‘জুবিলি’ সিরিজের হাত ধরে ওটিটিতে পা রেখেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।এই তারকার কাছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর।কারণ তিনি চেষ্টা করেন আট-দশ বছর পর পর নিজেকে নতুন মোড়কে উপস্থাপিত করতে৷ একটা অধ্যায়কে পাল্টাতে। একটা সময় একদম কমার্শিয়াল ছবি করেছেন৷ পরবর্তী অধ্যায় জুড়ে আবার রয়েছে আর্ট হাউস ঘরানার ছবি৷ ঠিক দশ বছর পরে আবার নতুন চ্যালেঞ্জ নিলেন, যেটা হল ওয়েব সিরিজের চ্যালেঞ্জ। নতুন মিডিয়াম, যেখানে সারা ভারতের ভালো ভালো অভিনেতারা কাজ করছেন। তাঁরা প্রচণ্ড ট্যালেন্টেড। বর্তমানে সেই তালিকায় সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রসেনজিতের নাম৷নিউ এজ ডিরেক্টরদের মধ্যে অন্যতম বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের নতুন সিরিজ জুবিলিতে শ্রীকান্ত রায়ের চরিত্রে সাড়া জাগিয়েছেন প্রসেনজিৎ৷
বিক্রমাদিত্যর নাম জড়িয়ে রয়েছে ‘সেক্রেড গেমস’-এর সঙ্গে। বলিউডে প্রাচীন যুগে আবহাওয়া কেমন ছিল, তারকাদের মধ্যে কেমন রাজনীতি চলত, তাঁদের জীবনযাপন বা যৌবনযাপন কেমন ছিল, সব কিছুই নাকি উঠে আসবে এই নতুন ওয়েব সিরিজে। এটি ফিকশন। তবে বলিউডের তাবড় কিছু তারকার জীবনকে ভিত করে চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে।
বিক্রমাদিত্য মোতয়ানের ‘জুবিলি’-তে উঠে এসেছে ৪০-এর দশকের মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ছবি, তার নানান ওঠাপড়া। তখন অবশ্য ‘বলিউড’ বলে কিছুই ছিল না।যখন নানান পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে উঠছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এত তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েনি সেইসময়ের সিনেমা৷ অবিভক্ত ভারতে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি করাচি, লাহোরেও ছিল অভিনয়ের আরও এক দুনিয়া, থিয়েটারের চল, সেসবই উঠে এসেছে ‘জুবিলি’ তে।
‘জুবিলি’র শুরুটা হয় ‘রয় টকিজ’-এর মালিক শ্রীকান্ত রায় (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) ও তাঁর তারকা স্ত্রী সুমিত্রা কুমারী(আদিতি রাও হায়দারি-র কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে। যে-চরিত্রগুলি আসলে কিনা ভারতীয় সিনেমার দুনিয়ার প্রথম ‘পাওয়ার কাপল’ হিমাংশু রায় ও তাঁর অভিনেত্রী স্ত্রী দেবিকা রানির আদলে তৈরি বলেই মনে হয়েছে। ‘শ্রীকান্ত’ চরিত্র সেই সময়ের হিমাংশু রায়-এর আদলে তৈরি, যিনি সেইসময়ের একজন স্টারমেকার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ‘বম্বে টকিজ’-এর ছায়া গোটা সিরিজ জুড়ে। এই চরিত্রটা কিছুটা উওম্যানাইজার। চরিত্রটা ফ্ল্যামবয়েন্ট। শ্রীকান্তকে দেখলেই মেয়েরা আকৃষ্ট হয়।আবার একই সঙ্গে কিছুটা জেদি ও কাজপাগলও বটে৷
কিছুটা ধূসর। হিমাংশুর বোনপো, দেবিকার অন্যতম নায়ক ছিলেন অশোককুমার। অশোককুমারের চরিত্রটিই হয়তো বা এখানে মদনকুমার হিসাবে তুলে ধরা হয়ছে। যদিও ওয়েব সিরিজের বাকি গল্পের সঙ্গে হিমাংশু রায়, দেবিকা রানি কিংবা অশোক কুমারের জীবনের গল্পের সে অর্থে কোনও মিল নেই। পুরো বিষয়টিই পরিচালক তাঁর নিজের মতো করে সাজিয়েছেন।
প্রসেনজিৎ একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘বম্বেতে সবাই কেবল বলছে, আমাকে বাবার মতো দেখাচ্ছে! আমি এটা এনজয় করছিলাম।এছাড়া শ্রীকান্ত রায় চরিত্রটার অন্য মজাও আছে৷ শ্রীকান্ত রায় একটা প্ল্যাটফর্ম নিজে তৈরি করেছে। সে হিমাংশু রায়, শশধর মুখার্জি বা বি.এন সরকার-ও হতে পারে। যাঁরা স্টুডিও তৈরি করেছিলেন, তাঁদের স্যালারিতে হিরো-হিরোইনরা সার্ভাইভ করতেন। এটা আমার চোখে দেখা। আমার বাবা তেমনই একজন অভিনেতা ছিলেন। যখনই ওরা আমাকে গল্প শুনিয়েছিল, গুরু দত্তের ‘কাগজ কে ফুল’-এর কথা মনে পড়েছিল। সারা জীবন ভেবেছি, একটা ‘কাগজ কে ফুল’ কি কোনওদিন করতে পারব না? গুরু দত্ত-র আমি বিশাল ফ্যান, বিক্রমাদিত্য ঠিক সেই গাড়ি নিয়ে স্টুডিও-তে ঢোকার শটটাই আমাকে দিল! আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। বলেছিলাম, ‘তুমি জানো, এটা আমার কত ছোটবেলার স্বপ্ন!’ আমি স্টুডিও তৈরি করিনি, অ্যাক্টরও না, কিন্তু নিজে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করেছি চল্লিশ বছর ধরে। এই ব্র্যান্ড কেউ বানিয়ে দেয় না। বানিয়ে দেন ঈশ্বর, আর আমাদের চেষ্টা, প্রযোজক, পরিচালক-অভিনেতার মিলিত চেষ্টা।‘
বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সঙ্গে কাজ করাটা একটা নতুন অধ্যায় তাঁর জীবনে, একথা একরকম মেনেই নিয়েছেন প্রসেনজিৎ। ওটিটি-র প্রথম কাজেই যে এতটা সাড়া পড়েছে, এটা তাঁর কাছে আশীর্বাদের মতো-এমনটাই স্বীকারোক্তি নায়কের। তাঁর হিন্দি ছবির প্রথম পরিচালক ডেভিড ধাওয়ান ফোন করেছিলেন, তাঁর ভালো লাগার কথা জানাতে। ইন্ডাস্ট্রির আরও বহু পুরনো লোকজন ফোন করছে তাঁকে সাধুবাদ দিতে! নানা চরিত্রে নিজেকে ভেঙে গড়ে এভাবেই দর্শকদের সারপ্রাইজ করতে বদ্ধপরিকর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।