ঝড়-জল-কাদা প্রভৃতির ভয়ে বর্ষাকালে বাইরে বেরনোর প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। আর বাড়িতে বসে থাকা মানেই কম পরিশ্রম এবং কম পরিশ্রম মানেই বদহজম, অ্যাসিডিটি প্রভৃতি সমস্যার সূত্রপাত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল— পেট ভালো না থাকা। আর পেট ভালো না থাকলে ইমিউনিটি পাওয়ার কমে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। তাই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারও যেমন খেতে হবে, ঠিক তেমনই পেটও ভালো রাখতে হবে।
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। অতএব, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বজায় থাকে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা যাতে শুরু না হয়, তার জন্য আগে থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।
ডিম, সোয়া, বেদানা, গ্রিন টি ছাড়াও খাদ্য-তালিকায় আর যা-যা রাখবেন এবং কেন রাখবেন, সেই বিষয়ে জেনে নিন বিস্তারিত।
আঙুর, কমলালেবু এবং মুসম্বি: আঙুর, কমলালেবু, মুসম্বি প্রভৃতি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ক্যানসার উৎপাদনকারী কার্সিনোজেন্স-কে শরীরের বাইরে বের করতে সাহায্য করে এইসব ফল। অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও পর্যাপ্ত মাত্রায় থাকে। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই এইসব ফল রাখুন।
ব্লুবেরি: এই ফল একটু দামি, তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং পলিফিনল পাওয়া যায়। এই ফল খেলে চেহারায় বয়সের ছাপ যেমন কম পড়বে, তেমনই সুগার এবং ক্যানসার আটকাতেও সাহায্য করবে। তাই, প্রতিদিন না পারলেও সপ্তাহে অন্তত দু’-তিন দিন খান ব্লুবেরি।
দই: দইতে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা হজম করাতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে, গেঁটে বাত কিংবা অস্টিওপোরোসিস জাতীয় রোগও আটকায়। সেইসঙ্গে, ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
অঙ্কুরিত ছোলা: প্রতিদিন অঙ্কুরিত ছোলা খেলে নানারকম রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে ক্যানসার আটকাতে অঙ্কুরিত ছোলার জুড়ি নেই। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন অঙ্কুরিত ছোলা খেলে শরীরের এনার্জি বাড়বে।
স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরিতে এক বিশেষ ধরনের ফাইবার আছে, যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, স্ট্রবেরি ব্লাড সুগার লেভেল-কেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট থাকে স্ট্রবেরিতে, যা তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
টম্যাটো এবং তরমুজ: টম্যাটো এবং তরমুজ লাইকোপেন-এ সমৃদ্ধ। আর এই লাইকোপেন ক্যানসারের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। তাছাড়া, এই দুটি ফলে ফাইবারও আছে, যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।
বাদাম: সবরকম বাদামে আছে স্বাস্থ্যবর্ধক ফ্যাট। এছাড়া বাদাম অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট- এও সমৃদ্ধ। তবে বেশি বাদাম খাবেন না, কারণ বাদামে প্রচুর ক্যালোরি থাকে। তাই প্রতিদিন দুটো চিনাবাদাম, দুটো পেস্তাবাদাম, দুটো কাজুবাদাম এবং একটা আখরোট খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে নয়, সারাদিন ধরে মাঝেমধ্যে খান, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে।
সতর্কতা
বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। একান্তই না পারলে, বাইরে থেকে টাটকা খাবারই খান। আর অবশ্যই এমন জায়গায় খান যেখানে রান্নাও হয় স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে আর তা রাখাও হয় পরিষ্কার জায়গায়, যাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না ঘটে। আর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান। জল-ই পারে আপনার পরিপাকক্রিয়া ঠিক রাখতে। বাইরের প্লাস্টিকের বোতলে জল খাওয়ার পরিবর্তে বাড়ি থেকে জল নিয়ে বেরনোর চেষ্টা করুন। এটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। না পারলে, শুধুমাত্র সিল করা মিনারেল ওয়াটারই কিনে খান।
- বেশি তেল-ঝালযুক্ত রেসিপি এড়িয়ে চলুন
- ব্রেকফাস্ট আর ডিনার যেন সময়ের মধ্যেই করা যায়
- কিছু খেলে যদি আপনার শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে মনে হয়, তাহলে অবশ্যই সেই খাবার খাবেন না। যাদের অ্যাবডমিনাল বার্নিং ডিসপেপসিয়া-র সমস্যা রয়েছে, তারা সঙ্গে অ্যান্টাসিড রাখুন
- রাতে হালকা ডিনার করুন। খুব ভোরে বা খুব রাতে খাবার না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে শরীরের স্বাভাবিক বায়োলজিকাল ক্লক পালটে যায়
- বেশি মিষ্টি খাবেন না। অতিরিক্ত সুগার, রিফ্লাক্স সিম্পটমের সৃষ্টি করে। আবার বর্ডারলাইন ডায়াবেটিক রোগীরাও বেশি মিষ্টি খেয়ে বিপদে পড়তে পারেন
- শরীর ও সময়ের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে খেয়ে গেলে সেটা যেমন বিপজ্জনক, আনন্দে গা ভাসিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করা তার থেকেও বেশি ক্ষতিকারক। তাই, অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
(সমাপ্ত)