কৃষি ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবিলার লক্ষ্যে, ভারতে সঠিক কৃষি প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সহায়তা, কৃষক সম্প্রদায়ের জন্য টেকসই ও স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, সাপ্লাই চেইন উন্নতির মাধ্যমে, ক্ষুদ্র পরিসরের মহিলা উৎপাদনকারীদের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তৈরি করা হয়েছে ‘শি ফিডস দ্য ওয়ার্ল্ড’ কর্মসূচি।
‘শি ফিডস দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রোগ্রামটি টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার তিনটি মাত্রা জুড়ে, মহিলা কৃষক এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধে দেবে। অর্থনৈতিক স্তরে এটি ছোটো পরিসরের কৃষকদের চাষাবাদের পদ্ধতি উন্নত করতে, ফলন বাড়াতে এবং আরও টেকসই আয়ের জন্য জীবিকার বিকল্পগুলিকে বৈচিত্র্যময় করার ক্ষমতা তৈরি করবে। সামাজিকভাবে, এই প্রকল্পটি অসুরক্ষিত কৃষকদের জন্য জ্ঞান, সম্পদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারগুলিতে আরও ন্যায়সঙ্গত অ্যাকসেস-এর প্রচার করে তাদের সুরক্ষাকে সমৃদ্ধ করবে। ভারতে, এই কর্মসূচি পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলায় বাস্তবায়িত করা হবে বলে জানা গেছে।
পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকল্পটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব কমাতে মাটি, জল, জীববৈচিত্র্য এবং কার্বন ফুটপ্রিন্টের সমস্যাগুলিকে মোকাবিলা করবে। ভারতে এই কর্মসূচির সম্প্রসারণের মাধ্যমে, পেপসিকো, পেপসিকো ফাউন্ডেশন এবং কেয়ার-এর লক্ষ্য ৪৮,০০০-এরও বেশি মহিলা, পুরুষ এবং শিশুদের কাছে পৌঁছানো এবং পশ্চিমবঙ্গের ১,৫০০০,০০০ জন মানুষকে পরোক্ষভাবে উপকৃত করা। ‘শি ফিডস দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রোগ্রাম মহিলা কৃষকদের পুষ্টি ও জলের অ্যাকসেস সহ একটি সুরক্ষিত এবং স্থিতিস্থাপক জীবিকা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে নিম্নলিখিত উপায়ে:
১. সক্ষমতাকে উন্নত করা: আর্থিক ও ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং টেকসই কৃষি অনুশীলন সম্পর্কে বোঝার উন্নতির জন্য প্রশিক্ষণ এবং সংস্থান।
২. কমিউনিটিতে পুষ্টির উন্নতি করা: মহিলা অংশগ্রহণকারীদের পুষ্টি এবং ওয়াশ-এর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
৩. সম্পদের উপর মহিলাদের অ্যাকসেস ও নিয়ন্ত্রণের উন্নতি ঘটানো: ক্ষমতা এবং লিঙ্গ বিশ্লেষণ ও অংশগ্রহণকারীদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করা।
৪. মহিলাদের ছোটো-পরিসরের উৎপাদকদের জন্য বহুগুণ প্রভাব: অংশগ্রহণকারীদের প্রয়াসকে হাইলাইট করা এবং স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ প্যাকেজ ও অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট।
এছাড়াও, পেপসিকো ফাউন্ডেশন পশ্চিমবঙ্গে পেপসিকো-ইউএসএআইডি মহিলা কৃষক অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতার মাধ্যমে মহিলা কৃষকদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে কৃষকরা কৃষিক্ষেত্রে তাদের অসাধারণ কাজের জন্য এবং তাদের স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে প্রচলিত প্রথা ভাঙার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিল। পুরষ্কারের প্রথম সংস্করণ হয়েছিল ২০২২ সালে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কৃষকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা গড়ে তোলার বিষয়ে কাজ করছে। শিল্প এবং কমিউনিটির এই ধরনের যৌথ প্রয়াস সত্যিকারের পরিবর্তনকে চালিত করে এবং এটি বিদ্যমান সংস্থান এবং সুযোগগুলির চারপাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরির একটি কার্যকরী উপায়।’ পেপসিকো ফাউন্ডেশনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এবং পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রবার্তো আজেভেদো জানিয়েছেন, ‘শি ফিডস দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রকল্প হল আমাদের পেপ+ প্রতিশ্রুতির একটি মূল স্তম্ভ, যার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি সরবরাহ চেইন এবং কমিউনিটিতে আমাদের পুনরুৎপাদনশীল কৃষিচর্চাকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আমাদের ২৫০,০০০-এরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকাকে উন্নত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা কেয়ার-এর সঙ্গে আমাদের পার্টনারশিপ চালিয়ে যেতে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিশ্বব্যাপী প্রচার শুরু করতে পেরে গর্বিত। এই প্রোগ্রামটি আরও সম্পদ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলা কৃষকদের ক্ষমতায়ন করবে।’
পেপসিকো ইন্ডিয়া`র প্রেসিডেন্ট আহমেদ এলশেখ প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, ‘পেপসিকো ইন্ডিয়াতে, আমরা কৃষকদের এই কোম্পানির সাপ্লাই চেইনে নিয়ে আসা, তাদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের উদ্যোগী হিসেবে গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করে থাকি। আমরা পশ্চিমবঙ্গের ওই সমস্ত মহিলা কৃষকদের সঙ্গে কাজ করে চলেছি ও তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, যারা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও জেন্ডার স্টিরিওটাইপগুলিকে ভাঙছে। আমরা কেয়ার-এর সঙ্গে ভারতে ‘শি ফিডস দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রোগ্রাম চালু করতে পেরে আনন্দিত এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, এই ধরনের উদ্যোগ মহিলা কৃষকদের স্থিতিস্থাপক জীবিকা গড়ে তুলতে আরও বেশি করে সাহায্য করবে।’
কেয়ার ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শ্রী পুনীত বালি জানিয়েছেন, ‘ভারতে ‘শি ফিডস দ্য ওয়ার্ল্ড’ চালু করা কেয়ার, পেপসিকো এবং পেপসিকো ফাউন্ডেশনের টেকসই কৃষির জন্য সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে। এই প্রোগ্রামটির লক্ষ্য হল প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং দক্ষতাকে সনাক্ত করা এবং ভারতে ১.৫ মিলিয়ন মহিলা কৃষকদের ক্ষমতায়ন, কমিউনিটির পুষ্টি এবং উৎপাদনশীল সংস্থানগুলিতে অ্যাকসেস ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা।
আইএলআরজি`র ভারতের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুব্রত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘ইউএসএআইডি-তে, আমরা বিশ্বাস করি যে, এই প্রোগ্রামগুলি মহিলাদের জন্য আয় বাড়াতে সাহায্য করে এবং সেটা সমগ্র কমিউনিটি, অর্থনীতি এবং দেশে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে৷ মহিলাদের ভূমি`র ওপর অধিকার এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি চালু করার পর থেকে, ইউএসএআইডি পেপসিকো ইন্ডিয়া, পেপসিকো ফাউন্ডেশন এবং আমাদের পার্টনারদের সঙ্গে মিলিতভাবে ১,৫০০ জনেরও বেশি মহিলা কৃষককে সফলভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। আজ আমরা মহিলা কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে তাদের অসাধারণ কাজের জন্য স্বীকৃতি দিতে পেরে সম্মানিত এবং আমরা এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও ৩০০,০০০০-এরও বেশি মহিলাকে এই বিষয়ে যুক্ত করার অপেক্ষায় রয়েছি।’