( ৬ )

কথাটা তোমাকে অনেকদিন হল বলব বলব করে ঠিক বলতে পারছি না। আসলে তমাল কয়েকমাস ধরেই সাংঘাতিক আপসেট। মানে মনে মনে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। সেদিন ফোনে কথা হচ্ছিল। এর মধ্যে আমাদের কয়েকবার দেখাও হয়েছে। তোমাকে কিছু বলেনি?

না তো কেন বলুন তো?

আমিও যে কীভাবে তোমাকে কথাটা বলব ঠিক বুঝতে পারছি না। সেটা তোমাকে বলা আমার সাজে কিনা তাও তো আমি জানি না। হাজার হোক তুমি তো আমার বন্ধুর স্ত্রী। আর তমাল কিন্তু আমাকে কিছু বলতেও বলেনি। আমি তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেনই বা ঢুকব খামোখা?

দেখুন শৈবালদা আপনি কী বিষয়ে কথা বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আমার আর তমালের মধ্যে তেমন কোনও ঝগড়াঝাঁটিও হয়নি এর মধ্যে।

আসলে ও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে। বলতে পারছে না।

আমি তমালের সঙ্গে কথা বলে নেব।

না না তেমনটা কোরো না। তাহলে ও আরও কষ্ট পাবে। ভাববে আমি কেনই বা বলতে গেলাম। নেহাত তমালকে আমি নিজের ভাই বলে মনে করি, তাই তোমাকে বলছি যাতে করে ওর কষ্টটা একটু কমে। তোমরা দুজনে মিলেমিশে যাও।

বলুন তাহলে, আপনিই বলুন।

না মানে এত কথা কী করে বলি বলো তো। তুমি একটু সময় বের করো। ব্যাপারটা তো মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতেই হবে আমাদের। তাই না…? সামনের উইক এন্ডে তুমি একটা জায়গা ঠিক করো আমি চলে আসব। তুমি তো জানোই শনি, রবিবার আমি ফ্রি থাকি।

কিন্তু।

কোনও কিন্তু নয় কস্তুরী, বিষয়টা খুব গম্ভীর। না হলে ভাবো আমি অফিসের কাজ করতে করতে মিটিংয়ে ফাঁকে তোমাকে এই ভর-দুপুরে বিরক্ত করতে যাবই বা কেন?

আচ্ছা আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি।

ওকে, ডান।

শৈবাল কস্তুরীর সঙ্গে দেখা করতে চাইছে কেন? কী এমন ঘটেছে যেটা ওকে না জানিয়ে সরাসরি শৈবালকে জানাল তমাল?

( ৭ )

আরে ডানদিকে গোয়ালপাড়ার আগেই তো আমাদের শ্যামের বাড়ি, ওদেরই গরু পালিয়েছে। সেই পরশুদিন সকালে চরতে বেরিয়েছিল, ফেরেনি এখনও। বোঝো কাণ্ড। সকাল থেকে কলতলায় তাই নিয়ে হইহই। দেখো আবার, হৈমি বলছিল পালিয়েছে না চুরি হয়েছে কে জানে। ওদের সঙ্গে ঘোষালের ছোটো ছেলের দিনরাত খিটিরমিটির লেগেই থাকে। গরুটা ভালো দুধ দিত শুনেছিলাম, মাস গেলে রোজগারপাতিও ভালো আসত ওর থেকে, শ্যামের একেবারে পয়মন্ত যাকে বলে। তাই বোধহয় গায়ে করে নিয়েছে জন্তুটাকে। মা মানে দিম্মা কাদের সঙ্গে যেন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলে যাচ্ছিল।

এখানে এলে এই এক সুবিধা, আবার খানিকটা অসুবিধাও বলা যায়। তবে ঘুমের ব্যাঘাতটাকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে সাইডে রেখে পিএনপিসিতেই মন দেওয়া যাক। যে যা মনে করে করুক! আসলে খানিকটা মফস্সল টাইপের জায়গাগুলোতে আজও মানুষ মানুষের খোঁজ নেয়। সকালে-বিকেলে জল নিতে যাওয়া, বাজার করতে যাওয়া আবার সন্ধে প্রদীপ দিয়েথুয়ে কথা বলাবলি হয়। ভালোমন্দের মিশে থাকা ঝাঁঝালো, রসালো খবর থাকে বটে কিন্তু কস্তুরীর কোথাও যেন মনে হয় এসবে বেশ এক ফুরফুরে মেজাজ আছে।

ওদের ভবানীপুরের মতো শহরের অলি-গলিতে সবটাই আটকা। সবটাই মেকি। নাহলে এখান থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই ও নিজে এতটা কুঁকড়ে গেল কেন? যে বাপি-মাকে দেখবে বলে মাসে একটাবার হা-পিত্যেস করে বসে থাকত বালিকাবেলায়, তাদের কাছে ফিরে এতটা অসহায়, নিঃস্ব লাগবে কেন? চরম শহুরেয়ানাতে সবটাই ওপর ওপর। তাই না?

ওমা, পকো অমন করে বসে আছিস কেন? কী হল? দিম্মামা ওকে এই নামেই ডাকে ছোটোবেলা থেকে। পকো, ছোট্ট থেকে খুব পকপক করে কথা বলত তাই।

কই না তো?

বললেই হল? আমার চোখকে ফাঁকি দিবি? আসা থেকে দেখছি কী যেন হয়েছে তোর? শরীর গতিক ভালো আছে তো? কতদিন কালুডাক্তারকে দেখানো হয়নি। বিকেলে একবার দেখিয়ে নিয়ে আসব তাহলে সরকার হাট থেকে?

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...