আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে মহিলাদের লেখাপড়ায় সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।এতে কি সত্যিই বিস্ময়ের কিছু আছে, কারণ এর পটভূমি তৈরি হয়েছিল বহু আগেই। ইরান, সৌদি আরব, ইউএই, কাতার, ইরাক, লিবিয়ার ক্ষমতায় মধ্যে যদি এটা কুলত, তাহলে বহু আগে ওখানকার মহিলাদেরও লেখাপড়া নিষিদ্ধ হতো। কিন্তু তেল বিক্রির সুবাদে এই দেশগুলিকে পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়েছে, ফলে তারা পুরোপুরি ইসলামিক রাষ্ট্র বলে নিজেদের ঘোষণা করেনি।
আফগানিস্তানের কাছে এখন না আছে তেল, আর না আছে আমেরিকা বা চিনের সঙ্গে যোগ দেওয়ার মতো সৈন্যদল। ফলে সেটা এখন পুরোপুরি ইসলামিক দেশ হয়ে গেছে। যে-কোনও ধর্মের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে মহিলাদের শিক্ষার আলো থেকে দূরে রাখার নীতি। শিক্ষিত নয়, মহিলাদের হয়ে উঠতে হবে সন্তান তৈরির যন্ত্র। পুরুষদের সেবায় নিয়োজিত থাকাই প্রধান কর্তব্য।---- এই মানসিকতা ছিল ক্রিশ্চান দেশে কিন্তু সেখানে প্রিন্টিং প্রেসের অবতারণা হওয়ার ফলে পুনর্জাগরণ হয় এবং জ্ঞান আহরণ ও কারিগরির উন্নতির ঢেউ থেকে মহিলাদের দূরে রাখা সম্ভব হয়নি।
আফগানিস্তানের মানুষের অশিক্ষার কারণে তারা নিজেরা কিছুই করে উঠতে পারেননি। অনুর্বর জমিতে যেটুকু চাষ সম্ভব তা করা, মেষপালন এবং তালিবানি রাজত্বে মানুষ মারা ছাড়া আর কীই বা করার আছে। আধুনিক হাতিয়ার কেনার জন্য কার্পেট তৈরি আর আফিমের চাষ যথেষ্ট। তারা কাঁচারাস্তা, কাঁচাবাড়ি, হাতে বোনা সস্তার বস্ত্রতেই সন্তুষ্ট। ফলে না চিন, না আমেরিকা, না পাকিস্তান— কারও কাছেই এই মানুষগুলোর কোনও প্রয়োজন নেই।
ভুললে চলবে না আজও দেশের নারীরা যে-সংকটে রয়েছেন তার মূলে নারীরাই। মায়েরা মেয়েদের মনে বছরের পর বছর ধরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন পরাধীন হয়ে থাকার মন্ত্র। আজ আর তাই তারা ঘুরে দাঁড়াতেও অক্ষম অবিচারের বিরুদ্ধে।
নবজাগরণ একটা পারস্পরিক ভাবে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জিনিস, যা আফগানিস্তানের রুক্ষমাটিতে কখনও হয়ে ওঠেনি। মেয়েরা রয়ে গেছে অশিক্ষার অন্ধকারে।