রাধিকা মদানের অ্যাক্টিং কেরিয়ার শুরু হয়েছিল টিভি সিরিয়াল দিয়ে। এরপর তিনি অভিনয় করেন ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’ ছবিতে। এই ছবিতে রাধিকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভাগ্যশ্রীর ছেলে অভিমন্যু দশানি। বহুদিন আটকে থাকার পর মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। তবে, এই ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি পাওয়ার আগে, টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ‘পিপল্স চয়েস মিডনাইট ম্যাডনেস’ শীর্ষক এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে ছবিটিকে। আর এরই মধ্যে রাধিকা আলোচনায় উঠে এসেছেন। অন্য একটি ছবিতে অভিনয় করে। বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত এই ছবিটির নাম ‘পটাখা’। দুই বোনের কাহিনিতে আধারিত এই ছবিতে, চম্পার চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন রাধিকা। আর এই সাফল্যের সুবাদে সম্প্রতি রাধিকা শোনালেন তাঁর মনের কথা।
আপনি কি ছোটো থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন?
আমি বড়ো হয়েছি দিল্লির নন-ফিল্মি আবহে। তবে আমার মা নীরু মদান বড়ো পেইন্টার। আমি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম না। কোনও আগ্রহ ছিল না অভিনয়ের। বরং আমার আগ্রহ ছিল নাচে তাই ক্লাসিকাল নাচ শিখতাম। ফোর্থ ইয়ার পর্যন্ত নাচ শিখেছি এবং নিজে নাচ শেখার পর বাচ্চাদের নাচ শেখাতামও।
তাহলে আপনি অভিনেত্রী হলেন কীভাবে?
যখন আমি বিএ অনার্স-এর ফার্স্ট ইয়ার-এ পড়ছিলাম, তখন একজন আমার ফেসবুক-এর ছবি দেখে সিরিয়াল-এ অ্যাক্টিং করার জন্য অডিশন-এ ডাকেন। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, কোনও প্রতারক হয়তো ডাকছে আমাকে। তাই আমি ওকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভাইদের সঙ্গে নিয়ে দেখা করি। কিন্তু গিয়ে দেখি, ব্যাপারটা জেনুইন। কী যে ইচ্ছে হল তখন, অডিশন দিয়ে ফেললাম। প্রথম অডিশন-এ সিলেক্ট হওয়ার পর, দ্বিতীয় অডিশন-এর জন্য মুম্বই যেতে হল। ওখানে অডিশন-এর পর আমি ঈশানির চরিত্রে অভিনয় শুরু করি ‘মেরি আশিকি তুমসে হি’ ধারাবাহিকে। তবে ভয় ছিল অভিনয় ঠিকমতো করতে পারব কিনা। কিন্তু নির্দেশকের সাহায্য নিয়ে ঠিকঠাক অভিনয় করতে পারি। ৪-৫ মাস পর বুঝতে পারি, দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছি আমি।
আপনি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী হওয়ার জন্য অভিনয়ের কিছু সুবিধে হয়েছে কি?
দেখুন, নাচেও সঠিক ভাব প্রকাশ করতে হয়, আবার অভিনয়েও তাই। সেই হিসাবে নাচের প্রশিক্ষণ খুব কাজে লেগেছে অভিনয় করতে গিয়ে। প্রথাগত অভিনয় শিক্ষা ছাড়াও তাই ভালো ভাবে অভিনয় করতে পেরেছি আমি। তাছাড়া, প্রতিটি সৃজনশীল কাজই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। হয়তো তাই নাচের ট্রেনিং নেওয়ার সময়ই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমার।
টিভি সিরিয়াল থেকে সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেলেন কীভাবে?
‘মেরি আশিকি তুমসে হি’ ধারাবাহিকের পর ‘ঝলক দিখলা যা’ টিভি শো করেছি আমি। এরপরই আমি সিনেমায় অভিনয়ের চেষ্টা করতে থাকি। তখন আমার বয়স ছিল ২১ বছর। চুটিয়ে অডিশন দিতে থাকি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য। এভাবেই একসময় সুযোগ পাই ‘মর্দ কো দৰ্প নেহি হোতা’ ছবিতে। আর এই প্রথম ছবির জন্য দুঃখ-সুখ সবই পেয়েছি। ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ, শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া, আবার শুটিং চালু হওয়া, টরেন্টোর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবির সাফল্য, পুরস্কার লাভ— সব মিলে দুঃখ-সুখের চরম অনুভূতি। আর এই ছবির শুটিং চলাকালীন-ই আমি আবার অডিশন দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ পাই ‘পটাখা’ ছবিতে।
বিশাল ভরদ্বাজের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
দারুণ! সত্যি বলতে কি, আমি কেন, যে কেউ ওঁর ছবিতে কাজ পেলে ধন্য হন। তাই যখন আমি ওঁর ‘পটাখা’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম, তখন বিশ্বাস-ই হচ্ছিল না। আমি বিশালজির খুব বড়ো ভক্ত। ওঁর ‘ওমকারা’, ‘মকবুল’ প্রভৃতি ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। শুধু তাই নয়, আমি ওঁর গানেরও ভক্ত। তাঁর ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তাই আগামী দিনে আবার যদি উনি আমাকে অভিনয় করতে ডাকেন, তাহলে চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যাব।
আপনি ফর্সা, সুন্দরী কিন্তু পটাখা ফিল্ম-এ এর ঠিক উলটো রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। এই বিষয়ে আপনি কী ব্যাখ্যা দেবেন?
অভিনয়ের জন্য সবকিছু করতে হয়। তাছাড়া, আমি যা তার উলটো রূপে অভিনয় করতেই তো মজা। এর জন্য মেক-আপ আর্টিস্টকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় এবং প্রতিভাসম্পন্ন হতে হয়। ঠিক তেমনই আমাকেও ওই চরিত্রটা কষ্ট করে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধূমপান (বিড়ি) করার পর দাঁতে যেমন দাগ পড়ে যায়, ঠিক সেভাবেই আমার দাঁতেও উপযুক্ত মেক-আপ করতে হয়েছে। অনেকবার চিত্রনাট্য পড়ে অভিনয়ের অনুশীলন করতে হয়েছে। রাজস্থানের রঙ্গি গ্রামে গিয়ে গোবর কুড়োনো, গোবর দিয়ে জলছড়া দেওয়া, কুঁয়ো থেকে জল তোলা, কাঠের উনুনে চাটু বসিয়ে রুটি বানানো প্রভৃতি শিখে এসে অভিনয় করেছি। কোনও দিন যে বাড়িতে রান্না করেনি, তাকে এসব করতে হয়েছে— কালো কুৎসিত না হয়ে সুন্দর থাকি কী করে বলুন তো? (হাসি)
অভিনয়ের সময় ব্যবহৃৎ গোবর আসল ছিল?
বিশাল স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, গোবর আসল রাখব নাকি নকল? যেহেতু রাজস্থানের গ্রামে গিয়ে আসল গোবর ঘেঁটেছি, তাই শুটিং-এর সময় আসল গোবর নিয়েই অভিনয় করেছি। শীতকালে শুটিং ছিল, তাই ঠান্ডার মধ্যে গোবরে হাত ডুবিয়ে অভিনয়ে বেশ আরাম পেয়েছি। কারণ, গোবরে হাত রাখলে উষ্ণতা পাওয়া যায়।
‘পটাখা’ ছবিতে দুই বোনের যেমন লড়াই দেখানো হয়েছে, তা এখনকার মেয়েরা রিলেট করতে পারবে ?
অবশ্যই। কারণ, ‘পটাখা’ বাস্তব কাহিনি আধারিত। যে-গ্রামে আমরা শুটিং করছিলাম, ওই গ্রামের মেয়েরা দুই বোনের লড়াই রিলেট করেছে। দুই বোনের মধ্যে ওদেরও ঠিক ওইভাবেই ঝগড়া হয়।
আগামী দিনে আর কেমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান আপনি?
‘জব উই মেট’ ছবিতে করিনা কপুর যে-চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, নির্দেশক ইমতিয়াজ আলি আমাকেও ওইরকম চরিত্রে কাস্ট করলে খুশি হব।
হাতে আর কী ছবি আছে?
হ্যাপি টিচার্স ডে এবং কাচ্চে লিব্বু কিছু দিনের মধ্যে দেখতে পাবেন আমার প্রিয় দর্শকরা। আরও কয়েকটা ছবির কথা চলছে, ফাইনাল হলে-ই জানাব।