আরুষি তলোয়ার হত্যাকাণ্ডের সুনানি হয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট-এ। এই মামলার রায়ে আরুষির মা-বাবাকে সম্মানের সঙ্গে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি, সিবিআই এবং সিবিআই আদালতের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করা হয়েছে। আর এই ঘটনার উপর আধারিত তলোয়ার নামের ছবি তৈরি করে জনপ্রিয়তা পান মেঘনা গুলজার। সাফল্যের কারণে ছবিটির সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা প্রত্যেকেই খুশি হয়েছেন। ছবিটির মাধ্যমে তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে কিছু জোরালো প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মেঘনা। ‘রাজি’ বা ‘তলোয়ার’ প্রসঙ্গ ছাড়াও, তাঁর পরিচালক হয়ে ওঠার কাহিনি শোনালেন মেঘনা গুলজার।
‘তলোয়ার‘ ছবিটি পরিচালনা করে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আপনি। যাদের নিয়ে এই ছবি, সেই তলোয়ার পরিবারের দুই অভিযুক্তকে (আরুষির মা–বাবা) মুক্তি দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এ প্রসঙ্গে আপনার কী বক্তব্য?
আদালতের রায় নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই, থাকতে পারেও না। কারণ, আদালত তথ্য-প্রমাণ নির্ভর রায় দেয়। তবে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়েছে কিনা, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রেখেছি ছবিটির মাধ্যমে। অবশ্য সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের তো কিছু করার নেই, আমরা শুধু সমস্যাকে তুলে ধরতে পারি, দর্শকদের ভাবাতে পারি। যাইহোক, ছবিটি যে দর্শকদের ভালো লেগেছে, এতেই আমি খুশি।
কী ভেবে এই রকম একটি ঘটনাকে ছবির বিষয় করেছিলেন?
ঘটনাটা আমাকে ভাবিয়েছিল, মনে রেখাপাত করেছিল। ছবিটি তৈরি করার আগে অনেক রিসার্চ করতে হয়েছে আমাকে। বিশাল ভরদ্বাজ এবং আমি, এরজন্য খুব পরিশ্রম করেছি। খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়ে আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। ঘটনা এবং তদন্ত প্রক্রিয়া নিখুঁত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা পুরো কাজটা করেছি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ নিয়ে। এরজন্য প্রতি মুহূর্তে তদন্তের উপর কড়া নজর রাখতে হয়েছে আমাদের। কাজটা খুবই কঠিন ছিল কিন্তু ছবিটিকে নিখুঁত করার জন্য খুব খেটেছি আমরা।
ছবিটিতে আপনার নিজস্ব চিন্তাধারার কোনও প্রতিফলন ঘটিয়েছেন কী?
আমার ব্যক্তিগত কোনও সিদ্ধান্তকে আমি ছবিতে তুলে ধরি না। ছবিটি তৈরি করার আগে রাজেশ তলোয়ার কিংবা নুপূর তলোয়ারের সঙ্গে আমি দেখাও করিনি। অবশ্য ছবিটি তৈরি করার পর তলোয়ার পরিবারের লোকজনকে দেখিয়েছি।
আপনি নিজে একজন মা কিন্তু ছবিতে মায়ের কোনও দৃষ্টিকোণ রাখেননি কেন?
যে-ভাবে ঘটনার তদন্ত এগিয়েছে, সেভাবেই তুলে ধরেছি। কারও পক্ষ নিয়ে কিংবা কারও দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিটি তৈরি করিনি। আরুষি হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশিত হওয়া প্রায় চারহাজার খবর পড়ে, চ্যানেলের ফুটেজ দেখে এবং অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলে তবেই ছবির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে।
বাস্তব ঘটনাবলী নিয়ে ছবি তৈরি করতে বেশি আগ্রহী দেখা যাচ্ছে আপনাকে। এর কোনও বিশেষ কারণ আছে কি ?
আমার প্রথম ছবি ‘ফিলহাল’ ছিল সারোগেট মাদার-এর উপর। তখন আমি বিয়েও করিনি। এরপর আমি ‘জাস্ট ম্যারেড’ তৈরি করি। অ্যারেড ম্যারেজ ছিল ছবিটির বিষয়। আসলে, ছবির জন্য আমি এমন বিষয় বেছে নিই, যা নিয়ে দর্শকরা ভাবতে বাধ্য হবেন। তবে শুধু বিষয়ের গভীরতা নয়, আমার ছবিতে ভালোলাগার কিংবা বলা যায়, মনোরঞ্জনের বিষয়ও থাকে।
আপনার সাম্প্রতিক ছবি ‘রাজি‘-র সাফল্যে কতটা খুশি আপনি?
ছবিটি দেখে সবার ভালো লেগেছে, এতে আমি অত্যন্ত খুশি ৷ তবে শুধু আমি নই, প্রযোজক বিনীত, করণ, ছবির নায়িকা আলিয়া, মুখ্য অভিনেতা ভিকি কুশল, রঞ্জিৎ কপূর, মিউজিক ডিরেক্টর শংকর-এহসান-লয় প্রত্যেকেই আমাকে ফোন করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। ছবিটি বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হতে পারে।
গুপ্তচর বৃত্তির বিষয় নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে হল কেন?
হরিন্দর সিক্কা-র উপন্যাস ‘কলিং সেহমত’ পড়ার পরে আমার মনে হয়েছিল, এই উপন্যাসে গুপ্তচর বৃত্তির মতো সিরিয়াস বিষয় যেমন আছে, তেমনই সাধারণ মানুষের ভালোলাগার বিষয়ও আছে। বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে তাঁর কথা মতো এক পাকিস্তানি আর্মি অফিসার-কে বিয়ে করেও সেহমত কীভাবে তার কর্মজীবনকে সফল করবে, তা দারুণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই কাহিনিতে। তাই উপন্যাসটি পড়ার পর ঝটপট ছবিটা বানিয়ে ফেললাম।
বাবা স্বনামধন্য গীতিকার, পরিচালক (গুলজার) আর মা জনপ্রিয় অভিনেত্রী (রাখী)। কতটা প্রেরণা পেয়েছেন এঁদের থেকে?
মা-বাবার থেকে শুধু প্রেরণা পাওয়াই নয়, বাবার কাজের ধরন রপ্ত করব বলে, তাঁর সহকারি হিসাবে কাজ করেছি ‘ম্যাচিস’ এবং ‘হুতু তু’ ছবিতে।
পরিচালক হওয়ার আগে তো আপনি কবিতা, প্রবন্ধ লিখতেন। এখনও ওসব লেখালেখি চালু আছে কি ?
লেখালেখি আমার প্যাশন। এনএফডিসি-র “সিনেমা ইন ইন্ডিয়া’ বই-তেও লিখেছি। ‘পোয়েটি সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’-য় আমার কবিতাও ছাপা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির আন্ডার-এ ‘টিস্ক স্কুল অফ আর্ট’ থেকে যখন আমি ফিল্ম মেকিং-এর উপর শর্ট কোর্স করতাম, তখনও লেখালেখি জারি ছিল কিন্তু এখন সময়ের অভাবে কবিতা, প্রবন্ধ এসব কমে গেছে।
শর্ট ফিল্ম পরিচালনার মাধ্যমে তো ফিলমি কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। এখন ওয়েব সিরিজ–এর বাজার রমরমা। আপনি ওয়েব সিরিজ নিয়ে কিছু ভাবছেন?
‘দশ কাহানিয়া’-তে ‘পূরণমাসী’ করে প্রশংসা পেয়েছিলাম। এমন আরও কিছু ভালো প্লট মাথায় আছে, সুযোগ পেলে ওয়েব সিরিজ-কেই মাধ্যম করব।
ফিল্ম মেকিং–এর ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখন টেকনিক্যালি অনেক অ্যাডভান্সড । এখন ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বাজেটের ছবি তৈরি হচ্ছে। নতুন প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েরা ফিল্ম করছেন। স্টার ছাড়া ছবি চলবে না এমন যুগ আর নেই এখন। দর্শকদের রুচি, স্বাদ এসব বদলেছে। সব মিলে ফিল্মি দুনিয়ার এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতেই হচ্ছে।
আপনার সাম্প্রতিক ছবি ‘সাম বাহাদুর’-এর সাফল্যের বিষয়ে কতটা আশাবাদী?
এক ফিল্ড মার্শাল অফিসারের কর্মজীবন নিয়ে এই ছবি। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভিকি কৌশল। খুব ভালো কাজ হয়েছে। তাই, ছবিটির সাফল্যের বিষয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী।
নতুন আর কী কী বিষয় নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে আছে?
মেয়েদের বিষয় নিয়ে নতুন কিছু প্লট মাথায় আছে। সময়-সুযোগ মতো করব।