আপনি যত তাড়াতাড়ি অবসর গ্রহণের আগে আপনার জীবনের জন্য পরিকল্পনা শুরু করবেন এবং সম্পদ সংগ্রহ করা শুরু করবেন, তত তাড়াতাড়ি আপনি চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন। তাই, উপযুক্ত খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা শুরু করার জন্য রইল কিছু পরামর্শ৷
সিদ্ধান্তে আবেগকে প্রশ্রয় নয়: আর্থিক বিনিয়োগের সময় অত্যন্ত বাস্তববাদী থাকুন। বিনিয়োগের পোর্টফোলিয়ো তৈরির সময় আবেগে ভেসে গিয়ে বা কারও জোরাজুরিতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ক্ষতির সম্মুখীন হলে সেখানে টাকা আটকে রাখার প্রয়োজনও নেই। সত্বর সেই জায়গা থেকে টাকা তুলে ফেলাই বুদ্ধিমত্তা। লোকসান হচ্ছে দেখেও সেই জায়গায় টাকা রেখে দিলে, পরবর্তীকালে আরও বড়োসড়ো ক্ষতি হতে পারে। তাই বুঝেশুনে, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজ রাখুন: বিশ্ব অর্থনীতির প্রতি নজর রাখুন। বিনিয়োগের পোর্টফোলিয়ো তৈরির সময় পারিপার্শ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এমনকী বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাবে বড়োসড়ো আর্থিক মন্দা হতে পারে কিনা সেই বিষয়ে ধারণা রাখা দরকার। কারণ এটি আপনার বিনিয়োগকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
সবুরে মেওয়া ফলে: বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থ বিনিয়োগ করার পর পরই যদি বিশাল অঙ্কের লাভের স্বপ্ন দেখেন, তা হলে কিন্তু আশাহত হবেন। কারণ যে-কোনও বিনিয়োগই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বাজারনির্ভর ফান্ড হলে তো মূল্যের ওঠা-পড়া লেগেই থাকবে। কোনও একটি ভালো জায়গায় বিনিয়োগের পর লগ্নি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত বা উত্তেজিত হবেন না। ক্ষতির সম্মুখীন হলে খুব ভয় পেয়ে গিয়ে কোনও ভুল পদক্ষেপ না করাই কাম্য। নিজেকে ধৈর্যশীল বিনিয়োগকারী হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। আখেরে তাতে অবসরকালে যথেষ্টই বড়ো অঙ্কের টাকার মুখ দেখতে পাবেন।
মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ও হাইব্রিড ফান্ড: মূল্যবৃদ্ধির জেরে জমানো টাকার দাম যে কী নিদারুণ ভাবে কমছে, তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। বর্তমান বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার মারাত্মক, সর্বশেষ পরিসংখ্যান তাই বলছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠছে।
এই অবস্থায় ডেট-নির্ভর হাইব্রিড ফান্ড আপনাকে কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়া দূরে থাক, বরং পোর্টফোলিওকে পিছিয়ে দেবে। লগ্নিতে রিটার্ন কম হবে, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে পারবেন না। এর কারণ হাইব্রিড ফান্ডে ঋণপত্র বেশি, পারফরমেন্সের গণ্ডিও ছোটো।
এই ধরনের ফান্ড-এ সুদের হারজনিত ঝুঁকি খুব বেশি থাকে, ক্রেডিট রিস্কও কম নয়। বাজারে সুদের হার বদলে যাচ্ছে অতি দ্রুত। তার জেরে ঋণের বাজার ইদানীং বেশ অস্থির।
তাহলে বিনিযোগকারী কী করবেন?
- যদি অবসর নিতে বেশ কিছুটা সময় থাকে, তাহলে লগ্নির ধরন বদলে ইকুইটি-মুখী করতে হবে।
- ডেট থেকে ইকুইটিতে লগ্নি বদল করুন নিয়ম ও যথাযথ পদ্ধতি মেনে।
- লগ্নির ধরন বদলাতে হলে কর দিতে হতে পারে। সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। এই বিষয়ে ট্যাক্স কনসালট্যান্ট-এর পরামর্শ নিন।
অতএব বিনিয়োগের প্রক্রিয়া চালু হোক নিজস্ব রোজগার শুরু হওয়ার সময় থেকেই। উপার্জনের অঙ্ক বাড়লে, কেরিয়ার এগোলে, বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়ুক। তাতে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অস্ত্রও শক্তপোক্ত হবে।
যে-কোনও বিনিয়োগ, না থেমে, না ভেঙে চালিয়ে যাওয়া অবশ্য কঠিন কাজ। কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। বিনিয়োগের ধরন বদলে, বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চয় করুন। হয়তো সঙ্গে সঙ্গে বা অল্প মেয়াদে সুফল পাবেন না, সুবিধাটুকু বুঝবেন পরে।
বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত সহজ আবার কঠিনও। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য, তথ্য বিশ্লেষণ এবং সেগুলি যাচাই করে নিতে হবে। এক বার সে সব সম্পন্ন হলে অবসরের চিন্তা থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পারবেন। সব মিলিয়ে প্রক্রিয়াটি সোজা নয়। তবে এখনও হাতে যদি সময় থাকে অবসর নিতে, তা হলে শুরু করতে দেরি করবেন না।