প্রৌঢ় মহিলারাই হোক কিংবা স্কুলের ছাত্রীরা, ইসলাম গ্রহণের অর্থ এই নয় যে, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অষ্টম শতাব্দীর পোশাকের উপর জোর দিতে হবে। হিজাব যদি সৌন্দর্য এবং ড্রেস সেন্স-এর বিষয় হতো, তাহলে অন্য কথা। এটা যদি হেলমেট-এর মতো কার্যকরী হতো তাও মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু যখন বলা হচ্ছে ইসলাম মতে, এটা পরতে হবে এবং বাচ্চা মেয়েরা বাদ যাবে না এর থেকে, তখন বিষয়টি জোরজবরদস্তি ছাড়া আর কিছু নয়।
কর্ণাটকের সরকারি স্কুলে হিজাব পরে আসায় আপত্তি তোলার বিষয়টি নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে ভুল নয়। আসলে, কপালে তিলকের অনুমতি যেমন দেওয়া উচিত নয়, তেমনই টিপ পরার ক্ষেত্রেও একই বাধানিষেধ আরোপ করা উচিত। মনে রাখতে হবে, ধর্ম প্রদর্শন করার জন্য নয়, ধর্ম অন্তরের বিষয়। এই বিষয়টি মহিলাদেরও মনে রাখা উচিত এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত। ফ্রান্সে এক বছর আগেই হিজাব ব্যান করা হয়েছে। এরজন্য ওখানকার মুসলিম মহিলারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। এখন তাদের বাড়ির লোকেরাও আর ধর্মীয় আদেশ জারি করতে পারছেন না।
মুশকিলের বিষয় হল এই যে, আমাদের দেশে এই হিজাবের বিরোধিতা সব মুসলিম মহিলারা করছেন না, বিরোধিতা করছেন কিছু হিন্দু কট্টরপন্থী। আসলে, হিজাবের বিরোধিতার নামে এইসব হিন্দু রক্ষণশীলরা প্রমাণ করতে চাইছেন যে, তারা মুসলিমদের বাড়বাড়ন্ত রুখে দিতে পেরেছেন।
হিজাব পরে স্কুল কিংবা কলেজে যাওয়া মেয়েদের রক্ষণশীল আখ্যা দেওয়া হতে পারে এবং তাদেরকে আলাদা করে দেখার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। হিন্দু ছেলেরাও যখন কপালে লাল টিকা লাগিয়ে স্কুল-কলেজে যায়, তখন তাদেরও একই ভাবে রক্ষণশীল ভাবা হয়।
অনেকে মনে করেন, যদি মুসলিম মেয়েরা হিজাব না পরে, তাহলে ধর্মের প্রদর্শন হয় না। কিন্তু মনে রাখা দরকার, যেসব হিন্দুরা হাতে ৩-৪ রকম রঙিন সুতো বেঁধে ধর্মের প্রদর্শন করেন, তাদেরও সমালোচনা করা দরকার। আবার যারা গলায় ক্রুশ লকেট ঝুলিয়ে স্কুল-কলেজে যান, তারাও সমানভাবে নিন্দনীয়। এসবই আসলে হিজাবের মতো ধর্ম প্রদর্শনের মাধ্যম।