জেমস বন্ড খ্যাত অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেগ সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন— তাঁর পেশায় অর্জিত স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানদের হাতে তিনি পুরোপুরি সঁপে দিতে চান না।
প্রতিটি ছবি বাবদ ড্যানিয়েলের উপার্জন কয়েক কোটি ডলার। সাক্ষাৎকারে বলা কথার স্বপক্ষে তিনি জানিয়েছেন, এই বিপুল অর্থরাশি উপার্জনের কষ্ট সন্তানরা বুঝবে না, যদি তা উত্তরাধিকার সূত্রে অনায়াসে তাদের হস্তগত হয়। ক্রেগের দুই সন্তান। একজন ২৯ বছর বয়সি ছাড়াও তাঁর ২ বছরের একটি কন্যা আছে।
কয়েক দশক আগে অ্যান্ড্রু কার্নেগি, তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি যার পরিমাণ ১১ মিলিয়ন ডলার কার্নেগি ফাউন্ডেশন-এর তহবিলে দান করে দেন।
পিতা-মাতার সম্পত্তি সবসময় যে সন্তানরেই প্রাপ্য হবে, এমনটা না-ও ঘটতে পারে। সমাজ-সংসারের যদিও সেটাই প্রত্যাশা থাকে। সন্তান জন্মানোর পর কায়-ক্লেশহীন জীবন অতিবাহিত করে পিতার সচ্ছলতার কারণে। এই জেনারেশনের অধিকাংশ তরুণ তাই ভোগবিলাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
সন্তানকে অঢেল অর্থ হাতে তুলে দিয়ে বিলাসিতার জীবনের বদলে তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে বুদ্ধি দিন, বিচক্ষণতা দিন, পরিশ্রমের মন্ত্র দিন। তাকে আগে যোগ্য হতে দিন আপনার উপার্জিত অর্থের মূল্য বোঝার।
আজকাল সন্তানের ভাবগতিক দেখে অনেকেই তাঁদের সম্পত্তি দান করে যাচ্ছেন কোনও প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, সেই প্রতিষ্ঠানও কি মূল্য দিচ্ছে আপনার পরিশ্রম করে উপার্জন করা অর্থের? তারা আদপে এই বিত্তের কতটা অধিকারী?
সামাজিক কাজের জন্য সচ্ছল কোনও ব্যক্তি হয়তো তাঁর অর্থ দান করলেন কোনও ধর্মীয় বা সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে। আখেরে দেখা যায় সেই অর্থের প্রতি কোনও মমত্ববোধ থাকে না প্রতিষ্ঠানগুলির এবং আর্তের সেবায় না লেগে সে টাকা নয়ছয় হয়।
কিছুদিন আগেই বিসলেরি কোম্পানির মালিক তার প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিলেন কারণ তাঁর একমাত্র কন্যার এই ব্যাবসার প্রতি কোনও টান নেই। সে শিল্পকলায় আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রমেশ চৌহান এই বৃদ্ধাবস্থায় প্রতিষ্ঠান চালাতে অপারগ। ফলত – এই কোম্পানি এখন ক্রয় করেছেন তাঁর চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
এইরকমই ঘটনা ঘটে নানা যৌথ পরিবারের ব্যাবসার ক্ষেত্রেও। পরিবারের মধ্যে বিবাদের জেরে ব্যাবসা ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায় বা বছরের পর বছর বাদানুবাদের মামলা চলে। আবার কেউ যদি মনে করেন তাঁর সারাজীবনের অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চার্চ, মন্দির বা মাদ্রাসায় দিয়ে যাবেন, তাহলেও কিন্তু নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, এই অর্থ সৎকাজে সদ্ব্যবহার হবে।
তাই সন্তানদের কাছে পারম্পরিক ভাবে বিত্ত হস্তান্তরিত হওয়া ছাড়া বিকল্প প্রায় নেই বললেই চলে। এই দানের অর্থের মূল্য কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেওয়া অর্থহীন। মাঝে সরকার এই দাতব্য বিত্তের উপর এস্টেট ডিউটি লাগু করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এই ব্যবস্থা পৃথিবীর কোনও দেশেই কার্যকর হয়নি। ফলে এখন আইনি জটিলতায় না গিয়ে, সন্তান বা সন্ততিরাই উত্তরাধিকার সূত্রে বাবা-মার বিত্তের অধিকারী হবে, ভারতীয় আইনে এই ব্যবস্থাই কায়েম রয়েছে।