সংখ্যাতত্ত্বের সত্যতা
সংখ্যাত্বত্তের বিচারে আজও প্রতিদিন ১০৬ জন মহিলা ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই নাবালিকা। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৯৯ শতাংশ ঘটনাই থানায় নথিবদ্ধ হয় না।
একদিকে যখন মহিলা সংরক্ষণ বিল দশকের পর দশক মুলতুবি রয়েছে, অন্যদিকে তখন ২০১৮ সালের আর্থিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ মহিলা হওয়া সত্ত্বেও, সংসদ ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয়গুলিতে, মহিলাদের সংখ্যা নগণ্য।
আজ যখন দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ পুরুষ শিক্ষিত, সেখানে মোটে ৬৫ শতাংশ মহিলা সবে সাক্ষর হয়েছে। এটা এতদিনে প্রমাণিত যে, সুযোগ পেলে মেয়েরাও দেশের যে-কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম। কিন্তু শিক্ষার সুযোগ পাওয়াটাই যেখানে বড়োসড়ো চ্যালেঞ্জ সেখানে এই আলোচনা অবান্তর। শিক্ষাকে অগ্রগণ্য না ভেবে সংসার ও সন্তানে মনোনিবেশ করাটাই মহিলাদের দায়িত্ব— এই মানসিকতাই মেয়েদের অনেকখানি পিছিয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় মহিলাদের রোজগারের নিরিখে দেশের মধ্যে মোট আয়ের মাত্র ২৫ শতাংশ। একটি রিপোর্ট-এ বলা হয়েছে, ভারতীয় মহিলাদের আয় যদি আরও ১০ শতাংশও বৃদ্ধি পায় তাহলে দেশের সমস্ত ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট অর্থাৎ জিডিপি-তে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধির লাভের আশা আছে।
দেশের ৮২ শতাংশ মহিলা বিবাহোত্তর জীবনে যৌন নির্যাতনের শিকার। দেশের ৬ শতাংশ বিবাহিতা মহিলা, জীবনে কখনও না কখনও যৌন হয়রানির কবলে পড়েছেন।
সমগ্র দেশে ২০২০ সালে মোট ৭৭-টি ধর্ষণের মামলা দায়ে হয়েছে এবং মোট ২৮,০৪৬টি মামলার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ মামলাই রাজস্থানের। এর পরই আসে উত্তর প্রদেশের নাম যেখানে ২০২০ সালে মহিলাদের উপর সংঘটিত অপরাধমূলক মামলার সংখ্যা ৩,৭১,৫০৩। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪,০৫,৩২৬ এবং ২০১৮ সালে ৩,৭৮,২৩৬।
১৮তম লোকসভায় মোট ১৪.১২ শতাংশ মহিলা (৮১ জন) এবং রাজ্যসভায় সংখ্যাটা ১১.৮৪ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় মহিলাদের যোগদান মাত্র ১৭ শতাংশ। এই সংখ্যা বিশ্বের নিরিখে, প্রায় অর্ধেক। প্রতিবেশী দেশ চিনের জিডিপি নজর করলেই দেখবেন, সেখানে মহিলাদের যোগদান ৪০ শতাংশেরও বেশি।
এছাড়া লেবার ফোর্স-এ মহিলাদের যোগদানের নিরিখে, ১৩১টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২০ নম্বরে। এই পরিস্থিতিতে যদি এদেশে মহিলাদের অংশীদারিত্ব পুরুষদের সমান সমান হয়ে যায় তাহলে জিডিপি-তে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়া সম্ভব।
সংসদে মহিলা সংরক্ষণ ৩৩ শতাংশ করা হোক, এই বিলটি এখনও পাস হয়নি। পঞ্চায়েত স্তরে অবশ্য মহিলা সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু সেখানেও পুরুষদেরই অগ্রগণ্য মনে করা হয়।
দেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা উঠলে দেখা যাবে, সেখানেও মহিলাদের সংখ্যা নিছকই নগণ্য। ১৭তম লোকসভায় মোট ১৪.৯২ শতাংশ মহিলা (৮১জন) রয়েছেন। রাজ্যসভায় সংখ্যাটা আরও কম, ১১.৮৪ শতাংশ। দেশব্যাপী বিধানসভাগুলিতে, কেবল ৮ শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি রয়েছেন।
বর্তমান সময়ে সুপ্রিম কোর্টে মোট ৩৪জন জজ-এর মধ্যে মাত্র ৪জন মহিলা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১০ শতাংশের সামান্য বেশি। হাইকোর্টে সংখ্যাটা আরও কম। ১০৯৮ জন জজ-এর মধ্যে মাত্র ৮৩ জন মহিলা রয়েছেন।
গত ৯ বছরে গৃহমন্ত্রকে অ্যাডভাইসরি জারি করা হয় যে, পুলিশ ফোর্সে মহিলাদের সংখ্যা অন্তত ৩৩ শতাংশ করা উচিত। কিন্তু ২০২০ সালে ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর হিসাব অনুসারে দেখা গেছে, পুলিশ বাহিনিতে মোট সংখ্যা ২০,৯১,৪৮৮ জন। এর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ২,১৫,৫০৪ জন। এটি মোট সংখ্যার মাত্র ১০.৩০ শতাংশ।