হিয়ার বয়স ৯। ক্রিকেট খেলা দেখতে ও ভালোবাসে ছোটো থেকেই। বাড়ির সামনে রাস্তায় খেলা হলেই ‘অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলবে বলে রোজই বায়না করে। শ্রাবণী দোনামনা করলেও মেয়েকে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে পাঠায়। সেদিন কাঁদতে কাঁদতে মেয়ে ঘরে ফেরায়, শ্রাবণী কারণ জিজ্ঞেস করাতে একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে হিয়ার গলায়। ব্যাট করতে গেলেই খালি আউট হয়ে যায় তাই নাকি কেউই ওকে দলে নিতে চায় না। শ্রাবণী মেয়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে ওকে কোলে টেনে নিল। মেয়েকে বোঝাল, চেষ্টা করতে থাকলে ওর বন্ধুদের থেকেও অনেক বেশি ভালো ব্যাটিং করতে পারবে ও। মেয়েকে আশ্বাস দিল, ‘দেখবি একদিন ওরাই তোকে দলে নেওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি করবে।’ শ্রাবণী মেয়েকে মনে করাল আগে সুইমিং শিখতে গিয়ে জলে নামলেও হিয়া ভয়ে সাঁতার কাটতে চাইত না। কিন্তু মা বাবার সাহস পেয়ে ভয়কে জয় করে নিজের চেষ্টায় ভালো সাঁতারু এখন হিয়া। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে হিয়ার Confidence অটুট থাকার জন্য এবং এই আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার পেছনে শ্রাবণী ও তার স্বামীর অবদানও কিছু কম নয়।
মা-বাবার উৎসাহ এবং সাকারাত্মক জীবনবোধ বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বাচ্চার নিজের উপর এবং অন্যান্য সবকিছুর ওপরে একটা ধারণা তৈরি হয়, যেটা ওই ছোটো বয়স থেকেই বাচ্চার Confidence বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। বাচ্চা কী ভাবছে, আশেপাশে কী দেখছে, কী শুনছে, পারিপার্শ্বিক ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে –এই সব কিছুই বাচ্চার সম্পূর্ণ চরিত্র গঠনে সাহায্য করে এবং তার চরিত্রের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ পায়। যদি কোনও বাচ্চা দুশ্চিন্তা, ভয়, অসন্তোষ অথবা অবসাদের শিকার হয়ে পড়ে তাহলে মানসিক ভাবে সে খিটখিটে স্বভাবের হয়ে উঠবে এবং আত্মবিশ্বাসও হারাবে। বাচ্চার ভীত, চিন্তিত, অবসাদগ্রস্ত হওয়ার অনেক কারণ হতে পারে। স্কুলে অথবা টিউশনে ঠিকমতো পড়াশোনা বুঝতে অসফল হলে অথবা কঠিন কোনও কাজ করার সময় আপত্তিজনক কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, বাচ্চারা অবসাদের শিকার হতে পারে। নিজে ভালো কিছু করতে না পারলে, যদি সে নিজের বয়সি অন্য বাচ্চাদের সেটা সফল ভাবে করতে দেখে, তাহলেও অনেক সময় তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা যায়।
বাচ্চার দুর্বল আত্মবিশ্বাস তাদের নিজের মনের মধ্যে গুটিয়ে থাকা মনোভাব তৈরি করে এবং তাদের, চুপচাপ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মা-বাবাকে বাচ্চার এই মানসিক পরিস্থিতির সংকেতগুলো বুঝতে হবে এবং সেইমতো পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এভাবে বাচ্চারও Confidence বাড়বে এবং সেইমতো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সেটা সমাধানের সাহস সে খুঁজে পাবে। অভিভাবকদের চেষ্টা করতে হবে বাড়ির পরিবেশ বন্ধুত্বপূর্ণ রাখতে যাতে বাচ্চা নিশ্চিন্ত বোধ মনে করে। এছাড়া বকুনির ভয় ছাড়াই বাচ্চা যেন নিজের মনের কথা বড়োদের কাছে খুলে বলতে পারে।