বিয়ে প্রথম থেকেই শুনে আসছে শেলীদেবী নাকি তাঁর সময়ে একটি স্কুলে শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু সংসারের কথা ভেবে ছেলেদের দেখবার জন্য তিনি কখনওই ঘর ছেড়ে বাইরে পা দেননি। কথাটা যে পরোক্ষে কী বোঝাতে চাইছে একটা পাঁচ বছরের শিশুও বুঝতে পারবে। এমনকী এও বলেন, তাঁর প্রথম সন্তান হওয়ার সময় শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করেছিলেন শাশুড়ির বাবা। বোঝানোর অর্থ একটাই শুধু সন্তান আনলেই হবে না, তার দায়ভার কিন্তু মেয়ে বাপের বাড়িকেই নিতে হবে। যেহেতু শাশুড়ির ক্ষেত্রেও এই একই রীতি ঘটেছিল, তাই তাঁর বউমা কস্তুরীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটা চাই-ই চাই।
এ অনেকটা কলেজের সিনিয়ররা ঠিক যেমন ভাবে জুনিয়রদের অভ্যর্থনা করে তেমনই। নিজেরা কোনও কারণে অত্যাচারিত হলে পরের প্রজন্মকেও অত্যাচার সহ্য করতে হবে। এটাই রীতি। আর এই বাপের বাড়ি প্রসঙ্গ য়ে কস্তুরীর কত বড়ো অসহায়তার জায়গা, তা তো একমাত্র ওই জানে। প্রতিটা ধাপে লড়াই করে করে ও হাঁপিয়ে উঠেছে। হাঁপিয়ে উঠেছে নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, নিজের জিন বহনকারী পূর্বপুরুষদের অপরিণামদর্শিতা দেখে। সেখানে তমালের গোটা পরিবার তো বাইরের লোক! ওরা ওর কথা ভাববে কেন?
কস্তুরী সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, ও যদি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ে মতো মিশে থাকার চেহারা নিয়ে পৃথিবীতে আসত তাহলে হয়তো এত কিছু ঘটতই না। পৃথিবীটা হয়তো আরও সুন্দর হয়ে ধরা দিত একটু ভালোবাসা, একটু স্নেহ হয়তো ওর জন্যও বরাদ্দ থাকত। নয় কী?
তমাল কস্তুরীকে ভালোবাসে। ও সেটা বোঝে কিন্তু তাও মাঝে মাঝে এমন কতগুলো বিষয় আছে য়েগুলোর সামনে শুধু একটা করে বড়ো প্রশ্ন চিহ্ন এসে দাঁড়ায়। চারপাশটা হয়ে যায় খাঁ খাঁ ধূ ধূ প্রান্তরের মতো। চোখে ধুলো বালি ভিড় করে আসে। মনে হয় কেবল গোলকধাঁধার মতো কস্তুরী মরীচিকার পেছনে ছুটছে। য়েখানে কিচ্ছুটি উত্তর পাওয়া যায় না। সবটাই ধাঁধা। নাহলে সেদিনের ঘটনাটাই বা কেন ঘটবে? তমাল এভাবে সবার সামনে ওকে নীচু করতে পারল? কেন করল ও এমন?