নিজেকে সুন্দরী করে তুলতে বিয়ের আগে নিজের যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর একদিনে ত্বককে পারফেক্ট করা সম্ভব নয়। তাই বিয়ের রাতে ক্যামেরার প্রতিটি ফ্ল্যাশেই ফোটোজেনিক হয়ে উঠতে আগাম পরিকল্পনা জরুরি। প্রয়োজন স্পেশাল কেয়ারের। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, বিশ্রাম, ভালো ঘুমের সঙ্গে দরকার ত্বকের নিয়মিত দেখভাল। ঘরোয়া পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক উপায়— দুটোই এক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। উজ্জ্বল দাগহীন ত্বক পেতে কী করবেন?
চন্দনের প্যাক : আপনার ত্বকে নিয়মিত চন্দনের প্রলেপ লাগান। তাহলেই ত্বকের বলিরেখা, দাগ-ছোপ আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবে। ত্বক একদিকে যেমন কোমল হয়ে উঠবে, তেমনই উজ্জ্বল দেখাবে। চন্দনের প্যাক র্যাশজনিত ইরিটেশন উপশমেও দারুণ কার্যকর। এই প্যাকটি ব্রণ নিরাময়ের জন্যও আদর্শ।
লেবু ও মধু : মুখের তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলতা বাড়ায় লেবু আর মধুর মিশ্রণ। আধ চা-চামচ লেবুর রস আর এক চা- চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে, মিশ্রণটি মুখে, হাতে, গলায় লাগান। মিনিট পনেরো রাখার পর ঠান্ডা জল দিয়ে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিন। নিয়মিত লেবু-মধুর ব্যবহার ত্বককে লাবণ্যময় আর সুন্দর রাখবে।
পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ত্বক : চিনি আর কমলালেবুর রসের মিশ্রণ হাতে লাগিয়ে হালকা ভাবে ঘষে, মিনিট পাঁচেক রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা জলে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের মৃতকোশ দূর হবে আর ত্বকও ঝকঝকে হবে।
রূপচর্চায় আধুনিক পদ্ধতি : বিজ্ঞানের উন্নতির সুফল মিলছে রূপচর্চাতেও। যার হাত ধরে সেলিব্রিটিরা আরও আকর্ষণীয় এবং সুন্দর হয়ে উঠছেন। অবশ্য শুধু সেলিব্রিটিরাই কেন সাধারণ মধ্যবিত্তরাও তাদের সাধ্য অনুযায়ী সাধ মিটিয়ে নিচ্ছেন। বেশ কিছু ট্রিটমেন্ট রয়েছে যার মাধ্যমে ত্বকের উপরিভাগের মৃতকোশ দূর করে এক লহমায় সতেজতা ফিরিয়ে, ত্বককে উজ্জ্বল করা সম্ভব। লেজার টোনিং-এর কার্যকারিতাও চোখে পড়ার মতো। এটিতে ত্বক হয়ে ওঠে টানটান এবং বলিরেখামুক্ত। সতেজতাপূর্ণ আকর্ষণীয় লুক পেতে জুবেডার্ম-এর মতো ফিলার্স-এর গ্রহণযোগ্যতাও কম নয়। অতিরিক্ত ঢোকা চোখের ক্ষেত্রেও এই ফিলার্স ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বকের অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি স্ট্রেস বা মাত্রাতিরিক্ত কাজের প্রেশারের কারণে চোখের নীচে কালো দাগ দূর করতেও এটি অতুলনীয়।
আজকাল তো অনেকেই বোটোক্স থেকে শুরু করে ডি ট্যানিং– এমনকী লাইপোসাকশন-এর মতো আধুনিক পদ্ধতিকেও কাজে লাগাচ্ছেন নিজেদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। কাটাছেঁড়া বাদ দিয়ে সেরকম কিছু ট্রিটমেন্ট-এর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
লিপ অগমেন্টেশন : রূপচর্চার ক্ষেত্রে হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ইঞ্জেকশন যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। এই ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি মুখের গড়ন অনুযায়ী গাল এবং ঠোটের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করা যায়। অর্থাৎ কারওর ঠোঁট যদি মুখের তুলনায় পাতলা হয়, সেক্ষেত্রে এই ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সেটিকে পুরু বানিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়৷ এই থেরাপির দ্বারা বলিরেখাও দূর হয়। নিজের লুক বদলে ফেলতে জুবেডার্ম, জাদুকাঠির মতো কাজ করে। তবে এক্ষেত্রে কোনও ভালো বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়াটা বাঞ্ছনীয়। জুবেডার্ম ফিলার্স-এর মাধ্যমে লিপ অগমেন্টেশন করালে এর স্থায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয় এছাড়াও ত্বকের শিথিলতা দূর করে ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে ত্বক হয়ে ওঠে মোলায়েম, প্রাণবন্ত। একঝটকায় বয়সটাও কমে যায় অনেকটা।
ডায়মন্ড পলিশিং : এটি এমন একটি পদ্ধতি যাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ত্বকের উপরিভাগে ডায়মন্ড সহযোগে পলিশ করা হয়। মৃতকোশ, দাগ-ছোপ দূর করে তো বটেই, এটি ত্বককেও করে তোলে ফরসা আর উজ্জ্বল।
লেজার হেয়ার রিডাকশন : বারবার ওয়্যাক্সিং আর ব্লিচিং-এর ব্যবহারে ত্বক ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে হাতে, পায়ে বা শরীরের অন্যান্য অংশে এতটাই রোমের আধিক্য দেখা যায় যে, এগুলো না করালেই নয়। আজকাল অনেকেই লেজার হেয়ার রিডাকশন করাচ্ছেন পাকাপাকি ভাবে অবাঞ্ছিত রোমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তবে এক্ষেত্রেও ভালো কোনও বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হওয়াটাই যথাযথ হবে।
পারফেক্ট ব্রাইডাল লুক পেতে হলে শুধুমাত্র ত্বকের পরিচর্যা করলেই চলবে না, সমানভাবে প্রয়োজন চুলের যত্নেরও। কারণ ত্বক বা চুল— এই দুটোর একটাও যদি নিষ্প্রাণ বা অনুজ্জ্বল হয়, সেক্ষেত্রে কনের সাজটাই মাটি হয়ে যাবে। তাই আর দেরি না করে সুন্দর ঝলমলে চুল পেতে বিয়ের আগেই যত্ন নিতে শুরু করে দিন।