পরিবারে মেয়েদের কতটা স্বাধীনতা থাকা উচিত, আর কতটা বশ্যতা স্বীকার করা উচিত— তা রীতিমতো আলোচনার বিষয় হতে পারে।মেয়েদের জীবন জন্মকাল অবধি নানা অনুশাসনের শৃঙ্খলে বাঁধা থাকে৷ ছোটো থেকেই একটি পরিবারে মেয়েদের নিয়ন্ত্ৰণমূলক ও ভয়ের একটা পরিবেশে আবদ্ধ রাখা হয়। বাইরের পৃথিবীটা কেমন বা কতটা উপদ্রুত তার কোনও সঠিক আন্দাজ মেয়েদের দেওয়া হয় না। এর ফলে বৃহত্তর সমাজে যখন মেয়েদের ঘোরাফেরা করতে হয়, তখন তারা মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকে না। ফ্রয়েড বলেন, আমরা স্বাধীনতা আসলে পছন্দ করি না। কারণ স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে কিছু দায়িত্বশীলতাও বহন করতে হয়, যা আমরা সামলাতে পারি না।
এই প্রজন্ম দায়িত্বভার নিতে অস্বীকার করে। এর কারণ তাদের রেসপনসিবিলিটি সেন্সটাই গড়ে ওঠে না। অধিকাংশ ভারতীয় পরিবারে মেয়েটি কী খাবে, কী পরবে, কতদূর পঠনপাঠন করবে, সবই ঠিক করে রাখে তার পরিবার। ছোটো থেকেই তাকে কোনও দায়িত্ব নিতে শেখানো হয় না। বয়স হলে তাকে বিয়ে দিয়ে আরেকটি পরিবারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। এই পর্যায়গুলি পেরোতে গিয়ে সে আর স্বাধীন ভাবে বাঁচার স্বাদটাই পায় না।
ভারতে ধর্মীয় স্থানগুলিতে মহিলাদের ভিড় বেশি। এর কারণ মহিলারা নিজেরা যে-দায়িত্বভার নিতে অক্ষম, তা প্রশ্নাতীত ভাবে ঈশ্বরের কাঁধে তুলে দিতে চায়। তারা এই নাগপাশেই আবদ্ধ থাকতে চায়। মুক্তির কথা কেউ ভাবেও না।
অর্থ উপার্জনকারী মহিলারাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জিত অর্থ স্বামীর হাতে তুলে দেন। এদিকে সংসারের সমস্ত কাজ, গেরস্থালি থেকে বাচ্চা সামালানোর দায়িত্বও মহিলাদের উপরেই বর্তায়। কেউ ভাবে না বধূটি সেই কাজ কতটা নিজের ইচ্ছেয় করে আর কতটা তার বশ্যতা। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও নিজের ইচ্ছে কায়েম করার কোনও স্বাধীনতা তার নেই। এই স্বাধীনতার অভাবেই মেয়েরা ক্রিয়েটিভ কাজে বাধাপ্রাপ্ত, কোনও রিস্ক নিতে তারা দ্বিধান্বিত, বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে অক্ষম।
বশ্যতার এই মানসিকতা মেয়েদের সৃষ্টিশীল হওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। কিন্তু সমাজ তো তৈরি করে মানুষই। সেই সমাজে পুরুষদের তৈরি করা অনুশাসনও যেমন আছে, তেমনি মহিলারাও নিজেদের শৃঙ্খলা ভেঙে বেরোতে চান না। একসময় এই নতিস্বীকারের মানসিকতাই তাকে আরও বেশি বেড়ি পরিয়ে দেয়। আইন, আদালত, সমাজ সর্বক্ষেত্রেই তাদের পরাধীনতায় আটকা পড়ে যেতে হয়।