আমার কথা শেষ হতেই রতন বলে উঠল – ওর উপরে উঠে সারা দুনিয়া দেখা যায় ?
আমি হেসে বললাম— সারা দুনিয়া নয় সারা শিকাগো শহর দেখা যায়। আমরা যাব বিকালে টাওয়ারের উপর থেকে সারা শিকাগো শহর দেখতে। রতন সরকার বাচ্চাদের মতো আনন্দে নেচে উঠল, ‘বাহ দারুণ মজা হবে দাদা৷’
‘ট্রাভেল গাইডে’ পড়েছিলাম, উইলিস টাওয়ারের আগের নাম ছিল সিয়ার্স টাওয়ার কেন-না শুরু থেকেই এই অট্টালিকার নীচের অর্ধেক অংশের ভাড়াটে ছিল পৃথিবীর বিখ্যাত খুচরো ব্যবসায়ী কোম্পানি ‘সিয়ার্স”। এটা ছিল সিয়ার্স কোম্পানির ‘হেড- অফিস’। এখনও লোকমুখে বাড়িটির নাম ‘সিয়ার্স টাওয়ার’ই বলে প্রচলিত যদিও ২০০৯ সালে এর নাম পরিবর্তন হল, উইলিস টাওয়ার নামে। অবশ্য এর পিছনে ব্যবসায়িক লেনদেন নিশ্চয়ই আছে। শুধু নাম পরিবর্তনের জন্যেই লক্ষ লক্ষ ডলার হাত পরিবর্তন হয় এখানে।
রতন মনোযোগ সহকারে উইলিস টাওয়ারের ফটো তুলে আমার দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা, উইলিসের পিছনে আর একটা উঁচু কালো রঙের বাড়ি দ্যাখা যায়, হেইটা কার?’
আমি হেসে বলি, “তোমার বা আমার নয়। ওটাও একটা নামকরা বাড়ি, প্রায় উইলিসের কাছাকাছি উঁচু। ওটার নাম হল, ‘জন হ্যানকক টাওয়ার’, একশো তলা ১১২৮ ফুট উঁচু বাড়ি, তৈরি হয়েছিল ১৯৬৯ সালে।
তারপর দুজনে মিলে টুক-টাক কিছু খেয়ে নিয়ে ‘নেভি পিয়ার’-এ ঘুরলাম। পর্যটককে ভোলাবার জন্য সব ব্যবস্থাই করা আছে এখানে৷ পুরো ‘নেভি পিয়ার’টা যেন একটা চড়কের মেলা— ভেঁপু বাজছে, ব্যান্ড বাজছে, নাচ-গান চলছে এখানে সেখানে।
তারপর লেকের উঁচু পাড় ধরে হাঁটতে লাগলাম। অতি সুন্দর এই রাস্তাটা। শহরের যত সব নামিদামি দোকান আর স্টোর এই পাড়ায়। প্রায় এক মাইল দীর্ঘ এ রাস্তাটার একটা সুন্দর নাম দিয়েছে— ম্যাগনিফিসেন্ট মাইল। পুরোনো যুগের কতকগুলো সুন্দর সুন্দর বাড়ি দেখে দুজনই অনেক ফটো তুললাম। এত সুন্দর বাড়ি আগে আমি কখনও দেখিনি।
দুপুরে হোটেলের রেস্টুরেন্টে কিছু খাবার পর বেরিয়ে পড়লাম উইলিস টাওয়ারের উদ্দেশ্যে। টিকিট কেটে দুরন্ত গতির ‘লিফট’ চড়ে পৌঁছে গেলাম উইলিস টাওয়ারের ‘অবজার্ভেশন-ডেক’-এ। দেড় মিনিট সময় লেগেছিল এত উপরে উঠতে। বাইরে হাওয়া না থাকলে নাকি এক মিনিটেই পৌঁছে যায়। শক্ত লোহার জাল দিয়ে ঘেরা আছে, তা নাহলে এত উঁচুতে দুরন্ত হাওয়ার বেগে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা অতুৎসাহী কোনও পর্যটকের সাংঘাতিক দুর্ঘটনা হবার সম্ভাবনা থাকে।
রতন ভয়ে ভয়ে সারাক্ষণ আমার হাত ধরে রেখেছিল। ডেক থেকে একদিকে কংক্রিটের জঙ্গলে ভরা শিকাগো শহর আর অন্যদিকে যেন সীমাহীন মিশিগান লেক, নীল আকাশ আর দূর দিগন্ত যেন একাকার হয়ে গেছে। কী অপরূপ সে দৃশ্য। ওখান থেকেই দেখলাম অপরূপ সূর্যাস্ত। সারা দিগন্ত সোনালি আভায় ছেয়ে গিয়ে লাল বলটি যেন টুপ করে মিশিগানে ডুব দিল।
সহায়ক তথ্য :
কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু— এই সব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি বা নিয়-ইয়র্ক হয়ে শিকাগোর দুটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ‘ও-হেরে’ বা ‘মিড-ওয়ে’তে যাওয়া যায়। এয়ার ইন্ডিয়া বা আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট দিল্লি থেকে সরাসরি শিকাগো পৌঁছোয় ১৭ ঘণ্টার মধ্যে। বিমানবন্দর থেকে ৪০-৫০ মিনিটে ট্যাক্সি করে মিশিগান লেকের ধারে পৌঁছোনো যায়।