দেশের অন্তত ৩টি বড়ো শহর প্রতিবছর বর্ষাকালে সংবাদ শিরোনামে চলে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত অবশ্য বেঙ্গালুরুর নাম। তবে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনায় থেকেছে প্লাবিত শহর চেন্নাই এবং মুম্বই। মানুষ অবাক চোখে টিভির পর্দায় দেখেছেন, অন্যতম ফ্যাশন আইকনদের শহর মুম্বইয়ে কীভাবে সাধারণ পোশাক পরে তথাকথিত ফ্যাশনেবল ইয়ং জেনারেশন জল ঠেলতে ঠেলতে কর্মস্থলে যাচ্ছেন কিংবা বাজার দোকান সারছেন।
এমনই পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, মানুষের বেহাল দশাই তখন চ্যানেলের টিআরপি বাড়িয়েছে। থই থই করেছে পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায়। কে বলতে পারে আগামী দিনে হয়তো এরকম সুযোগ হাতছাড়া না করে, বিজ্ঞাপনদাতারা এইসব সময়ে তাদের বিজ্ঞাপনও বাড়িয়ে দেবেন টিআরপি-কে কাজে লাগিয়ে।
তবে একটা কথা বলতেই হবে, এইসব শহরে জমির দাম যতই আকাশ ছোঁয়া হোক না কেন, মানুষের জীবনশৈলী যতই ব্যয়বহুল হোক না কেন— এই শহরের জমি কিন্তু মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিল্ডাররা একদিকে স্কাইস্ক্র্যাপার বানাচ্ছেন সভ্যতার ঔদ্ধত্যে, অন্যদিকে ভেসে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল রাস্তাঘাট এবং পয়ঃপ্রণালীর এই বেহাল দশা হওয়ার কথা ছিল না। আম আদমিকে ভালো রাখার দায় যেখানে পৌরসভার, সেখানে তাদের কাজকর্মের ক্ষেত্রে, অপদার্থতা আর লুকোনো যাচ্ছে না। যে-স্বচ্ছল পরিবারগুলি বসবাস করে উচ্চবিত্ত টাওয়ারে, তদেরও এই একই নর্দমার জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে, যে-জল ভাসিয়ে দেয় গরিবের বস্তি।
আসলে মানুষ আজকাল প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। তাদের স্মৃতিশক্তিও বড়োই দুর্বল। তারা ভুলে যায় প্রতিবার ভোটের মাধ্যমে তারাই একটি করে অযোগ্য সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে, যার মাশুল তাদের এভাবে গুনতে হয়। আসলে আমরা শ্রেণিবিভাজনটাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এখন যে যার চারপাশে একটা বৃত্ত তৈরি করে নিয়েছি। সেই কোটরে প্রতিটা পরিবারই একক। সঙ্গবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করার আর মুখ নেই আমাদের। নেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিরদাঁড়া।
নিজের বিত্তবৈভবের গরিমায় আত্মতুষ্ট বেঙ্গালুরু বা মুম্বইয়ের উচ্চবিত্ত শ্রেণি, সকলেই যে যার আত্মমর্যাদা নিয়ে ব্যস্ত। তারা হয়তো প্রভাব বিস্তার করতেই পারেন চাইলে কিন্তু এই সমাজসেবার মানসিকতা তাদের কোথায়, যা নিয়ে প্রতিবাদ করলে আখেরে উপকার সবার হবে?