অতিমারির প্রভাব কাটিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক লয়ে ফিরছে। গত দু’তিন বছর সেভাবে বিদেশে পড়তে যাওয়া প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। যে-অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের বিদেশে হায়ার স্টাডিজ করাবার জন্য আগ্রহী, তাঁরা এই প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করে দিতে পারেন। তবে বিদেশের মাটিতে সন্তানের শিক্ষা গ্রহণের অভিপ্রায় যদি থেকে থাকে— প্রস্তুতি নেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা একান্ত কাম্য।

পুরো রিসার্চ দরকার

বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন, চাহিদা, টিউশন ফি— সব একে অপরের থেকে আলাদা হয়। আপনার সন্তান কোন দেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী সেটা আগে জানতে হবে। প্রতিটা দেশেই পড়াশোনার খরচ, ভর্তির নিয়ম ইত্যাদিতে বিস্তর পার্থক্য থাকে। কোন দেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী সেটা স্থির হলে, কোন বিষয় এবং আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় চয়ন করা প্রয়োজন।

সাধারণত Foreign Education-এর জন্য প্রস্তুতি পর্ব শুরু করা উচিত অন্তত এক বছর আগে থেকে। বেশিরভাগ দেশে সেপ্টেম্বরে ভর্তির সেশন শুরু হয়। যে-বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থী পড়তে চায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ, আবেদন— এগুলি বছর থাকতেই শুরু করতে হবে।

বিস্তারিত সবকিছু তথ্য জোগাড় করতে গুগল-এর উপর পুরো ভরসা করা উচিত হবে না। ভালো হয় আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো বিদ্যার্থীর সঙ্গে সম্ভব হলে যোগাযোগ করে, সব কিছু ভালো করে জেনে নেওয়া। বিদেশে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করার নিয়ম আগে থেকে ভালো করে জেনে রাখা বাঞ্ছনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে খাওয়াদাওয়ার কী সুবিধা রয়েছে, যে দেশে সন্তানকে পাঠাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া কেমন— এই সব তথ্যও জোগাড় রাখা দরকার। অনেক সময় বিশেষ কোনও আবহাওয়ায় সন্তানের কোনওরকম শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। তাই আগে থাকতে সবকিছু জেনে নেওয়া একান্ত দরকার।

পেপার ওয়ার্ক

পাসপোর্ট-এর সঙ্গে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবধানে রাখা উচিত যাতে Foreign Education-এর জন্য ছাড়পত্র দেওয়া আছে। সেই দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য জরুরি প্রুফ প্রথম থেকেই জেনে রাখুন এবং সেটাও যত্ন করে কাগজপত্রের সঙ্গে রাখা বাঞ্ছনীয়। হেল্থ ইনশিয়োরেন্স সংক্রান্ত কাগজপত্রও সঙ্গে রাখা দরকার। বিদেশে যদি তার ভ্যালিডিটি না থাকে তাহলে সেটাকে কীভাবে আপডেট করা যাবে, সেই তথ্যও জোগাড় করা জরুরি। এটিএম কার্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজ্যাকশন-এর জন্য আগে থেকেই অ্যাপ্লাই করতে হবে।

প্রস্তুতি দরকার

ভাষার দক্ষতা জরুরি। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় দেশগুলিতে, যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস-এ ব্যান্ড স্কোর অন্তত ৬ থাকা দরকার। তবে অনেক ইউনির্ভাসিটি এর চেয়ে বেশিও চাইতে পারে। এছাড়া আমেরিকা-সহ অন্যান্য আরও দেশে কোনও কোনও বিষয়ে টোফেল, স্যাট বা ডিআরআই দরকার হতে পারে। জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন-এর মতো ইউরোপীয় দেশে পড়তে গেলে ইংরেজিতে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই দেশের ভাষার দক্ষতাও দরকার পড়ে। জার্মানিতে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ নিতে হলে জার্মান ভাষা জানাটা একান্ত প্রয়োজন।

ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় বাছাই করার পরে, অনলাইনের মাধ্যমে পছন্দের ইউনির্ভাসিটি-তে আবেদন জানাতে হয়। ইংরেজি দক্ষতার ব্যান্ডস্কোর ভর্তি বা বিষয় পাওয়ার ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা গ্রহণ করে। অনেক দেশেই কেন্দ্রীয় ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থাপনার ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে আবেদন করলে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় রেকমেন্ড করা হয়। তবে বেশির ভাগই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন জানাতে হয়। এতদিন যা যা পড়াশোনা করেছে আপনার সন্তান তার সমস্ত নথিপত্র স্ক্যান করে পাঠাতে হতে পারে। একই সঙ্গে সেগুলির ফটোকপি কুরিয়্যারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় পাঠাবারও দরকার পড়তে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত ই-মেইল করে জানানো হয় যে, সেটি গ্রহণ করা হয়েছে নাকি বাতিল হয়ে গেছে। আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলে ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

ব্যাগ গোছানো দরকার

অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, রাশিয়ায় ও কানাডায় শীতকাল— ভারতের উইন্টার সিজন থেকে অনেকটাই আলাদা। সন্তান যদি এইসব কোনও একটা দেশে পড়তে যায়, তাহলে সবকিছু ভালো করে জেনে নিয়ে পোশাক কিনুন। ইলেক্ট্রনিক উপকরণ চার্জ করার অ্যাডাপ্টর ইত্যাদি সম্পর্কেও ভালো করে জেনে নিন কারণ প্রতিটা দেশে সুইচ পয়েন্টস- এর প্যাটার্ন আলাদা আলাদা হয়। যে-দেশে যাচ্ছে সেখানকার ট্র্যাভেল গাইডও সঙ্গে রাখা উচিত।

বিদেশে থাকার প্রস্তুতি

প্রতিটা দেশের ভাষা, সংস্কৃতি সব আলাদা হয় যেগুলো নিয়ে আমাদের দেশের মানুষজন খুব সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যে-দেশে পড়তে যাচ্ছে আপনার সন্তান সেখানকার ভাষা শিখে নিতে পারলে খুব ভালো হয়। সবসময় শুধু ইংরেজি জানলে কাজ হয় না। বিদেশ যাওয়ার আগে নিজের ডাক্তারের কাছ থেকে জরুরি কিছু প্রেসক্রিপশন অবশ্যই করিয়ে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশটির ইতিহাস এবং রাজনীতি সম্পর্কেও সম্ভব হলে কিছুটা জ্ঞান সংগ্রহ করে রাখুন।

বিদেশে পৌঁছোবার পরে

বিদেশে পৌঁছোবার ২৪ ঘন্টার ভিতর নিজের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেওয়া জরুরি। দেশ অনুযায়ী সব জায়গায় নিয়ম আলাদা আলাদা। কিন্তু ভারতীয় দূতাবাসে নিজস্ব রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিলে পরে গিয়ে অনেক সুবিধা হবে। করোনাকালীন গত দুই বছরে এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধচলাকালীন, বিদেশে আসা ছাত্রদের অনেকরকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে, যার কোনও ইনফর্মেশন দূতাবাসগুলির কাছে ছিল না।

পড়াশোনার সঙ্গে রোজগার

এই সংস্কৃতি ভারতে খুব বেশি দেখা না গেলেও বিদেশে এর যথেষ্ট প্রচলন আছে। আপনার সন্তান যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সেই সংস্থা যদি অনুমতি দেয় তাহলে পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অর্থও উপার্জন করা যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ারও সুবিধা হবে। কোনও কোনও দেশের এর জন্য লোকাল পারমিশন নেওয়ার দরকার পড়তে পারে আবার কোথাও কোথাও ওয়ার্ক পারমিট-এর দরকার হয় ৷

ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আইডেন্টিটি কার্ড

বিদেশে পড়তে গেলে এই কার্ড করিয়ে নিলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। লোকাল ট্র্যাভেলিং-এর সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু শপিং সেন্টারেও এই কার্ড দিয়ে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। এটি পাওয়ার জন্য আইএসআইসি-এর ওয়েবসাইট দেখতে হবে। তাদের চাহিদামতো কিছু প্রুফ আপলোড করে জমা দিলে ওখান থেকে অনলাইনেও আপনি কার্ড করিয়ে নিতে পারবেন। কোনও কোনও দেশে এই কার্ড ব্যবহার করে ফুডিং এবং লজিং-এর উপরেও ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে এই সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গে ওখানে থাকার জন্য আপনার সন্তানকে মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। ওখানে গিয়ে প্রথম দিকে সমস্ত কাজ নিজেকেই করতে হবে সুতরাং মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...