অনেকক্ষণ একনাগাড়ে হাঁটার পর আমরা সামনে একটা খালি বেঞ্চ দেখে জলের ধার ঘেঁষে বসে পড়লাম।
রতন আরাম করে বসে তার ব্যাগ থেকে হাওয়াই জাহাজে দেওয়া দুটো চকোলেট বের করে আমাকে একটা দিয়ে অন্যটা নিজে মুখে পুরে জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা দাদা, এই লেকে সাঁতার কাটা যায়?”
আমি মাথা নেড়ে জানালাম — সাধারণ ভাবে নয়, তবে বিশেষ ‘পারমিশন' নিয়ে অবশ্য সাঁতার দেওয়া চলে। সাঁতার দেওয়া মানা করা আছে কারণ জলের নীচে বিপজ্জনক ‘চোরা' স্রোত আছে, তুমি বুঝতেই পারবে না কখন ওই স্রোত তোমাকে গভীর জলে টেনে নিয়ে যাবে।
ভয় পেয়ে রতন বলে, 'আমি জলে পা-ও দেব না দাদা।”
—পা দিও না কিন্তু জল এত পরিষ্কার যে খেতেও পার। তবে খুব ঠান্ডা, বললাম আমি।
শীতকালে তাহলে জলে হাতই দেওয়া যায় না? জিজ্ঞেস করল রতন।
আমি হেসে বললাম, শীতকালে জল কোথায় থাকে? বেশিরভাগই জমে বরফ হয়ে যায়। পুরো লেকটা অবশ্য জমে কঠিন বরফের চাঙ হয়ে যায় না। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত এই লেকের প্রায় ৯৫ শতক অংশ জমে কঠিন বরফ হয়ে যায়। কোনও কোনও বছরে আবার পুরোটাই জমে যায়।
সুযোগ পেয়ে রতন বলে উঠল, “তখন এলে আমরা মিশিগানের উপর হেঁটে বেড়াতে পারব না?
আমি ধীরে ধীরে মাথা নাড়লাম।
–আচ্ছা দাদা, দেখতে তো সমুদ্রের মতো। তাহলে এখানে সমুদ্রের মতো জাহাজডুবিও হয়? জিজ্ঞাসা করে রতন। —হ্যাঁ, অনেক জাহাজডুবির ঘটনা হয়েছে এই লেকে। এই বিশাল বিশাল লেকগুলিতে মোট ৬ হাজার জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনার মধ্যে প্রায় ১৫০০টি ঘটনাই হয়েছে এই মিশিগানে। তাছাড়া লেকের কিছু অংশে নাকি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল-এর মতো রহস্যজনক ভাবে জাহাজ বা বিমান হারিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়।
ওর দিকে তাকালাম। রতন ভয়ে সরে এসে আমার গা ঘেঁষে বসল। আমি আরও বললাম, 'সত্যি মিথ্যে জানি না ভাই, যা বইতে পড়েছি আর কী।”