ক্যান্সার নাকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ভারতে। ক্যান্সারের কারণে প্রতিদিন অনেক লোকও নাকি মারা যাচ্ছেন। আইসিএমআর আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ১২% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। যার অর্থ হল, এই বিষয়ে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, আগামী দিনে আমাদের দেশের মানুষের উদ্বেগ আরও বাড়বে।
ভারতে কেন ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে?
পুরুষদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৫-টি সাধারণ ক্যান্সার হল-ফুসফুস, মুখ, প্রোস্টেট, জিহ্বা, এবং পাকস্থলি। এগুলি দেখা যায় ৩৬% ক্ষেত্রে। মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় স্তন, জরায়ু, ডিম্বাশয়, কর্পাস জরায়ু এবং ফুসফুস-এর ক্যান্সার। এগুলি দেখা যায় ৫৩% ক্ষেত্রে।
ভারতে ক্যান্সারের প্রধান কারণ হল তামাক, সুপারি, পান, ভাইরাল সংক্রমণ, বায়ু দূষণ, ধুলোবালি এবং অ্যালকোহল সেবন। এর অর্থ হল যে, ভারতীয়দের অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারাই মূলত ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান প্রকোপ-এর জন্য দায়ী। প্রকৃতপক্ষে, ভারতে সমস্ত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৩০%-এর জন্য দায়ী তামাক (সমস্ত ধরণের অর্থাৎ চিবানো, ধূমপান এবং প্যাসিভ ধূমপান)।
ভারতে ক্যান্সারের জন্য মৃত্যুহার কেন বাড়ছে?
ক্যান্সার, যেমনটি আমরা জানি, তার ৪টি পর্যায় রয়েছে- সি-টু, প্রাথমিক পর্যায়, লোকোরিজিওনাল এবং ডিসট্যান্স মেটাস্টেসিস। ভারতে, ৭০% ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শেষ দুটি পর্যায়ে সনাক্ত করা হয়। এর ২টি প্রভাব রয়েছে: মৃত্যুর উচ্চ হার (যেহেতু পরবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা কম কার্যকর হয়) এবং শেষ দুটি পর্যায়ে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয় (প্রায় ৩ গুণের মত)।
প্রাথমিক সনাক্তকরণের কারণে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার হার নাটকীয় ভাবে উন্নত হচ্ছে। চতুর্থ পর্যায় রোগ শনাক্তকরণের পরে বেঁচে থাকার হার অনেক কম, ১৪% এর মত কিন্তু প্রথম পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণের পর ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার হার অনেক বেশি, ৯০%-এর মত।
দেরিতে রোগ শনাক্তকরণের বিষয়ে বিভিন্ন কারণকে এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে। ক্যান্সারের বিষয়ে চারদিকে কুসংস্কারের কারণে নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের অভাব (এর ফলে রোগটিকে লুকিয়ে রাখা হয়)। সবকিছু অসহনীয় হয়ে যাওয়ার পরেই রোগীদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সাধারণ এক ধরনের মানসিকতা কাজ করে এবং কাছাকাছি ক্যান্সার চিকিৎসার কেন্দ্রগুলিতে গুণমান সম্পন্ন চিকিৎসার সুযোগের অভাব।
আমরা কীভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি?
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ২৫-৩০% ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তামাকের কারণে। ৩০-৩৫% ক্ষেত্রে এর কারণ খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত, প্রায় ১৫-২০% ক্ষেত্রে হয় সংক্রমণের কারণে এবং অবশিষ্ট ক্ষেত্রে অন্যান্য বিভিন্ন কারণ এই রোগের জন্য দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক চাপ, শারীরিক কার্যকলাপ, পরিবেশ দূষণকারী উপাদান ইত্যাদি।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
- ধূমপান না করার মত সহজ অভ্যাস আয়ত্ব করুন
- ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করুন
- অ্যালকোহলেরসেবন বন্ধ করুন
- ক্যালরির সীমাবদ্ধতা মেনে চলুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- সূর্যের আলোতে দীর্ঘক্ষণ সরাসরি এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন
- ন্যূনতম পরিমানে মাংস খান
- গোটা দানা শস্যের ব্যবহার করুন
- ভ্যাকসিনেশনের সাহায্য নিন (যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ক্যান্সারের বিকাশ-এ বাধা দেয়)
- সর্বোপরি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কেবলমাত্র নতুন হাসপাতাল তৈরি করলেই ভারতে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার কমবে না বলেই মত প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। এই সমস্যাটি কার্যকর ভাবে মোকাবিলার জন্য আমাদের একটি বহু-গতিশীল পদ্ধতির প্রয়োজন:
(১) সচেতনতা তৈরি করা: ক্যান্সার এবং ক্যান্সারের চিকিৎসার বিষয় সম্পর্কে আরও সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।
(২) সক্রিয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে স্বাভাবিক নিয়মে করতে হবে: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে স্বাভাবিক করা দরকার।
(৩) গুণমানসম্পন্ন ক্যান্সার চিকিৎসা: ক্যান্সার চিকিৎসার নেটওয়ার্ককে দেশের প্রতিটি কোণায় সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।
ব্যাপক সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে যেমন ক্যান্সারের প্রকোপ কমানো যায়, ঠিক তেমনই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ও করতে হবে এবং চিকিৎসাকে আরও সহজলভ্য এবং উন্নত করতে হবে। এই বিষয়ে বিশেষ সচেতনতা বৃদ্ধির নিয়েছে কার্কিনোস হেলথকেয়ার।
এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষাঃ
এইচপিভি পরীক্ষা হল- সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের জন্য একটি স্ক্রিনিং পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটি আপনার সিস্টেমে এইচপিভি, যেটি সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত, তার উপস্থিতিকে শনাক্ত করে। টাইপ ১৬ ও টাইপ ১৮ সহ নির্দিষ্ট ধরণের এইচপিভি আপনার সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
আপনার এমন একটি এইচপিভি রয়েছে যা আপনাকে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে রেখেছে কিনা সেটা জানার অর্থ হল আপনি এবং আপনার চিকিৎসক আপনার স্বাস্থ্যের যত্নের পরবর্তী পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে আরও ভালো ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে ফলো-আপ পর্যবেক্ষণ, আরও পরীক্ষা বা অস্বাভাবিক কোষগুলির চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।