মহিলাদের জন্য অধিক আর্থিক নিশ্চয়তা এবং কেরিয়ার গঠন করার জন্য নতুন নতুন উদ্যম, মহিলাদের আর্থিক ভাবে সাবলম্বী করে তোলার মাধ্যম হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে কোথায় কোথায় আর্থিক বিনিয়োগ করলে লাভ বেশি পাওয়া যাবে, সেটা বুঝে নেওয়াটা খুব জরুরি।

বিনিয়োগ করার অর্থ-ই হল, ভবিষ্যতের জন্য চিন্তাভাবনা করে বর্তমান সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া— যাতে ভবিষ্যতে মুশকিলে না পড়তে হয়।

প্রস্তুতি নিন এখনই

প্রথম থেকেই মহিলাদের বুঝে নিতে হবে, টাকা-পয়সার যোগান বন্ধ হয়ে গেলে বাস্তবে কী কী বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। উপার্জন এবং খরচের একটা হিসেব রেখে তার থেকেই অর্থ জমাবার একটা উপায় করতে হবে। পেশা এবং জীবনশৈলীতে ছেদ টানতে পারে, এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে নিজেকে এবং প্রিয়জনদের (বয়স্ক মা-বাবাও শামিল এর মধ্যে) সুরক্ষা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা করানো উচিত। পরিবারের জন্য সবথেকে ভালো এবং বিপন্মুক্ত Investment হল জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা ।

একক মহিলাদের নিজের উপর ভরসা রেখে ভবিষ্যতের বোঝা থেকে বাঁচার একটা উপায় খোঁজা উচিত। হঠাৎই কোনও খরচার সম্মুখীন হওয়া যেমন, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মেরামতি, কোথাও বেড়াতে যাওয়া অথবা কিছুদিনের জন্য ঋণ নিয়ে সেটা শোধ করার প্রয়োজনীয়তা বা গাড়ি কেনা, ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া অর্থাৎ রিটায়ারমেন্ট-এর পরের অবস্থা, ঋণ থাকলে সেটা শোধের ব্যবস্থা— এই সবকিছুর জন্যই Investment করা অত্যান্ত জরুরি। যে- যোজনাগুলিতে বিনিয়োগ করলে রিটার্ন-এর সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলির মধ্যে রয়েছে লিকুইড ফান্ড, মানিব্যাক বিমা পলিসি, রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান ইত্যাদি।

পুরুষদের মতো মহিলাদেরও বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখা উচিত, যেমন নিজের নামে জমি, বাড়ি কেনা, নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা। এর জন্য বর্তমানের প্রয়োজন কী এবং রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান কী কী আছে, সেগুলিও মহিলাদের মনোযোগ সহকারে দেখা কর্তব্য।

যদি আর্থিক ভাবে আপনি নিজেকে স্বনির্ভর মনে করেন এবং আপনার বয়স ৪০-এর কোটা পার হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে জেনে রাখুন আগামী ৪০ বছরকে সুরক্ষিত করতে আপনার হাতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় আছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেকেই নিজে কয়েকটা প্রশ্ন করুন, যেমন—

আমি কি জানি, আসলে আমার রোজগার কত এবং খরচা কত ?

যদি না জানেন তাহলে দৈনন্দিন সবকিছুর হিসেব রাখা শুরু করুন। হয়তো দেখবেন প্রতি মাসে এমন কিছু ব্র্যান্ডেড জিনিসের পিছনে ছুটেছেন যেটা অর্থহীন অথচ আপনার পকেটের জন্য একটা বড়ো ভারও বটে।

আমি কি অর্থ ‘সঞ্চয়’ করছি না ‘বিনিয়োগ’ করছি?

দুটো কিন্তু আলাদা আলাদা জিনিস। খরচ না করাটাই কিন্তু ‘সঞ্চয়’ করা। আপনার অর্থ ব্যাংকে পড়ে রয়েছে যার উপর মাত্র ৪ শতাংশ সুদ পাচ্ছেন আপনি। অথচ এর উপর সরকার ‘ট্যাক্স’-ও কাটছে আপনার থেকে। যেখানে মূল্যবৃদ্ধির হার শতকরা ৬ শতাংশ, সেখানে ব্যাংকে রাখা টাকার মূল্য দিনে দিনে কমছে সেটা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া ওই টাকাটা ভবিষ্যতের কতটা বোঝা হালকা করতে পারবে?

৫ বছর পরে আমার জীবনে কী ঘটবে সেটা কি এখনই দেখতে পাচ্ছি ?

২০ থেকে ২৫ বছর পর কীসের প্রয়োজনীয়তা বেশি, অর্থাৎ গুরুত্ব অনুসারে কোন কাজটা আগে বাছা উচিত এবং নিজের জীবন কীভাবে কাটাব, সেই কল্পনাও আমরা বেশিরভাগই করে উঠতে পারি না। সুতরাং ৪০ বছর হওয়ার প্রশ্ন তো ছেড়েই দিন। আমরা সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে বিনিয়োগের প্রয়োজন উপলব্ধি করতে পারি না। বিশেষ করে মেয়েরা সামাজিক সম্পর্ক এবং পরনির্ভরতার বশবর্তী হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়, অর্থের প্রয়োজনীয়তা বোঝার চেষ্টা খুব একটা করে না। কিন্তু আপনি একক। সুতরাং সময় থাকতেই রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানগুলো নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা খুব দরকার।

আমি কি নিজেকে এবং আমার উপর নির্ভরশীলদের কোনওরকম আকস্মিক বিপদ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি?

অনেকেই একলা এবং ৪০ বছরের বেশি হয়ে গেলেই ভাবতে শুরু করে যে আমার দায়দায়িত্ব নেই। অথচ তার বুড়ো মা-বাবা থাকতে পারে বা আত্মীয়পরিজন, যারা তার ব্যাপারে রীতিমতো চিন্তা করে। ভালো বন্ধু কেউ থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি হল, নিজের প্রয়োজনেই নিজের ভালো ভাবে দেখাশোনা করা উচিত।

মহিলাদের উচিত বিনিয়োগ যোজনাগুলি নিয়ে সচেতন এবং সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া। নিজের জীবনবিমা থেকে শুরু করে মা- বাবার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সবরকম প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকাটা খুব দরকার। বর্তমানের কথা খেয়াল রাখার সঙ্গে সঙ্গে একক মহিলাদের, রিটায়ারমেন্টের জন্য সুরক্ষিত পেনশন যোজনায় Invest করা উচিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আসল কথা হল এখন সময় এসেছে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী মহিলাদের নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...