদের নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে রিফিউজি হয়ে দিনযাপন করছে।

এই মহিলারাই যদি নিজেদের পুত্র ও স্বামীকে সারেন্ডার করার পরামর্শ দিতেন, হয়তো যুদ্ধ থেমে যেত, এত প্রাণ যেত না। কিন্তু রাশিয়া তার করাল থাবা শুধু ইউক্রেন অধিগ্রহণ করেই ক্ষান্ত হতো না। বরং তা প্রসারিত হতো, মাল্টোভা, এস্টোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া গ্রাস করতে। ফলে ইউক্রেনের মহিলারা তাদের দৃঢ়তা দেখিয়ে এটুকু প্রমাণ করেছেন, বিনাযুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী তারা ছাড়তে প্রস্তুত নন।

এবার আসা যাক ভারত প্রসঙ্গে। এদেশের মহিলাদের মানসিকতা এভাবেই বাল্যবয়স থেকেই তৈরি করে দেওয়া হয়, পূজাপাঠ, ধর্মাচরণ করে যাতে তারা দিনযাপন করতে পারেন। এদেশের নারীরা প্রতিবাদ করতে অপারগ। এমনকী ধর্ষণের শিকার হয়ে, তাই তাদের মতামতের সমাজে কোনও মূল্যই নেই। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সংসারটা টেনে নিয়ে চলেন যে-মহিলারা, দিনের শেষে অপমান আর গঞ্জনা ছাড়া তাদের কপালে কিছুই বরাদ্দ থাকে না। ইউক্রেনের মহিলাদের মতো তারা নিজের জমি, নিজের সন্তান, নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারবেন এ কল্পনার অতীত।

যতদিন ইউক্রেন রাশিয়ার অংশ ছিল, ততদিন ইউক্রেনে পরমাণু বোমার স্টেশনটিও রাখা হয়েিল, যাতে বিপ্রতীপ পরিস্থিতিতে এই বোমা বিস্ফোরণে তছনছ হয় ইউক্রেন, রাশিয়া সুরক্ষিত থাকে। আবার রাশিয়ার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চায় না ইউক্রেন।

সেই জন্যই ইউক্রেনের মহিলারা আজ এত বড়ো আত্মত্যাগ স্বীকার করে নিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করেন এই ত্যাগের সুফল ভোগ করতে পারবে আগামী প্রজন্ম। যেখানে মহিলারা এই কঠোর পদক্ষেপ করেননি, সেখানেই তাদের দাসত্বকে মেনে নিতে হয়েছে। মুসলিম দেশগুলিই তার প্রমাণ। সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য যেখানে নিজের স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে মেয়েদের।

আফগানিস্তানের মহিলারাও স্বামী-পুত্রকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সেটা ভ্রান্ত আদর্শকে ঘিরে, সেই কারণেই আজ তাদের জুলুম ও অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে। ইউক্রেন লড়ছে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াই। যদি রাশিয়া এই অঞ্চল কবজা করেও ফেলে, তবু নিরঙ্কুশ শান্তিতে থাকতে পারবেন না পুতিন, একথা নিশ্চিন্ত ভাবে বলা যায়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...