( ২১ )
হোটেলে ফিরতে ইচ্ছা করছে না। সমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়াই। ফোন করে মাকে বলি, আমি এসে গেছি। একটু পরে হোটেলে ফিরছি।
শোন, আমরা মন্দিরে আরতি দেখছিলাম। ফিরে ফোন করব। ঠাম্মার জর্দাটা কিনে নিস।
ঠিক আছে।
একটা চেয়ার ভাড়া নিয়ে বসলাম। চাঁদ উঠেছে। ঢেউয়ের মাথায় মাথায় রুপোলি আলো থিক থিক করছে। সমুদ্র এখন আর অত ভয়াল নয়। কফিওয়ালা আসতে কফি নিলাম। এই বিশাল জলরাশির সামনে নিজের তুচ্ছতা আবার প্রমাণিত হল। আর হিমেল হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই ডলির ফোন এল।
তুই কোথায়?
সমুদ্রের ধারে।
চলে আয়, আমি হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে।
চেয়ারটা জমা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।
হলুদ চুড়িদার পরে ডলি দাঁড়িয়ে আছে। ডান কাঁধে ঝুলছে চামড়ার ব্যাগ। কাছে যেতেই হাসল।
আয়।
কী ব্যাপার?
মায়ের দুটো ওষুধ কিনতে হবে। চল, তোর সঙ্গে যাই। আমার বাঁ হাতটা জড়িয়ে ধরল।
ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি পরস্পরের শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে। চুড়িদারে ওকে ঠিক ছোটোবেলার মতো লাগছে। আমার হাতটা চেপে ধরা। মাঝে মাঝে মাথাটা আমার কাঁধে ঘষে দিচ্ছে। বললাম, ছাতিমতলা মনে পড়ে?
হুঁ-উ-উ...
মন্দির?
হুঁ-উ-উ...
আমাদের শেষ দেখা হওয়ার দিনটা?
আমার হাতে খিমচি কেটে বলল, শেষ দেখা তো হয়নি হাঁদারাম।
হাসতে হাসতে হেঁট হয়ে বলি, হ্যাঁ। আজই তো আবার দেখা হল।
হবে হবে। উইলফোর্সটা কাজে লাগাতে হয়। অত রাগ অভিমান ঠিক নয়।
ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হল। বললাম, একটা হামি খাব?
ইশ্-স-স! এখানে এসব বলতে আছে? জগন্নাথ দেবের পীঠস্থান।
দুজনেই হা হা হি হি করে হেসে উঠি। দোকান দেখতে পাচ্ছি না, নাকি দেখছি না!
কথাটা বলতেই ডলি বলল, শুধু ওষুধ কেনাটাই আমার উদ্দেশ্য কি?
তবে?
তুই যেন কেমন। চিরটাকাল ভীষণ ইনট্রোভার্ট। মনের কথা খুলে বলতে কি তোর প্রেস্টিজ হ্যাম্পার হয়?
তা নয়।
তা নয় মানে? আমার সামনে থমকে দাঁড়ায় ডলি।
হ্যাঁ। অনেকটা তাই। যা বলতে চাই তা না, বলি অন্য কথা। যা বলতে চাই না তাই বলে ফেলি।