আমরা আজকাল অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি বাচ্চাদের একাকিত্বের বিষয়ে৷ কিন্তু সেই সমস্যাও কিছুটা সমাধান করতে পারে আমাদের ডাইনিং স্পেস৷ শুনে অবাক হচ্ছেন? গবেষণা বলছে, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করে একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করার অভ্যাস৷ আর এর জন্য আপনার ডাইনিং টেবিলের ভূমিকা অপরিসীম৷
দিনে ২-৩ বার এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠত পারিবারিক সুসম্পর্ক।অনেকেই ব্যস্ততার অজুহাত দিতে পারেন৷ অনেকে ফোনে মুখ গুঁজে খাবার থালা নিয়ে নিজের বেডরুমে চলে যান, কেউ টিভির পর্দায় চোখ আটকে রেখে খাবার খান। এর ফলে অতীতের খাবার টেবিলের সেই খোশগল্প এখন লোপ পেয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই শীথিল হচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্কও। কিন্তু একটু সময় বের করে নিজের পরিবারের সঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করে দেখুন—এই সময়টা কিন্তু দুর্দান্ত স্ট্রেস রিলিভিং হতে পারে৷
মনোবিদদের মতে প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে স্ক্রিন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে এবং আহারের সময় পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার মধ্য দিয়ে পরিবারের প্রতিটি সদস্য, বিশেষত বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ সম্ভব।
এছাড়াও এর অনেক গুলি ভালো দিক আছে৷ একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, পরিবারের প্রতিটি সদস্য বিশেষত কিশোর-কিশোরীরা এক সঙ্গে বসে খাবার খেলে তাদের সামগ্রিক ডায়েট ভালো হয়। যে সমস্ত কিশোর-কিশোরীরা পরিবারের সঙ্গে বসে খাবার খায়, তাঁরা ফাস্ট ফুড ও শর্করা-যুক্ত খাবারের পরিবর্তে অধিক পরিমাণে ফল এবং সবজি খেয়ে থাকে।
সম্প্রতি উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ জার্নাল অফ পিডিয়াট্রিকসে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, পরিবারের সঙ্গে বসে আহার করা এবং স্থূলতা কম করার মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ১০ বছর পর এর সুফল লাভ করা যাবে। এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, প্রতিটি পরিবারের প্রতি সপ্তাহে এক বা দুবার অন্তত এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়া উচিত। এর ফলে পরবর্তী জীবনে তাদের সন্তানরা ওজন বৃদ্ধির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবে।কারণ এতে নিয়ন্ত্রতিত পরিমাণে খাবার খাওয়া হয়৷ বাড়ির খাবার জাধ্ক ভুডের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর৷ পরিবারের গৃহিণী পরিবেশনের সময় মনিটর করতে পারেন কে কতটা খাচ্ছে৷ পুষ্টির দিকটি এতে তার নজরে থাকে৷
এবার আসা যাক মনের বিষয়টিতে৷Bonding while dinning, অর্খাৎ খাবার খাওয়ার সময় কথাবার্তার মাধ্যমে সন্তান অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে যে নিরাপত্তা অনুভব করতে পারে, তা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়৷কোনও সমস্যা মেটাতে এই সময় তারা বড়োদের পরামর্শ নিতে পারে৷ বড়োরাও হালকা মেজাজে খেতে খেতে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন৷ এই পারস্পরিক ভাবনার আদানপ্রদান, অনেক জটিল সমস্যারও সমাধান করে দেয়৷
তাই বাচ্চাদের নিজের খাবার টেবিলে তার বসার জায়গাটি নিজেকে বেছে নিতে দিন। পাশাপাশি খাবারের প্রস্তুতি সংক্রান্ত কিছু কাজ যেমন খাবার পরিবেশন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ তাকেও করতে দিন।এতে সে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে নিজেকে ভাবতে শিখবে৷