‘নীল বট্টে সন্নাটা’ ছবির পর থেকেই আলাদা করে চোখে পড়তে শুরু করেন স্বরা ভাস্কর। তাঁর কাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বরা যে, আসলে তিনি ‘জাত অভিনেত্রী’। ‘আনারকলি অফ আরা’ যারা দেখেছেন তারা প্রমাণ পেয়েছেন এ কথার সত্যতা। তেলুগু পরিবারে জন্ম নেওয়া স্বরার, বেড়ে ওঠা কিন্তু দিল্লি শহরে৷ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর অভিনয়ের ইচ্ছে নিয়ে স্বরা মুম্বই পাড়ি দেন। শুরুতে স্ট্রাগল করতে হলেও, নিজের অভিনয় গুণে জায়গা করে নিয়েছেন বলিউডে। প্রথম ছবি ‘মাধোলাল কিপ ওয়াকিং’, কায়রো চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলেও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় ছবি সঞ্জয়লীলা বনসালির ‘গুজারিশ’। একটা সাপোর্টিং রোলে অভিনয় করেন তিনি, কিন্তু এ ছবিও বক্স অফিস সাফল্য পায়নি। এর পর একটি থ্রিলারে কাজ করেন স্বরা, ‘দ্য আনটাইটেলড্ কার্তিক কৃষ্ণন প্রোজেক্ট’। কিন্তু এ ছবিও তেমন জনপ্রিয়তা পেল না। ‘তন্নু ওয়েড্‌স মন্নু’-তে কঙ্গনা রানাওয়াতের বন্ধু পায়েল হিসাবে প্রথম বার দর্শকদের চোখে পড়েন স্বরা। বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাকট্রেস হিসাবে ফিল্‌ম ফেয়ার পুরস্কারও জিতে নেন। সেটাই সাফল্যের শুরু। গৃহশোভা-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরা কবুল করলেন তাঁর ব্যর্থতা ও সাফল্যের কাহিনি।

অভিনেত্রী হবেন এই ভাবনার সূত্রপাত কী ভাবে হয়েছিল?

ছোটো থেকেই আমি ছিলাম টিভি’র পোকা। ‘চিত্রহার’, ‘সুপারহিট মুকাবলা দেখে বড়ো হয়েছি। একসময় টিচার হবার ইচ্ছে ছিল, তারপর ঠিক করি ভেটেনারি ডক্টর হব। কিন্তু জেএনইউ-তে পড়াকালীন ‘আইপিটিএ’-র সদস্য হই। আমার গুরু এন কে শর্মার সংস্পর্শে আসি। ওঁর নাট্যদল ‘অ্যাক্ট ওয়ান’-এ অভিনয় করা শুরু করি। এখান থেকেই আমার ভেতর অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়।

মুম্বইয়ে শুরুর দিনগুলো কেমন ছিল?

আমার এক বান্ধবী ছিল, যে ওকালতিতে নিজের কেরিয়ার শুরু করার জন্য মুম্বই আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমিও ওর সঙ্গে মুম্বই চলে আসি ভাগ্য পরীক্ষা করতে। আমার মায়ের পরিচিত একজন ছিলেন এ শহরে, যার বাড়িতে আমাদের থাকার কথা ছিল। কিন্তু ওনার বাড়িতে গেস্ট এসে যাওয়ায় প্রাথমিক ভাবে আমাদের আশ্রয়হীন হতে হল। তবে সেই পরিচিত মানুষটি, তার অফিসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। দিনেরবেলায় অফিস চলাকালীন আমরাও আমাদের কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যেতাম। ওদের অফিস ছুটির পর ঘুমোনোর জন্য ফিরতাম। এভাবে দিন পনেরো চলার পর আশ্রয় মিলল। সেই সময় অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রবীন্দ্র রান্ধাওয়া এবং রাইটার অঞ্জুম রাজাবলি আমায় খুব সাহায্য করেছিলেন। প্রচুর জায়গায় পোর্টফোলিয়ো পাঠানোর পর, ক্রমশ অফার আসতে শুরু করে।

নিউকামার হিসাবে কতটা স্ট্রাগল করতে হয়েছিল?

সত্যি বলতে কী, অচেনা শহরে যে-কোনও নবাগত চট করে সুযোগ পায় না। ফিল্‌ম ইন্ডাস্ট্রিতে কারও সঙ্গে পরিচয় না থাকলে, কলকে পাওয়া মুশকিল। আমার সৌভাগ্য যে, খুব বেশি দিন আমায় দরজায় দরজায় কাজের জন্য ঘুরতে হয়নি। সুযোগ এসে গিয়েছিল।

আপনার জীবনে অনুপ্রেরণা কে জুগিয়েছে?

আমার বাবা। উনি একজন সেল্‌ফ মেড ম্যান। এটাই আমার কাছে আদর্শ হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আমি বাবার খুব ক্লোজ। সেই জন্যই হয়তো ওঁর প্রতিটা জিনিস নিজের জীবনে ফলো করি। আমি যখন মুম্বই আসার সিদ্ধান্ত নিই, বাবা বলেছিলেন, ‘নতুন শহরে যাচ্ছ। কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তা আমিও জানি না। কিন্তু এটা মনে রেখো, খারাপ ভালো যা-ই ঘটুক সেটা তোমাকেই ফেস করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এই কথাগুলো আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। উনি আমায় নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

মেইনস্ট্রিম সিনেমার বদলে আপনি একটু ভিন্ন ধারার ছবিতেই বেশি কাজ করেন। এটার কারণ কী ?

আসলে একটু অন্যরকম চরিত্র করার মধ্যে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে, আমি এই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করতে পছন্দ করি। প্রতিটা ছবিই কিছু না কিছু শেখায়। প্রতিবার আগের বারের চেয়ে বেটার পারফর্ম করার চেষ্টা করি। আমি সেই ধরনের চরিত্র পর্দায় করি যা, বাস্তবের ‘আমি’-র থেকে সামাজিক ও চারিত্রিক ভাবে একেবারেই আলাদা। আনারকলি-র জন্য আমায় সত্যি সত্যিই আরা যেতে হয়েছিল। আমি ওখানে ওই শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করে ওদের স্টেজ পারফর্মেন্স দেখি। তারপর চরিত্রটায় অভিনয় করেছিলাম। ‘নীল বট্টে’-র সময় আগ্রা গিয়েছিলাম। ওখাকার কাজের লোকদের জীবনশৈলী নিজে চোখে দেখার জন্য। ওদের বাড়িতে থেকে, খেয়ে বাস্তবিক চরিত্রটাকে পর্দায় ফুটিয়ে ছিলাম। আমার এভাবে কাজ করতেই ভালো লাগে।

আপনি নিজে একজন  মহিলা। আমাদের সমাজে মহিলাদের শোষিত হতে দেখে কী প্রতিক্রিয়া হয়?

আমাদের সমাজে এখনও পুরুষরা মনে করেন, মহিলাদের সঙ্গে যেমন খুশি আচরণ করা যায়। একসময় জমিদাররা কৃষকদের যেভাবে শোষণ করত, অনেকটা সেরকম আর কী! এদেশে প্রেমিকা হাতছাড়া হয়ে গেলে প্রেমিক তার মুখে অ্যাসিড বাল্ব ছুড়ে মারে। স্ত্রী-র গায়ে হাত তোলে স্বামী। মহিলাদের পুরুষের সমকক্ষ ভাবা তো দূরস্থান, মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না। এই মানসিকতায় পরিবর্তন না হলে পরিস্থিতি বদলানো মুশকিল। আমি একজন ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ, তাই দেশজোড়া ধর্মান্ধতা দেখে অস্থির লাগে। এদেশে ধর্মই নারীদের দুর্দশার জন্য দায়ী। আমার ক্ষমতা সীমিত, হয়তো রাতারাতি সমাজ বদলাতে পারব না। অন্তত আমার ছবিগুলোতে সমাজ বদলানোর একটা স্ট্রং মেসেজ থাকবে, সেটা আশা করব।

কী কী ছবি এখন হাতে আছে?

‘জাহান চার ইয়ার’ এবং ‘মিসেস ফালানি’, এই দুটো ছবি বড়োপর্দায় আসবে খুব শিগগিরি। এই মুহূর্তে ছবিগুলির বিষয়ে বিশদে কিছু বলতে চাইছি না। তবে আমার এই নতুন ছবিগুলির সাফল্যের বিষয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...