তুমি কী ভাবো বলো তো? আমি এখনও সেই ছোটোটা আছি। তোমার সেই কালুডাক্তার, এখনও উনি বেঁচে আছেন? আমার খুব মনে আছে। কাচের শিশিতে সাদা সাদা মিষ্টি বড়ি। কী স্বাদ লাগত জানো। এখনও মুখে লেগে আছে। তোমার কাছে আছে? মা ওমা… দাও না দাও কয়েকটা দানা খাই। দিম্মামায়ের নরম তুলতুলে কোলে নাক ডুবিয়ে এক নাক গন্ধ টেনে মুখ তুলে বলে ও।
ধুর পাগলি শুধুমুধু কেউ খায় নাকি? তোর মতিগতি দেখে তো মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। গতরটা কেমন গোলাপি গোলাপি লাগছে। হুম বুঝেছি এইবারে বুঝেছি… রসে টান পড়েছে বুঝি?
যাহ। তুমি না…। খালি বাজে কথা বলো। তোমার কথাগুলো বড্ড স্ল্যাং…। ছি…! আমি তোমার কাছে কখনও এমনি এমনি আসতে পারি না, নাকি?
উঁহু তাই বলেছি? আসতে একবার কেন একশোবার পারিস। তবে বলা-কওয়া নেই। আমার কেমন যেন ঠেকছে…। তা তুই যাই বলিস। বল না মেয়ে নাগরের ওপর রাগ? গোঁসা করে কতদিন থাকবি শুনি।
যতদিন পারব…। আমার দায় তো সত্যি সত্যি তার নেই। মুখ নীচু করে কস্তুরী কথাগুলো বলে যায়। চাপা অভিমানে অল্প ওঠানামা করে ওর নাকের পাটা।
বটে! এত… কোমরের ভাঁজে জোরসে একটা আদুরে চিমটি কাটে দিম্মামা।
আহঃ। লাগছে।
তা বাপু। একটু আধটু ওরকম লাগে…। রাগ করতে নেই। হায় ভগবান আমার কী সে কপাল আছে? পুতি দেখে চোখ স্বার্থক করব। দিম্মামা মুচকি হেসে কস্তুরীর পেটে হাত বোলাতে থাকে।
ইশ, চুপ করো। আমি চললাম। তোমার সঙ্গে আর কথা বলব না। জড়োসড়ো হয়ে বিছানায় উঠে বসতেই কস্তুরীর হাত টেনে ধরে ওর দিম্মামা।
সব শুনছি, আগে একটা কথা বলতো? কাল সেই কলেজ থেকে ঝড়-জল মাথায় নিয়ে এখানে চলে এলি। বাড়িতে তোর মা-বাবাকে ফোন করে বলেছিস তো? নাহলে কথায় কথায় তো তোর মা আমাকে দোষারোপ করতে ছাড়ে না। নিজের পেটের মেয়ে হয়ে আঙুল তোলে আমাকেই।
বাপিকে ফোন করে বলে দিয়েছি, আমি তোমার আর বড়োমামার কাছে কিছুদিন থাকব। বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে করছে না। কলেজেও এখন চাপ নেই তেমন। দরকার পড়লে এখান থেকেই যাব। কত আর দূর। সরশুনা কদমতলা থেকে ঠাকুরপুকুর বাসস্ট্যান্ড। তোমাদের বাড়ির থেকে তো কাছে, বাস ধরব আর সোজা গিয়ে নামব কলেজের সামনে। সেসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো? তুমি মা হয়ে মেয়ে চোখ রাঙানি সবসময় কেন মেনে নাও? কিছু বলতে পারো না? জ্ঞান হয়ে থেকে দেখছি মায়ের গোটা লাইফটা হেল হয়ে গেছে বলে তোমাকেই দোষে। বাপির সঙ্গেও সারাক্ষণ খিটখিট লেগেই আছে। বিশ্বাস করো আমি আজও বুঝতে পারি না, মা কী চায়? কেন চায়?
মেনে কী নিই সাধে। তোর মা যে আমার আর তোর দাদুর আদরের পুতুল। দুদুটো ছেলে পরপর হওয়ার পর কত আশা করে হয়েছে তোর মা। সেই দিনটার কথা এখনও মনে পড়ে, যখন প্রথম হাসপাতাল থেকে তোর মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি, ওর দুই দাদা আনন্দে লাফাতে লাফাতে সদরে গিয়ে দাঁড়ায়। কী যে আনন্দ ওদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল বলে বোঝাতে পারব না।
বড়োছেলের চেয়ে ছোটোটা একটু চটপটে বলিয়েকইয়ে ছিল গেঁড়া বয়স থেকেই। জানিস তো ভালোরকম, তোর বল্টুমামা বরাবরই বেশি কথা বলে, রিকশার কাছে দৌড়ে এসে বলেছিল, মা আমার জন্য পুতুল এনেছ? পুতুল? আর সত্যি তো যেমন ফুটফুটে রং আর তেমন কাটা কাটা চোখ-মুখ। ওই থেকেই নাম রাখি পুতুল। খানিকটা তোর দাদুর মতো লাগে, তবে বেশিরভাগটাই ওর নিজের মতো।
আমাদের শ্বশুড়বাড়ির সব্বাই তো ওর নাম রেখেছিল গোলাপি। সবার খুব আদরের ছিল তো, তাই মেজাজটা একটু…। তুইও তো হুবহু ওর মতো…তাইতো তোকে দেখেই আমি আমার কাছে দিয়ে আসার কথা বলেছিলাম…। থাকতে পারিনি রে। তোর মায়ের ছোটোবেলাকার কথা মনে পড়ে গেছিল।
হ্যাঁ সবাই বলে আমাকে নাকি মায়ের মতো দেখতে। সবাই তো এও বলে, মেযো মা-মুখী হলে কখনও সুখী হয় না।
অ্যাই পকো। কী সব অলুক্ষণে কথাবার্তা শিখেছিস বড়ো হয়ে এসে থেকে খালি ট্যারা ট্যারা কথা…। এবার বেশ বুঝতে পারছি, ভালোরকম একটা কিছু বাঁধিয়ে এসেছে মেয়ে নাও আর দেরি কোরো না। বলতে শুরু করো।
***