দিল্লির আয়তন খুব একটা ছোটো নয়। এর আয়তন প্রায় ১,৪৮৩ বর্গকিলোমিটার। এই রাজ্যটি হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। শুনলে অবাক লাগতে পারে যে, এর ভেতর ১৬৫টি গ্রাম, ৬২টি শহর এবং ২৭টি তহশিল আছে। যদিও এই গ্রামগুলো আমাদের বাংলার গ্রামের মতো নয়। তবে দিল্লিতে আজও বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দিনে হাট বসে। সেখানে সস্তায় তরিতরকারি থেকে শুরু করে জামা, প্যান্ট পর্যন্ত কিনতে পাওয়া যায়। হাটের কথা যখন লিখছি তখন দিল্লির অন্য দুটি সাপ্তাহিক বাজারের কথা না লিখলে অন্যায় হবে। একটি হল প্রতি রবিবারে দরিয়াগঞ্জে বসা পুরাতন ও নতুন বই-এর সস্তা বাজার। বর্তমানে এই বাজারটি ডেলাইট সিনেমার সামনে মহিলা হাটে বসতে শুরু করেছে। লালকেল্লার পেছন দিকে সপ্তাহে একদিন বসে চোর বাজার। সেখানে পুরোনো টায়ার থেকে টিভি পর্যন্ত সস্তায় পেয়ে যাবেন। এই বাজারটিও শুনেছি স্থানান্তরিত হচ্ছে।

এখানে কাশ্মীরি গেট, সরাই কালে খাঁ এবং আনন্দ বিহার— এই তিন জায়গায় বড়ো বাস টার্মিনাল আছে। কয়েক বছর আগে স্টুডেন্ট এইড পাব্লিকেশনস-এর দিল্লি স্টুডেন্ট গাইড-এ প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে প্রায় ২,৫৩৫টি প্রাইমারি বিদ্যালয়, ৬৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৬৮৯টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৮৮টি কলেজ আছে দিল্লিতে। তবে বর্তমানে সংখ্যাটা বাড়তে পারে! দিল্লি ভারতের রাজধানী হওয়ায় বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রতি বছর বহু ছাত্র-ছাত্রী এখানে ভর্তি হয়।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে নিউ দিল্লি ভারতের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু রাজধানীর পত্তন হয়েছিল অনেকে আগেই। দিল্লির চাঁদনি চকে ঘণ্টাঘর ও টাউন হল তৈরি হয়। কাশ্মীরি গেটে নতুন পোস্ট অফিসের জন্য বড়ো বাড়ি নেওয়া হয়। বড়ো রাস্তা কেটে তৈরি করা হয় কুইন্স রোড, হ্যামিলটন রোড। শহরের উত্তর-পূর্বে তৈরি হয় সিভিল লাইনস্, কয়েকশো বাংলো নিয়ে। অন্যদিকে ফৌজি আদেশে লাল কেল্লার চারশো চল্লিশ গজ এলাকার ভিতর কোনও বাড়ি বা ইমারত বা দোকান রাখা নিষিদ্ধ হওয়ায় হাজার হাজার বাড়ি ও ইমারত ভেঙে ফেলা হয়। আজ বাহাদুর শা জাফর বা ইংরেজরা কেউ আর নেই কিন্তু এখনও তাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে দিল্লির আনাচে কানাচে। দিল্লিতে যে বেশ কিছু বন-জঙ্গল আছে তা অনেক পর্যটকই জানেন না। তার মধ্যে জাঁহাপনা ফরেস্ট, ডিয়ার পার্ক ইত্যাদি আরও অনেক আছে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বই-এর বাজারের মতো আছে ‘নই সড়ক’, সাজগোজের জিনিস, নাটকের জিনিস ইত্যাদি পেয়ে যাবেন কিনারি বাজারে। বিদেশি জিনিস পাবেন পালিকা বাজারে। এশিয়ার মধ্যে কম্পিউটারের সবচেয়ে বড়ো বাজার আছে নেহেরু প্লেসে। তাই সবই পাবেন এই দিল্লিতে।

বাঙালিদের দিল্লি আগমন নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে জানলাম, উমাচরণ বসু নামে এক ভদ্রলোক ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দের কোনও একসময় দিল্লিতে এসেছিলেন। তিনি প্রথমে ফৌজির চাকরি নিয়ে এলাহাবাদে আসেন এবং পরে সপরিবারে এলাহাবাদ থেকে কানপুর যান। কানপুর থেকে তিনি একা ঘোড়ায় চড়ে দিল্লি আসেন ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে। পরিবারের বাকি সদস্যদের তিনি গরুর গাড়ি করে তার আগেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা করিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় দিল্লিতে দ্বিতীয় আকবর রাজত্ব করছিলেন। তাঁর রাজত্বের তখন জরাজীর্ণ অবস্থা ছিল। তখনকার দিল্লি ছিল চাঁদনি চক, কাশ্মীরি গেট, ফতেপুরী, দরিয়াগঞ্জ, পাহাড়গঞ্জ ইত্যাদি এলাকা নিয়ে ছোট্ট একটি জনপদ, যাকে বাদশাহি ভাষায় বলা হতো শাহজাহানাবাদ। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি উমাচরণ বসু দিল্লি আসার আগে অবশ্য রাজা রামমোহন রায়ও দিল্লি এসেছিলেন, তবে তিনি এসেছিলেন সে সময়কার বাদশাহ দ্বিতীয় আকবরের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে।

উমাচরণের বংশের পরবর্তীকালের যে-মানুষটি সম্পর্কে বেশি জানা যায়, তিনি হলেন প্রফেসর সুধীর বোস (১৯০০-১৯৭০)। তিনি সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের একজন খ্যাতনামা অধ্যাপক ছিলেন। বলা হয় আদব কায়দায় তিনি ছিলেন একশো ভাগ ইংরেজ কিন্তু মনেপ্রাণে একশো ভাগ বাঙালি। সে সময়কার যে-কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এবং খেলায় তিনি ছিলেন মধ্যমণি। সাংস্কৃতিক মনস্ক দিল্লিবাসীরা এখনও তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

দিল্লিতে বাঙালির সংখ্যা প্রায় বাইশ লক্ষের মতো, তবে এ নিয়ে দ্বিমতও আছে। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাই তাদের একসাথে মিলিত হওয়ার জায়গা বা মিলনস্থল হল মন্দির এবং বেঙ্গল অ্যাসোশিয়সনের মতো কয়েকটি বাঙালি প্রতিষ্ঠান। দিল্লিতে বেশ কয়েকটি মন্দির আছে যেখানে থাকা, খাওয়ার এবং পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের সুবন্দোবস্ত আছে। এখানে পর্যটকেরা স্বল্প খরচে থাকতে পারেন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...