শীতের সফরে একটা আলাদা মজা আছে। মোলায়েম রোদ বেশ গায়ে মাখা যায়। তেমনই একটা সুযোগ এল হঠাৎই। গন্তব্য— খয়রাবেড়া ইকো-অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ট্রেনে পুরুলিয়া কিংবা বরাভূম স্টেশনে নেমেও গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।
বহুবার পুরুলিয়া সফর করলেও, এবারের সফরে ছিল একটা আলাদা উত্তেজনা। কারণ ছিল দুটি। এক- জায়গাটি নতুন আবিষ্কার। দুই- সফরসঙ্গী অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অরিজিৎ দত্ত, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এবং রাজের নতুন ছবি ‘নূরজাহান’-এর নায়ক আদৃত রায়।
সকাল সাতটা। দেশপ্রিয় পার্কের প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের সামনে থেকে ছাড়ল আমাদের গাড়ি। শক্তিগড়ে নেমে গরম কচুরি, ছোলার ডাল আর ল্যাংচা খেয়ে আবার আমাদের গাড়ি ছুটল আসানসোল হয়ে। মসৃণ রাস্তার দু’দিকে ফসলের খেত, শালগাছ আর ইউক্যালিপটাসের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম পুরুলিয়ার খয়রাবেরা ইকো-অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প-এ। সময় লাগল সাতঘন্টার একটু বেশি।
গাড়ি থেকে নামতেই কুল-টাওয়েল আর এক গেলাস শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করলেন ক্যাম্প-এর কর্মীরা। হঠাৎ অনুভব করলাম এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। শুধু কানে এল পাখির কলকাকলি। মন আনন্দে ভরে গেল পাহাড়, জঙ্গল আর তাদের কোলে থাকা বিশালায়তনের শান্ত জলাধার (ড্যাম) দেখে। চোখ টানল সবুজ ঘাসের কার্পেটের উপর নানারঙের ছাতার নীচে পাতা চেয়ারগুলি। বসলাম আরাম করে। ভলিবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তিনটি কটেজ আর সাতটি স্থায়ী তাঁবুতে সমৃদ্ধ এই অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প। ক্যাম্প-বেস্টিত পাহাড়সারির নাম চেংটাবুরু। আর তারই কোলে অবস্থিত অবসরযাপনের এই অপরূপ লোকেশন, যার পরিধি কয়েক একর। সীমানা বরাবর রয়েছে প্রচুর শাকসবজি এবং ফলের গাছ। ওই টাটকা সবজি, ভাত আর মুরগির ঝোল খেয়ে তৃপ্ত হলাম মধ্যাহ্নে। বেরোলাম লাগোয়া জঙ্গল ভ্রমণে। চোখে পড়ল খরগোশ, বনমোরগ, ময়ূর, বেশ কিছু আঙুরের গাছ আর ধবধবে সাদা পাতাবাহার গাছ পয়েনসেটিয়া।