( ২৫ )
এত চিৎকার চ্যাঁচামেচি সত্ত্বেও, লরিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। খালাসিরা লরিতে মাটির ওপর বসে আয়েশ করে বিড়ি টানছে। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করি,
তোমার নাম কি?
পার্থ।
আমাকে চেনো?
জয়ন্ত আমার খুড়তুতো দাদা। আপনাকে চিনব না? ডলিদিকেও চিনি।
আমার বুকটা আনন্দে নেচে ওঠে। বহুদিন পর জয়ন্তর নাম শুনলাম। ওর আত্মীয়রা এখানে আছে জানলাম। মনে হল এক্ষুনি হয়তো বাসবকেও দেখতে পাব। বলি, এখানে এসব কারা করছে?
সমরকাকুর এক আত্মীয় বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়েছে। এবার পার্টির সাহায্য নিয়ে ঝিল বুজিয়ে ফ্ল্যাট করবে। অনেকদিন ধরেই আস্তে আস্তে মাটি ফেলছে। যেন কেউ বুঝতে না পারে।
কেউ কিছু বলছে না?
কে বলবে? পার্ক হবে বলে মাটি ফেলছে। এই ওয়ার্ডের কমিশনারও যুক্ত আছে এর সঙ্গে।
তারপর?
আমরা ভেতরে ভেতরে খোঁজ নিয়ে কদিন আগে ব্যাপারটা জেনেছি।
লুঙ্গিপরা লম্বামতো একটি লোক এগিয়ে এসে বলল, কীসব হচ্ছে বলো তো? লোকটিকে আমি চিনি।
ডলি হঠাৎ বলে উঠল, এসব ভালো না। এত বড়ো ঝিল এ শহরে একটাও নেই। মিউনিসিপ্যালিটি কোথায় চারপাশে গাছ বসিয়ে প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজাবে তা নয়, ঝিল বোজাচ্ছে!
ডলির উত্তেজনার আঁচ যেন ছড়িয়ে পড়ল হঠাৎই। চারপাশ থেকে আরও কিছু পুরুষ মহিলা এসে জড়ো হল। কয়েকজন চিত্কার করে উঠল, এসব হতে দেব না। এলাকার উন্নয়ন চাই। ফ্ল্যাট চাই না। মন্দির সারাতে হবে। জমি বিক্রি চলবে না। দুমদাম লরিতে ঘুষি লাথি পড়ছে। কারা যেন লাঠি রড এনেছে।
পার্থ বলল, পিকুনদা আপনারা চলে যান। দাঁড়াবেন না পাবলিক খেপে গেছে।
লম্বা লোকটি আমার কাঁধে ঠেলা মেরে বলল, চলে যাও। শিগগিরি পালাও।
পার্থকে বললাম, আমার বাড়ি চেনো?
হ্যাঁ দাদা।
কাল সকালে আসতে পারবে?
নিশ্চয়ই যাব।
লরির গায়ে লাঠির শব্দ। ঢিব ঢিব। লরির হেডলাইট জ্বলে উঠল। ইঞ্জিন স্টার্টের শব্দ হচ্ছে। আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল আরও কয়েকটি ছেলে। বলল, পালান আপনারা।
কেন? ডলি আমার হাতটা ধরে ওদের জিজ্ঞেস করল।