আধুনিক সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ির নির্দেশে, স্বামীকে নিয়ে আলাদা থাকতে বাধ্য হয় তরুণী গৃহবধূরা। এ বিষয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি-র যুক্তি, ছেলে ও ছেলের বউয়ের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় এবং তারা যাতে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হয়, তার জন্য নাকি এই ব্যবস্থা। কিন্তু আলাদা থেকেও শান্তি নেই! কারণ, শাশুড়ির উপদ্রব তাতে বন্ধ হয় না। নতুন ঠিকানায় এসেও তিনি শুরু করে দেন মাতব্বরি। সোফা এখান থেকে সরাও, পর্দার রং বদলে দাও, কলিং বেল বাজানো সত্ত্বেও কাজের লোক এসে ঠিক সময়ে দরজা খোলেনি, তাই তাকে তাড়িয়ে দাও ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, তিনি এসে গ্রিন টি-তেও দুধ, চিনি মিশিয়ে দেন জোর করে। তবুও শাশুড়ি-র কোনও কিছুতে প্রতিবাদ করার জো–টি নেই৷ কী বিচিত্র তার মহিমা! এখানেই শেষ নয়, শাশুড়ি-র বক্তব্য, বউমা বাড়িঘর কিংবা স্বামী-সংসার ঠিকমতো সামলাতে পারছে না, তাই সংসার ভাঙছে।
সমাজে চিরকালীন সমস্যার কথা আমরা শুনে আসছি শাশুড়ি-বউমার সম্পর্ককে ঘিরে৷ শাশুড়ি পুত্রবধূ নির্বাচন না করেও, খবরদারি করে পুত্রবধূর উপর। আসলে তিনি খুব সহজে সংসারের উপর থেকে বা তার পুত্রের উপর থেকে কতৃত্ব ছাড়তে চান না৷ তাই বাড়ি আলাদা করলে কী হবে, তার ক্ষমতা জাহির করতে শাশুড়ি পুত্রের সংসারেও খবরদারি করতে শুরু করেন৷
পুরাণে যেমন রাজকার্যে বিঘ্ন ঘটাতেন মুনিঋষিরা, ঠিক তেমনই বর্তমানে শাশুড়িরা এসে সব কাজে বিঘ্ন ঘটান৷পুরাণে রাজারা যুদ্ধ করতে বাধ্য হতেন মুনিঋষিদের আদেশে, আর এখন ভণ্ড সাধুরা শাশুড়ির নির্দেশে বিরক্ত করেন গৃহবধূদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শাশুড়িরা কোনও এক ভণ্ড সাধুর সান্নিধ্যে থাকেন এবং পুত্রবধূকেও সেই পথ অনুসরণ করতে বলেন।
এদিকে বৃহত্তর সমাজচিত্রটিও তাই৷ এখন রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের হাতে চলে গেছে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ভালোমন্দের বিষয়টি। তাই কেউ যদি ভেবে থাকেন সরকার আর্থিক ভাবে তার পাশে দাঁড়িয়েছে, তাহলে তার ধারণা ভুল। রাজ্যপাল দ্বারা অনধিকার চর্চা, সরকারের ভ্রান্ত নীতি, বুলডোজার শাসন কিংবা হিন্দু-মুসলিম বিবাদ, প্রত্যক্ষে অথবা পরোক্ষে সবকিছুর কুপ্রভাব পড়ছে পারিবারিক জীবনে। আপশোশের বিষয় এই যে, সভ্য-শিক্ষিত গৃহবধূরাও ভোটদানের সময় স্বামীর আদেশ কিংবা আদর্শ অনুসরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে রাজ্যপালের প্রতি এমনই অলিখিত নির্দেশ থাকে যে, হয় তুমি আমার নির্দেশ মতো কাজ করো, নয়তো পুতুল হয়ে থাকো। গৃহবধূদের অবস্থাও ঠিক একইরকম। তাই মনে প্রশ্ন জাগে, এভাবেই কি চলতে থাকবে? বিরোধ, বিতর্ক কিংবা আত্মসম্মান পাওয়ার অধিকার কি থাকবে না গৃহবধূদের? গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা করার জন্য বিরোধীপক্ষ বলেও কি কিছু থাকবে না? কবে পাওয়া যাবে এর উত্তর?