আমরা সারা জীবন অর্থ উপার্জন করি, আমাদের জীবনশৈলীর মান যাতে উন্নত হয়। কিন্তু শুধু এটুকুই যথেষ্ট নয়, ভালো ভাবে অগ্রিম পরিকল্পনা করে নেওয়া দরকার, যাতে অবসরকালে খানিকটা নিশ্চিন্তে দিন অতিবাহিত করা যায়। সাধারণত আমাদের উপার্জিত অর্থের সবটা সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না, কারণ অর্থ লাগে নানা সাংসারিক কাজে এবং শখ পূরণে। এদিকে দেরিতে বিনিয়োগ শুরু করা এবং পরিকল্পনা মাফিক সঞ্চয়ের অভাবে, অবসরকালে পকেটে টান পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। বয়স বাড়লে কাজ করতে অপারগ হলে, অবসর নিতেই হবে। তখন আর্থিক চাহিদা পূরণ হবে কী ভাবে, ভেবে দেখেছেন কী? তাই উপার্জন করছেন এমন অবস্থাতেই সমস্ত ঘুঁটি সাজিয়ে রাখতে হয়। অবসরকালীন জীবন কীভাবে কাটাবেন তা আগে থেকেই ভেবে রাখা প্রয়োজন।

লগ্নির বিষয়ে যদি কিছুটা কৌশলী হযে ওঠা যায় তাহলে আপনার অর্থ সঠিক ভাবে সঞ্চিত হবে। নিজের আর্থিক পরিকল্পনা এমন ভাবেই করে রাখুন, যাতে যথাসম্ভব আগে থেকেই বিনিয়োগ শুরু হয় এবং টাকা জমানোর পদ্ধতি বদলালেও লগ্নিতে যেন ছেদ না পড়ে।

সরকারি ক্ষেত্রে চাকরিজীবীরা অন্তত এক দিক থেকে চিন্তামুক্ত। কারণ তারা তাদের কর্মজীবন শেষ হওযার পরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন পাবেন। তাদের ক্ষেত্রে চিন্তা একটু কম হলেও, বেসরকারি বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন তাদের অবশ্যই উচিত কর্মজীবন চলাকালীন অবসর জীবনের পরিকল্পনা করে রাখা।

অবসরের পরেও যাতে সংসারে সচ্ছলতা থাকে, তার জন্য কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন। কী সেগুলি?

প্রথমত অবসর-জীবন কিন্তু বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয় বা হতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখেই কর্মজীবনের আর্থিক পরিকল্পনাগুলিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। দ্বিতীয়ত আয়, বিনিয়োগ, ব্যয় ও সর্বোপরি সঞ্চয়– এই বিষযগুলিতে সঠিক সময়ে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

খেযাল রাখবেন যদি ব্যয় কোনও ভাবে আয়কে ছাড়িয়ে যায়, তবে যতটা দ্রুত সম্ভব বিভিন্ন উপায়ে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ খরচ হয়ে যাওয়া টাকাটা পুনরায় জমিয়ে ফেলতে হবে।

একথা মনে রাখবেন একমাত্র বিনিয়োগই বদলে দিতে পারে ভবিষ্যতের রূপরেখা। তাই বিনিয়োগ করার সময় অত্যন্ত ধীর ও স্থির ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিকল্পনা ছাড়া বিনিয়োগ করা অনেকটা অচেনা জাযগায় পৌঁছে ঠিকানা হাতড়ানোর মতো ব্যাপার। তাই সঠিক ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সঠিক পথে নির্ভুল পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে কোনও ফিন্যান্স এক্সপার্ট-এর পরামর্শ নিন।

কিন্তু তা না করে যদি ভুল পথে বিনিয়োগ করেন, তাহলে তার ফল হতে পারে ভয়ংকর। বিনিয়োগে একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বড়ো মাপের মাশুল গুনতে হতে পারে আমানতকারীদের। এই বিষয়ো কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ মনে রাখা প্রয়োজন।

বিনিয়োগের সঠিক পরিকল্পনা: পরিকল্পনা ছাড়া অবসরকালীন সময়ের জন্য বিনিয়োগের পথে একেবারেই এগোনো উচিত নয়। বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা থাকতেই হবে। প্রথমেই বিনিয়োগের আগে নিজের জীবনের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কিছু লক্ষ্য স্থির করে নিন। যেমন সন্তানের উচ্চশিক্ষা, নতুন বাড়ি, গাড়ি বা ভ্রমণ বাবদ খরচ ইত্যাদি। জীবনের নানা পর্যায়ে বড়ো খরচের ধাক্কা সামলাতে হতে পারে। তার জন্য কিছু লুজ ক্যাশ রাখুন। আর আগে থেকে জানা থাকলে কোন সময়ে কতটা অর্থের প্রয়োজন, তার একটা হিসেব করে রাখুন। এবার সঞ্চয়ের প্রসঙ্গ। সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্যই অগ্রিম পরিকল্পনা করতে হবে। বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভালো করে বাজার যাচাই করে নিন।

সব টাকা এক জায়গায় বিনিয়োগ নয়: একই জায়গায় নিজের কষ্টার্জিত অর্থ জড়ো না করাই সুবিবেচনা। এটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব সময় বিভিন্ন ফান্ডে টাকা ভাগ করে রাখা উচিত। এর ফলে ঝুঁকির হাত থেকে রেহাই পাওযার পথগুলি খোলা থাকে। এক জায়গায় টাকা না রেখে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে। এর ফলে কোনও একটি ফান্ডে লোকসান হলেও অন্য কোনও ফান্ডে হওয়া লাভ আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

চলবে…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...