প্রযোজক ও সৃজনশীল পরিচালক: বিপুল অমৃতলাল শাহ
লেখক: সূর্যপাল সিং, সুদীপ্ত সেন, বিপুল অমৃতলাল শাহ
পরিচালক: সুদীপ্ত সেন
শিল্পী: আদা শর্মা, যোগিতা বিহানি, সোনিয়া বালানি, সিদ্ধি ইদনানি, বিজয় কৃষ্ণ, প্রণয় পাচুরি, প্রণব মিশ্র
এটা সকলেই হয় তো মানেন যে, দেশের সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশে তৈরি চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুও সর্বদা পরিবর্তিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিটি চলচ্চিত্র নির্মাতা কোনও না কোনও নির্দিষ্ট এজেন্ডা-র আওতায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। বহু সময় দেখা যায় এটি করতে গিয়ে, নির্মাতা তাঁর এজেন্ডা অনুযায়ী ঘটনাগুলি বিকৃত করতে দ্বিধা করেন না। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমাটি দেখার সময়ও মনে হয় চলচ্চিত্র নির্মাতা কোথাও যেন বিভ্রান্ত।
ছবিটির প্রচারের সময় বলা হয়েছিল যে, কেরালা রাজ্য থেকে ৩২হাজার মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে। কিন্তু ছবিতে একটি সংলাপ রয়েছে যেখানে ছবির এক নায়িকা এফআইআর লিখতে থানায় গিয়ে সেখানে বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে ৩২,০০০ মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে।‘ অথচ এখনও পর্যন্ত মাত্র ৭৬১টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এবং এর মধ্যে ২৬১ টি মেয়েকে তাদের পিতামাতার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে প্রশাসন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৩২ হাজারের সংখ্যা কোথা থেকে এল? এই পরিসংখ্যান যদি সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র পাশাপাশি মুক্তি পেয়েছে নির্মাতা সুধীর মিশ্রের ছবি ‘আফওয়া’-ও। এই ছবিটির বার্তা হল সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে যে-কোনও ভিডিও বা মেসেজ আসুক না কেন, সেগুলি সত্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। এরকম পরিস্থিতিতে কোন চলচ্চিত্র নির্মাতার বলা কোন জিনিসটা ঠিক আর কোনটা ভুল ,তা দর্শকরা কীভাবে বিবেচনা করবেন সেটা ভেবে দ্যাখবার?
ছবিতে একটি সংলাপ রয়েছে যে ,একজন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রাজ্যে যদি এভাবে ধর্মান্তর হতে থাকে তবে একদিন কেরালা রাজ্য একটি ইসলামিক রাজ্যে পরিণত হবে। এখানে, চলচ্চিত্র নির্মাতার সেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করা উচিত ছিল। তবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেনের দাবি, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কেরালায় ৩২ হাজার মহিলা আইএসআইএস-এ যোগ দিয়েছেন।
ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেন এবং সৃজনশীল প্রযোজক বিপুল অমৃতলাল শাহ জোর দিয়ে বলেছেন যে তাঁদের ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ , কেরালার ৩২,০০০ তরুণীর সত্য গল্প অবলম্বনে তৈরি, যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে আফগানিস্তান-তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আইএসআইএস শিবিরে বন্দি ছিল। যাদের কাজ ছিল ইসলামের জিহাদিদের যৌনক্ষুধা নিবৃত্ত করা। এসব ক্যাম্পে প্রতিদিন বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করা হতো প্রতিটি মেয়েকে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে শুধু কেরালা সরকারই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারেরও এই ইস্যুতে নীরবতা বোধগম্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকাতে আফগানিস্তানের কারাগারে থাকা চারটি মেয়ের গল্প বেরিয়েছিল। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ হচ্ছে তার চলচ্চিত্রে, প্রতিটি ইস্যুর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সেই ইস্যুতে সমাজ ও দেশে বিতর্কের পরিবেশ তৈরি করা। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সেরকমই কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছে ছবিতে। অবশ্য চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য চলচ্চিত্র নির্মাতার অনুভূতি, সংবেদনশীলতা এবং পুরো গল্পটির প্রতি তিনি কতটা সততা প্রদর্শন করেছেন সে বিষয়ে মনে প্রশ্ন তোলেই।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটি দেখে মনে হয় দর্শকদের ‘ব্রেইনওয়াশ’ করাই যেন এই নির্মাতার একমাত্র লক্ষ্য। সিনেমাটিতে বলা হয়েছে, কোনও মুসলমান ব্যাক্তি ভালো নন। নাস্তিকতা এবং কমিউনিজমের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। চলচ্চিত্রটি আরও তুলে ধরেছে, গোপন উদ্দেশ্য ছাড়া কোনও পারস্পরিক প্রেম নেই । কিন্তু এটা অকল্পনীয় যে শালিনী, যিনি নার্স হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছেন, তাঁর মুসলিম বয়ফ্রেন্ড রমিজ যখন তাঁর সাথে প্রতারণা করেন, তখন তিনি কীভাবে মৌলবির বোঝানোতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিজের পিতামাতার সাথে দেখা না করে একজন অপরিচিত মুসলিম যুবক ইসহাককে বিয়ে করেন?
ছবিটি দেখলে মনে হয় কারণ ছাড়াই চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্টটি উস্কানিমূলক করে তোলা হয়েছে। ছবির তথ্য এবং পরিসংখ্যান, যাকিছু উপস্থাপন করা হয়েছে তা ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের থেকে তথ্য জোগাড় করা হয়েছে। তবে চলচ্চিত্র নির্মাতা সুদীপ্ত সেনের এটাই প্রথম প্রচেষ্টা নয়। ২০২২ সালে ‘ইন দ্য নেম অফ লভ’ নামে একটি ডকুমেনট্রি নির্মাণ করেছেন তিনি। সেই তথ্যচিত্রে সুদীপ্ত সেন বলেছেন, কেরালা রাজ্য থেকে ১৭হাজার এবং ম্যাঙ্গালোর থেকে ১৫হাজার হিন্দু ও খ্রিস্টান মেয়েকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। এটা ‘লভ জিহাদের’ ফল।
গল্প:
ছবির গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন শালিনী উন্নিকৃষ্ণন (আদা শর্মা) এবং তাঁর তিনজন রুমমেট, একজন হিন্দু মেয়ে গীতাঞ্জলি (সিদ্ধি ইডনানি), আরেকজন খ্রিস্টান মেয়ে নিমাহ (যোগিতা বিহানি) এবং তৃতীয়জন মুসলিম মেয়ে আসিফা(সোনিয়া বালানি)। সিনেমাটি আসিফা (সোনিয়া) কে নিয়ে শুরু । আসিফা তিন বন্ধুকে ব্রেইনওয়াশ করার চেষ্টা করে এই বলে যে, হিজাব পরা মেয়েরা পুরুষদের মন্দ নজর থেকে নিরাপদ থাকে। আসিফা বারবার তাদের জিজ্ঞেস করে যে কেন তাদের ঈশ্বর জিশু খ্রীষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করতে আসেননি। একইভাবে, তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে কেন ভগবান শিবকেও তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ নিয়ে কেন ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। ভগবান রামকে তাঁর স্ত্রী সীতাকে রাবণের হাত থেকে মুক্ত করতে বানর সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতে হয়েছিল। কারণ ‘আল্লাহ’ ব্যতীত অন্য কোনও উপাস্য দেবতার মধ্যে কোনও ক্ষমতা নেই। তারা সবাই দুর্বল। আসিফা এই তিনজনকে বোঝায় যে, একমাত্র আল্লাহই পারেন ‘কাফেরদের’ রক্ষা করতে, যাদেরকে জাহান্নমের আগুন ও অভিশাপের সম্মুখীন হতে হবে। আসিফা তিন বন্ধুকেই ব্যাখ্যা করে, আল্লাহই একমাত্র সত্য ঈশ্বর এবং ইসলামই একমাত্র ধর্ম যার অস্তিত্ব প্রাপ্য।
আসিফার সঙ্গেই যুবক রমিজ (প্রণয় পাচুরি), আবদুল (প্রণব মিশ্র) এবং ইসহাক (বিজয় কৃষ্ণন)-দের ষড় রয়েছে। তাদের কাজ হল অচেনা তরুণীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা। অল্প সময়ের মধ্যেই শালিনী, নিমাহ (যোগিতা বিহানি) এবং গীতাঞ্জলি (সিদ্ধি ইদনানি) আসিফার জাদুর ফাঁদে পড়ে যায়।
অধৈর্য ধর্মগুরু তার অনুসারীদের পরামর্শ দেন যে, মেয়েদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে, তাদের ওষুধ খাওয়াতে, তাদের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে এবং সম্ভব হলে তাদের গর্ভবতী করতে। মৌলবির পরামর্শ পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়েছে কারণ শালিনী বিয়ের আগেই রমিজের সন্তানের মা হতে চলেছেন ছবিতে দেখানো হয়েছে। রমিজ তাকে এই শর্তে বিয়ে করতে রাজি হয় যে শালিনী ইসলাম গ্রহণ করবে। যখন তিনি তা করতে রাজি হন, তখন মৌলবি বলেন যে রমিজ কেরালার বাইরে চলে গেছে। শালিনীর এখন উচিত ইসহাককে বিয়ে করে সিরিয়ায় গিয়ে আল্লাহর ইবাদত করা এবং তার সকল গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়া। শালিনী ফাতিমা হিসাবে ইসহাককে বিয়ে করে এবং কলম্বো হয়ে আফগানিস্তান, তুরস্ক এবং সিরিয়া সীমান্তের একটি নির্জন অঞ্চলে আইএসআইএসের শিবিরে পৌঁছোয়। যেখানে সে বুঝতে পারে যে তার স্ট্যাটাস সেক্স স্ল্যাব বা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ছাড়া আর কিছুই নয়।
রচনা ও পরিচালনা:
চলচ্চিত্র নির্মাতা দাবি করেছেন যে তিনি ছবিতে সত্য উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু সিনেমাটি দেখে তেমনটা মনে হয় না। ছবির স্ক্রিপ্ট দর্শকের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে। যদিও চলচ্চিত্রের কাজ হল দর্শককে সত্য এবং ভুল সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করা। অবশ্য ‘ধর্মান্তরের’ সততা অস্বীকার করা যায় না।
আমাদের দেশে খ্রিস্টান থেকে শুরু করে সব ধর্মের মানুষই অন্য ধর্মের মানুষের মগজধোলাই করে তাদের নিজের ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে, এই সত্যকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু আসলে শুধুমাত্র দুর্বল লোকেরা কোনও না কোনও রূপে সহজেই ধর্মান্তরিত হতে প্রস্তুত। কিন্তু এই ছবির দিকে তাকালে আমরা এই সত্যকে উপেক্ষা করতে পারি না যে, কেরালা দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত রাজ্য।
এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব যে একজন শিক্ষিত মেয়ে জন্ম থেকেই শেখানো আদর্শ পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণে হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় থাকা তার বাবার মুখে থুতু ফেলবে! ভারতীয় সভ্যতা এবং কোনও ধর্ম কি এটাই শিক্ষা দেয়? এই দৃশ্য থেকেই বোঝা যায় পুরো চলচ্চিত্রটি কেবল আগুন লাগানো এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্যই নির্মিত।
কেরালার কিছু মেয়ের সঙ্গে এমনটা ঘটেনি এটা জোর দিয়ে বলা যায় না ঠিকই , কারণ আমরা জানি, নৃশংস তালেবানরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের সঙ্গে অনেক ভয়ানক কাজ করেছে। কিন্তু এটা ভারতের কেরালা রাজ্যের ৩২,০০০ মেয়ের গল্প বলে দাবি করা স্পষ্টতই সঠিক বলে মনে হয় না।
দুর্ভাগ্যবশত, চলচ্চিত্র নির্মাতার সাহিত্যিক ও পরিচালনার দুর্বলতার কারণে, একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে মেরুকরণের, তার প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ছবির গল্প অনুযায়ী হিন্দু মেয়ে শালিনীর বিশ্বাস কেঁপে উঠলেও কট্টর ক্যাথলিক মিমা তার বিশ্বাসে অনড় থাকে। একই সঙ্গে একজন কমিউনিস্ট নেতার মেয়ে গীতাঞ্জলিও, কুমারীত্ব হারায় । শালিনী যখন জানতে পারে যে সে একজন অবিবাহিত মা হতে চলেছে, তখন সে এমন আচরণ করে যেন এটাই পৃথিবীর শেষ। অথচ নার্স হওয়ার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি শালিনী একটি অত্যাধুনিক পরিবারের সদস্য। এটি পরিচালনার দুর্বলতার পাশাপাশি দুর্বল চিত্রনাট্যের লক্ষণ।
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে সারা দেশের মতো কেরালা রাজ্যেও ধর্মীয় গোঁড়ামি বাড়ছে, যার বিরোধিতা করা উচিত। যে- কোনও ধর্মের প্রতি ধর্মান্ধতা প্রতিটি সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। দ্বিতীয়ত, সন্ত্রাসবাদের প্রতি নমনীয়তাও ঠিক নয়। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে যারা অসহিষ্ণুতার জন্য চিৎকার করছে তারা সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। এটি নির্বাচনমূলক সক্রিয়তা, যা একটি জাতির জন্য আরও বিপজ্জনক।
একই প্রেক্ষাপটে, আমাদের অবশ্যই এই সত্যটিও বিবেচনা করতে হবে যে ১৯১১ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত কেরালা রাজ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু ১৯৮১ সাল থেকে এই বৃদ্ধি কমে গেছে। ১৯৮১ সালে কেরালায় ৫৮.২ শতাংশ হিন্দু, ২১.৩ শতাংশ মুসলিম এবং ২০.৬ শতাংশ খ্রিস্টান ছিল। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ৫৪.৯ শতাংশ হিন্দু, ২৬.৬ শতাংশ মুসলমান এবং ১৮.৪ শতাংশ খ্রিস্টান ছিল। অর্থাৎ কেরালায় মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এই পরিসংখ্যানগুলি কি নিজেদের মধ্যে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করে না? তবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ – র মাধ্যমে পরিচালক সুদীপ্ত সেন বিতর্কিত সামাজিক বিষয়গুলি সেলুলয়েডে আনার জন্য প্রচেষ্টা করেছেন ঠিকই কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিপক্কতা এবং সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে তাঁর মধ্যে। কট্টর সংখ্যালঘুরা ছবিটি দেখে খুশি নাও হতে পারে, আবার এই গল্প হার্ডকোর হিন্দুত্ববাদী বিশ্বাসীদেরও বিরক্ত করতে পারে। ধর্মের ছদ্মবেশে হিংসাকে ন্যায়সঙ্গত করা, বাবা-মাকে অপমান করা, ভাংচুর করা ঠিক নয়।
সব ধর্মেই ভালো-মন্দ আছে। এর মূল কারণ হ’ল আমরা এর মধ্যে থাকা বিস্তৃত সত্যটি বুঝতে পারি না। শালিনীর বয়ফ্রেন্ড রমিজের বাড়ির পোস্টারে লেখা আছে, ‘জাতীয়তাবাদ হারাম। মুসলিমরাই তোমাদের পরিচয়।‘ আর একটি সংলাপ রয়েছে – ‘আওরঙ্গজেবের অসমাপ্ত কাজ আমাদের শেষ করতে হবে।’ চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিটি ভারতীয় মুসলিম চরিত্রকে উগ্রবাদী করে ইসলামোফোবিয়ার অভিযোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। যদিও পুরো চলচ্চিত্রটি ইসলামকেই শ্রেষ্ঠ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
কিন্তু ‘আল্লাহ হো আকবর’ স্লোগান দিয়ে আইএস বিশ্বজুড়ে নারী ও তরুণীদের ‘সেক্স স্ল্যাব’ হিসেবে ব্যবহার করে, তা কী ধরনের নিষ্ঠুরতা? এটাকে কোনও সভ্য সমাজে বা কোনও ধর্মে স্থান দেওয়া যায় না। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধর্ম-রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, চলচ্চিত্র নির্মাতা এই বার্তাটি দর্শকদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পারেননি।
অভিনয়:
শালিনী ওরফে ফাতিমার চরিত্রে আদা শর্মার অভিনয় তেমন মন কাড়ে না। ছবির প্রথম ভাগে তাকে দেখে মনে হয়েছে সে হাসি-কান্না ছাড়া আর কিছুই জানে না। তবে বিরতির পর আদা শর্মার অভিনয় দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। যোগিতা বিহানী ভালো অভিনয় করেছেন। কমিউনিস্ট নেতার কন্যা গীতাঞ্জলির চরিত্রে সিদ্ধি ইডনানি তাঁর অভিনয় দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু বিজয় কৃষ্ণ, প্রণব মিশ্র ও প্রণয় পাচোরির অভিনয় দর্শকদের হতাশই করেছে ।