মাসিক ধর্ম অতি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক একটি বিষয়। সব মহিলাকেই এই পর্যায়টি অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে, মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও ঋতুকালীন সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সময় হয়েছে Hygiene বিষয়ে সচেতন হওয়ার।
পরিসংখ্যান অনুযাযী আমাদের দেশ ভারতবর্ষের সবকটি রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র ২টি রাজ্য, গুজরাত এবং মেঘালয়ে ৬৫ শতাংশ মহিলা পিরিয়ড প্রোডাক্টস ব্যবহার করেন। বাকি আর সব রাজ্যে এই সংখ্যা বেশ কম। আধুনিকতা এবং প্রচারের সবরকম বিকল্প থাকা সত্ত্বেও দেশের তিন চতুর্থের বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ মহিলাই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না এবং পিরিয়ড চলাকালীন সেই পুরোনো পদ্ধতি মেনে চলেন। এর প্রধান কারণ হল আজও অধিকাংশ নারী, এই বিষয়ে কথা বলা লজ্জাজনক বলে মনে করেন। এর ফলে সংক্রমণ হওয়ার ভয় যেমন থাকে তেমনি বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যান্সারেরও ভয় থাকে। সেজন্য প্রযোজন Hygiene সম্পর্কে সচেতনতা, যাতে পিরিয়ড চলাকালীন স্যানিটারি প্রোডাক্টস ব্যবহার করে মহিলারা নিজেদের হাইজিন-এর বিষয়ে সচেতন থাকতে পারেন।
পরিসংখ্যান কী বলছে?
রাষ্ট্রীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-র তথ্য অনুযাযী বিহারের মহিলাদের মধ্যে হাইজিন নিয়ে সচেতনতা সবথেকে কম। ওখানে মাত্র ৫৯ শতাংশ নারী, পিরিয়ডস-এর সময় সুরক্ষিত নিরাপদ উপায় অবলম্বন করেন। আজও সারা দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি ৫০ শতাংশ মহিলা, ঋতুস্রাবের সময় কাপড় ব্যবহার করে থাকেন। জানলে আশ্চর্য হবেন যে প্রতিবছর সারাবিশ্বে, পিরিয়ড সংক্রান্ত গুরুতর সংক্রমণের কারণে লক্ষাধিক মহিলার মৃত্যু হয়। এই পরিসংখ্যান সত্যিই দুশ্চিন্তার।
সার্ভাইকাল ক্যান্সার হওয়ার কারণ
পিরিয়ডস চলাকালীন যখন মহিলারা অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করে থাকেন তখন যোনিতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে সোজাসুজি সম্পর্ক রয়েছে সার্ভাইকাল ক্যান্সারের। ভারতে প্রতিবছর ইউটেরাস এবং সার্ভাইকাল ক্যান্সারে হাজারের বেশি মহিলার মৃত্যু হয়। গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা সব থেকে বেশি। গ্রামের মহিলারা পিরিয়ড চলাকালীন বিন্দুমাত্র Hygiene-এর তোয়াক্কা করেন না। এই ক্ষেত্রে প্রজনন অঙ্গের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা গ্রামের মহিলাদের মধ্যে বেশি থাকে এবং সার্ভিক্স-এর কোশগ্রন্থি সর্বাপেক্ষা প্রভাবিত হয়ে থাকে। সুতরাং পিরিয়ডস-এর সময় হাইজিনের খেয়াল রাখাটা কতটা আবশ্যক, এ বিষয়ে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সস্তা ন্যাপকিন ক্রয় করাও একটি বড়ো সমস্যা
এটা কারওরই অজানা নয় যে, মহিলারা সর্বাগ্রে নিজের পরিবারকে গুরুত্ব দেন। এটা করতে গিয়ে তারা নিজেদের খাওয়াদাওয়া এবং স্বাস্থ্যের সঠিক যত্নের প্রতি অবহেলা করেন। এর ফলে তাদের শরীরে পুষ্টির অভাব যেমন থেকে যায়, তেমনি অর্থের সাশ্রয় করার জন্য তারা সস্তার ন্যাপকিন বা বাড়িতে রাখা কাপড়ই ব্যবহার করেন। অথচ জেনে রাখা ভালো, সস্তা ন্যাপকিন কম মূল্যে পাওয়া গেলেও এতে ব্লিচিং-সহ অনেক ক্ষতিকারক কেমিক্যালস ব্যবহার করা হয় যার ফলে ওভেরিয়ান ক্যান্সার ছাড়াও এটি বন্ধ্যাত্বেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এও প্রমাণিত হয়েছে যে, অধিকাংশ মহিলা নন-অর্গানিক স্যানিটারি প্যাডস ব্যবহার করেন, যাতে একটি প্যাডে চারটি প্লাস্টিক ব্যাগের সমান প্ল্যাস্টিক থাকে। এতেই অনুমান করা যায় এগুলি মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকারক।
কী করে হাইজিন-এর খেয়াল রাখবেন?
প্যাডস-এর ব্যবহারে কৃপণতা করা অনুচিত
যদি আপনি প্রতি মাসে পিরিয়ডস চলাকালীন কাপড় ব্যবহার করেন, তাহলে এখনই সাবধান হন। কারণ এতে প্রচুর জীবাণু থাকার ফলে এটি আপনার প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং পিরিয়ডস-এর সময় সর্বদা ভালো অর্থাৎ অর্গানিক প্যাডস ব্যবহার করা উচিত। এটি ন্যাচারাল এবং এর শোষণ করার ক্ষমতা খুবই ভালো। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ার ফলে এটিতে ইউরিন ইনফেকশন, ক্যান্সার ইত্যাদি হওয়ার ভয় একদম কম হয়ে যায়। এগুলি যথেষ্ট কমফর্টেবল হওয়ার ফলে ভ্যাজাইনার স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো। এ বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখুন যে, আপনার পিরিয়ডস-এর ফ্লো যদি বেশি না-ও হয় তাহলেও প্রতি দুই-তিন ঘন্টা অন্তর প্যাডস বদলানো বাঞ্ছনীয়। এর ফলে কোনওরকম সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকবে না।
রোজ স্নান করুন
পিরিয়ডস চলাকালীন মহিলাদের শরীরে অনেকরকম পরিবর্তন হয়। কখনও পেট ব্যথার সমস্যা থাকে তো কখনও কোমর ব্যথার। এই পরিস্থিতিতে অনেক সময় মেয়েরা রোজ স্নান করাটা এড়িয়ে চলেন। এর জন্য যোনিতে সংক্রমণ হওয়ার ভয় বেড়ে যায়। সুতরাং নিজের হাইজিনের খেয়াল রাখতে রোজ স্নান করার অভ্যাস হওয়া দরকার। এতে সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।
ট্যাম্পুন্স ভালো বিকল্প
পিরিয়ডস চলাকালীন ফ্লো যদি খুব বেশি হয় অথবা বারবার প্যাড বদলানোর ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে চান, ট্যাম্পুন্স ব্যবহার করতে পারেন। এটি যথেষ্ট সুরক্ষিত এবং ভালো বিকল্প। শুধু দরকার, ধীরেসুস্থে এটিকে ভ্যাজাইনার ভিতর ইনসার্ট করা। এটি ইজি টু ইউজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ আরামদায়কও। শুধু খেয়াল রাখতে হবে ৮ ঘন্টার বেশি একই ট্যাম্পুন্স ব্যবহার করবেন না। নয়তো এটা থেকে সংক্রমণ হতে পারে।
যোনি পরিষ্কার রাখুন
সংক্রমণ এড়াতে যোনি পরিষ্কার জল দিয়ে সবসময় ধোবেন। পিরিয়ডস-এর সময় যোনি থেকে রক্তস্রাব বেরোনোর ফলে যদি সেটি পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে সংক্রমণ হওয়ার ভয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে শরীর থেকে দুর্গন্ধও বার হয়। এই সমস্যাগুলি এড়াতে যোনি পরিষ্কার রাখুন।
কটন প্যান্টি ব্যবহার করুন
এই সময়ের জন্য কটনের (সুতির) পরিষ্কার আলাদা প্যান্টি পরা উচিত। যদি একই অপরিষ্কার প্যান্টি আপনি রোজ ব্যবহার করেন তাহলে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কটন প্যান্টি ব্যবহার করলে সেটি আরামদায়ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, স্কিন ফ্রেন্ডলিও হবে।