থাকার জন্য তাঁবুতে ঢুকে চমকে গেলাম! স্টার হোটেলের থেকে কোনও অংশে কম নয়। ফ্রিজ, এসি, গিজার, শাওয়ার রয়েছে সবই। দুই শয্যার এই বিলাসী তাঁবুতে থাকার জন্য তিন-চার হাজার টাকা (প্রতিদিন) দিয়েও দুঃখ হবে না ।
সন্ধে নামতেই কানে এল বাঁশির সুর। সে সুর বড়ো মর্মস্পর্শী। কনকনে শীতের রাতে বনফায়ার আর বারবিকিউ সহযোগে উপভোগ করলাম ঝুমুর আর ছৌ নাচ।
পরের দিন প্রাতরাশ সেরে লেকের বুকে কিছুক্ষণ ভেসে বেড়ালাম ছোট্ট জলযানে (কায়াকিং)। রোমাঞ্চিত হলাম জলপথে পাহাড় আর গভীর জঙ্গল দেখে। তারপর গাড়ি নিয়ে চললাম পুরুলিয়ার চেনা-অচেনা প্রকৃতি দর্শনে।
ক্যাম্প থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মারবেল লেকটি (পাথর খাদান) দেখার মতো। খাদের মতো জলাশয়টি পাথরময়। সাদা মারবেলের মতো পাথরের উপর সূর্যের আলো পড়ে ঝকমক করছে। খাদানে নেমে জলের কাছাকাছি গিয়ে একটু জোরে কথা বললেই কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়।
পাথর খাদান থেকে মুরগুমার জঙ্গলে (ক্যাম্প থেকে ৪৫ কিমি) পিকনিক করতে যাওয়ার পথে ঘুরেফিরে দেখে নিলাম পাহাড়ি জলে পুষ্ট তুরগা ফলস এবং অনতিদূরের চরিদা গ্রামে ছৌ-এর মুখোশ তৈরির কৌশল।
ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়ক অসীম চৌধুরির উদ্যোগে দুপুরে বেশ জমে গেল পিকনিক। মেনুতে ছিল। খিচুড়ি, বেগুনভাজা, পাঁঠার মাংস, পাপড় আর পায়েস। বিকেলে কংসাবতীর হাঁটু জলে পা ডুবিয়ে খানিক আরাম নেওয়ার পর দেউলঘাটার শিবমন্দির দর্শন করলাম। ক্যাম্প-এ ফেরার পথে উপভোগ করলাম আদিবাসী হাটের কেনাবেচার দৃশ্য।
দ্বিতীয় রাতে ক্যাম্প-এর ময়দান মাতিয়ে দিল আদিবাসী যুবক-যুবতিরা। ধামসা-মাদল সহযোগে পরিবেশিত হল আদিবাসী নৃত্য। নৈশভোজের পর, আদৃত তার ডেবিউ ফিল্ম ‘নূরজাহান'-এর গান শুনিয়ে মুগ্ধ করল। আর মনের সুখে ভাঙা চাঁদের ছবি নিজের ক্যামেরায় বন্দি করলেন অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
তৃতীয় দিনের সকালে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে ওঠার আগে আলাপ হল প্রথম রাতে যার বাঁশির সুর হৃদয় স্পর্শ করেছিল, সেই বাঁশিবাদক রামু মাছুয়ার সঙ্গে। আবার ওর বাঁশি শুনতে আসার অনুরোধ জানাল রামু।