বড়ো শহরগুলোতে পিজি বা পেয়িং গেস্ট বিষয়টি খুব-ই জনপ্রিয়। এক ঘরে অনেকে ঠিক পরিবারের সদস্যদের মতো বসবাস করার সুবিধে থাকে পিজি-তে। একা থাকার থেকে যৌথ ভাবে থাকার এই বিষয়টি অনেকটা আর্থিক সাশ্রয়ের এবং এর দরুণ আরও অনেক সুযোগসুবিধেও থাকে। বিশেষ করে মেয়েরা পিজি-তে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। কারণ, স্বভাববশত মেয়েরা আরও পাঁচজন মেয়ের সঙ্গে থাকতে চায় গল্পগুজব, হইহুল্লোড় কিংবা সুখদুঃখ ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

বলা যায়, পিজি মানেই মেয়েদের কাছে এক অন্য দুনিয়া। এখানে বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন ভাষাভাষি এবং সংস্কৃতির মেয়েরা একসঙ্গে থাকে, তাই বৈচিত্র্যে ভরপুর থাকে পিজি-র আবহ। শুধু রুম শেয়ার-ই নয়, খাবার এমনকী পোশাকআশাকও শেয়ার করে মেয়েরা। সমস্যা কিংবা বিপদেআপদে পরস্পরের পাশেও দাঁড়ায় পিজি-র সদস্যরা। কিন্তু এসব ছাড়াও আরও অনেক সুবিধে-অসুবিধের মুখোমুখি হতে হয় পিজি-র সদস্যদের। তাই যারা পেয়িং গেস্ট থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের কথা ভেবে তুলে ধরা হচ্ছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কিছু গুরুতর সমস্যা বা ভয়

সাধারণ সমস্যার পাশাপাশি পিজি-র ভেতর-বাইরেও কিছু গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে কিংবা সেই সংক্রান্ত ভয় থাকে। যেমন— পিজি-র বাইরে পাড়ার পরিবেশ কেমন, বখাটে ছেলেরা বিরক্ত করে কিনা, ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করে কিনা, শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তা আছে কিনা ইত্যাদি। এ তো গেল বাইরের সমস্যা, পিজি-র ভিতরেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।

একবার একটা ঘটনা ঘটেছিল। পিজি-র মালিকের ছেলে মেয়েদের বাথরুম-এ হিডেন ক্যামেরা রেখে দিয়েছিল। পরে অবশ্য সে ধরাও পড়েছিল। যাইহোক, শুধু মালিকের ছেলে-ই নয়, বাড়ির কাজের লোকও অনেকসময় এই ধরনের অপরাধ করে। ক্যামেরা লাগিয়ে রাখা ছাড়াও, বাথরুম-এ কিংবা বেডরুম-এ উঁকিঝুকি মারা প্রভৃতি অপকর্মও করে অনেকে। সেক্ষেত্রে মেয়েরা সম্মানহানির ভয়ে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকসময় কেয়ারটেকার কিংবা গেটম্যানও এই ধরনের অপরাধ করে।

মেয়েরা আরও একটি কারণে পিজি-তে থাকতে ভয় পায়। আর এই ভয়টা থাকে লেসবিয়ানদের নিয়ে। স্বাভাবিক মেয়েরা লেসবিয়ানদের থেকে শারীরিক ভাবে অত্যাচারিত হওয়ার ভয় করে। অনেক

পিজি-তে এরকম ঘটনা ঘটেছেও। আবার এমন অনেক অপরাধপ্রবণ মানসিকতার মেয়ে আছে, যারা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে খুব খারাপ ভাবে প্রতিশোধ নেয়। যেমন অন্যের পানীয় জলে কিংবা খাবারে কিছু মিশিয়ে দেওয়া, রাতপোশাকে ঘুমিয়ে থাকার সময় ছবি তুলে সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়া ইত্যাদি।

সতর্কতা এবং সমাধান

সমস্যা অনেক থাকে কিন্তু সমাধানের পথও নিজেকে বের করে নিতে হয়। কারণ, উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকরির জন্য অন্য শহরে থাকতেই হবে। আর পকেট পারমিট না করলে আলাদা ভাবে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়। তাই পিজি-তে থাকতেই হবে এবং অবশ্যই নিরাপদে ও শান্তিতে থাকার চেষ্টা করতে হবে। আর এর জন্য কিছু সতর্কতা এবং কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেমন— পিজি নির্বাচন করার আগে ভালো ভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানতে হবে ওই পিজি-র সুনাম আছে কিনা। পিজি-র বাইরের পরিবেশও ঠিকঠাক কিনা সেই বিষয়ে নিজে দেখে নিতে হবে। থাকার আগে পিজি-র অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও একবার কথা বলে মোটামুটি ভাবে বুঝে নিতে হবে তাদের ব্যবহার কেমন।

পিজি-র মালিকের সঙ্গে এইভাবে-ই চুক্তি করে নেওয়া উচিত যে, যদি ভালো না লাগে কিংবা কোনও সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে এক মাসের নোটিশ-এ পিজি ছেড়ে দেবেন কোনওরকম বাড়তি টাকা না দিয়ে। আর জিনিসপত্র যাতে চুরি না হয়ে যায়, তার জন্য নিজের গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী তালাবন্দি করে রাখতে হবে ট্রাভেল ব্যাগে। মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ-এ ব্যাংকিং ট্রানজাকশন-এর সময় পিন বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকবেন, যাতে কেউ দেখে না নেয়। খুব বেশি ব্যক্তিগত তথ্য কাউকে দেবেন না৷

বাথরুম-এ কিংবা ঘরের ভেতর লুকোনো কোনও ক্যামেরা আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নেওয়া উচিত। আর চেষ্টা করতে হবে এক-দু’জনের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব রাখার। কারণ বন্ধুত্ব রাখলে পরস্পরের উপকার করতে পারবেন, মনের জোর বাড়বে এবং সমস্যায় পড়লে একজন অন্যের সঙ্গে মন খুলে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। আর সর্বোপরি, যেখানে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকবেন, ওখানকার লোকাল থানায় লিখিত ভাবে জানিয়ে রাখবেন, এতে বিপদে পড়লে দ্রুত সাহায্য পাবেন।

( সমাপ্ত )

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...