সুখী ও সুন্দর দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রীর ভরণপোষণ দেওয়া ও তাকে সম্মানের আসন দেওয়া। স্ত্রীর মর্যাদা নির্ধারণ করেছে সমাজ, তাই এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।আমরা আজ বলব এমন একটা ঘটনার কথা যেটা একেবারে নজিরবিহীন। দাম্পত্য কলহে কী কী অভিযোগ তুললে স্ত্রী-র চরিত্র কলুষিত করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে আহমেদাবাদের একটি ঘটনা। ২০০৮ সালে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া শুরু হওয়ায়, ২০১০ সালে ওই মহিলা তার বাপের বাড়ি চলে যান এবং কর্মসূত্রে তার স্বামীর ঠিকানা হয় দুবাই।
এরপর যখন ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এবং খোরপোশ চেয়ে মামলা শুরু করেন স্ত্রী, তখন স্বামী এমন কিছু চার্জ আনেন স্ত্রী-র বিরুদ্ধে, যার দ্বারা তিনি প্রমাণ করতে চান যে, তার স্ত্রী নিষ্ঠুর, বিবেকহীন এবং চরিত্রহীনা। প্রমাণস্বরূপ এক ভাজপা বিধায়কের সঙ্গে স্ত্রী-র একটি ফেসবুক ফোটো আদালতে জমা দেন স্বামী।
কিন্তু আদালত এক্ষেত্রে সদর্থক ভমিকা নিয়েছিল। ওই ফেসবুক ফোটো-কে উপযুক্ত প্রমাণ হিসাবে গ্রাহ্য না করে, তা ভিত্তিহীন বলে দিয়েছিল এবং মাসিক ১০ হাজার টাকা খোরপোশ বাবদ দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু এই মামলা এটা-ই প্রমাণ করেছিল যে, কীভাবে একটা ফেসবুক ফোটো দেখিয়ে স্ত্রী-কে চরিত্রহীনা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল স্বামী।
স্ত্রী-র সফলতা যে ফিল্ড-এই হোক-না কেন, অনেক স্বামীর তাতে গাত্রদাহ হয়, ইগো প্রবলেম হয়। স্ত্রী যদি উপার্জনও করেন, তাও তাকে স্বামীর হাতে মার খেতে হয় অনেকসময়।
অনেকে স্বামী আছেন যারা এমনও ভাবেন যে, বাড়ি ছেড়ে আর যাবে কোথায়, দাসীর মতো-ই থাকতে হবে তার কাছে। আর যারা স্ত্রী-কে চাকরি কিংবা ব্যাবসা করার অনুমতিও দেন, তারা স্ত্রী-র উপার্জিত টাকা আত্মসাৎ করেন।
অবশ্য এটা ঠিক যে, ধনী পরিবারের অনেক বউরা হয়তো প্রচুর টাকা খরচ করেন নানা ভাবে। তারা হয়তো দামি শাড়ি, গয়না কেনেন, বিউটি পার্লারে যান কিংবা কিটি পার্টিতে টাকা খরচ করেন। এসব আসলে স্ত্রী-র মন ভালো রাখার জন্য স্বামীরা করতে দেন কিন্তু স্ত্রী-কে তার আনুগত্যে রাখার এও এক কৌশল। এরপর স্ত্রী হয়ে যান স্বামীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। যেভাবে ইচ্ছে তিনি সেই সম্পত্তি ব্যবহার করার অধিকার কায়েম করেন।
কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার, অকারণে স্ত্রী চরিত্র কলুষিত করার কোনও অধিকার স্বামীর নেই। এটাও মনে রাখতে হবে যে, অন্যায় করার পর আদালতের নির্দেশে স্ত্রী-কে ১০ হাজার টাকা খোরপোশ দিলেই স্বামী মহান ব্যক্তি হয়ে যান না।