আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আদানি গ্রুপ শেয়ার দরের ক্ষেত্রে কারচুপি করেছে। শেয়ারবাজারে আদানির থাকা ৭টি লিস্টেড কোম্পানিরই ৮৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আদানি গ্রুপ নাকি বহু বছর ধরেই স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত। ফলে গৌতম আদানি যতই কোর্ট কেসের হুমকি দেন, হু হু করে নেমেছে তাঁর শেয়ার দর। বাজারে যখন শেয়ারের দাম ২৭৬২ টাকা তখন সেই শেয়ার আদানি বিক্রি করেছেন ৩১১৭-৩২৭৬ টাকায়।
সাধারণত একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোম্পানির ওঠা-পড়ায় দেশের উপর তার প্রভাব থাকার কথা নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটেছে উলটো। কারণ এই আদানি গ্রুপেই সাধারণ মানুষের টাকা থেকে শুরু করে, লাইফ ইনশিয়োরেন্স কর্পোরেশন, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতির টাকাও লগ্নি করা রয়েছে। ঋণ দেওয়ার সময় ব্যাংকগুলি সাধারণত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেই এই টাকা দেন। আর এক্ষেত্রে সবমিলিয়ে দেশের প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে আছে আদানির শেয়ারে।
সাধারণ মানুষ তার কষ্টার্জিত আয়ের বড়ো অংশ হয় ২৬টি ব্যাংকের কোনওটায় কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড-এ বিনিয়োগ করেছেন। এই ভরসাতেই তাদের বার্ধক্য, মেয়ের বিয়ে কিংবা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ সামলানোর কথা ভেবেছিলেন। সেই সঙ্গে রয়েছে অচেনা কোনও অসুখে সংক্রমিত হওয়ার ভয়। যে-সময় আদানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ছিল, বুদ্ধিমান মানুষরা চড়া দামে শেয়ার বিক্রি করে, বাড়ি, গাড়ি, অলংকার বানিয়ে নিয়েছেন।
ধনীরা কোনওদিনই এসবে প্রভাবিত হন না। প্রভাব পড়ে সাধারণ ঘরগৃহস্থ মানুষের উপর, যাদের মাসিক আয়ের থেকে ১০-২০ হাজার বা ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা এইসব কোম্পানি শেয়ারে বিনিয়োগ হয়ে গিয়েছে।
এছাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সেইসব প্রোজেক্টগুলির, যেগুলি খোদ নরেন্দ্র মোদি আদানির হাতে ন্যস্ত করেছিলেন ২০১৪ সালে। কত এয়ারপোর্ট, বন্দর, রেলস্টেশন তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। হিল্ডনবার্গ রিপোর্ট তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এবার বিশ্বের অজস্র খবরের কাগজ, ও বিজনেস এক্সারপার্টরা এই অনুসন্ধানে লেগে পড়েছেন, যে গোটা বিশ্বের কতগুলি দেশের আদানিরা নিজেদের ব্যাবসা প্রসারিত করে রেখেছেন। এই বিপুল অর্থসমূহ ইডির চোখ পড়বে না এই ভরসাতেই তাদের এই বাণিজ্যের জাল ছড়িয়েছিল।