ক্রপ টপগুলি বেশ ট্রেন্ডি এবং যথেষ্ট আরামদায়ক। শুধু তাই নয়, এগুলি পরলে স্মার্ট এবং সেক্সিও দেখায়। তবে অনেক বাড়িতেই মেয়েদের ক্রপ টপ পরা নিষিদ্ধ। যারা ক্রপ টপ পরার বিরোধিতা করেন তাদের বক্তব্য হল যে ক্রপ টপ অশ্লীল। জাগৃতি রাই এই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘আমার বয়স ২০ বছর। একদিন আমি ক্রপ টপ এবং জিনস পরে সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। তখন আমার বাবা এসে রাগান্বিত ভাবে আমাকে বললেন, ‘জাগৃতি, তুমি কী ধরনের পোশাক পরেছ? এখুনি গিয়ে তোমার পোশাক চেঞ্জ করো। তোমার কী ধরনের পোশাক পরা উচিত সে ব্যাপারে কি তোমার নিজের কোনও সেন্স নেই? এখন তুমি বড়ো হয়ে গেছ। মনে হচ্ছে বাইরে গিয়ে তোমার হাবভাব খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে, তবেই তুমি বুঝতে পারবে। বাবাকে এত রেগে যেতে দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে আমি জামাকাপড় চেঞ্জ করেছি ঠিকই কিন্তু আমি আমার ঘর থেকে আর বের হইনি।’ জাগৃতির বাবা সুরেন্দ্র রায় জাগৃতির Modern Dress পরার জন্য তার উপর রেগে গিয়েছিলেন। এরকম বহু মানুষ আছেন যারা মেয়েদের সংক্ষিপ্ত পোশাক পরার কঠোর বিরোধী।

Modern Dress পরাটা কি নির্লজ্জতার লক্ষণ?

আধুনিক পোশাক পরা কি নির্লজ্জতার লক্ষণ? এই সম্পর্কে জাগৃতির মত হল, ক্রপ টপ পরা নির্লজ্জতা নয়। এটা ঠিক ব্লাউজের মতোই, শুধু পার্থক্য হল ব্লাউজ শাড়ির সাথে পরা হয় আর ক্রপ টপ জিনস, স্কার্ট, শর্টস, পালাজো দিয়ে পরিধান করা হয়।

নিজের বাড়িতেই মেয়েরা আসম্মানের শিকার কীভাবে হয় তার উদাহরণ দিয়ে গাজিয়াবাদের বাসিন্দা দীপিকা রাওয়াত জানান, বাড়িতে যখনই তিনি দেরি করে ঘুম থেকে উঠতেন, মা বলতেন যে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে   শাশুড়ি দুদিনের মধ্যে পুত্রবধূকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। তার মনে হয় যে তিনিই একমাত্র মেয়ে নন, দেশের বেশিরভাগ মেয়েদেরই এই ধরনের মতামত নিজের মা-বাবার কাছেই শুনতে হয়। দেরি করে ঘুম থেকে না ওঠার নিয়ম কি শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? কেন ছেলেদের এই নিয়ম থেকে বাদ দেওয়া হয়? ছেলেদের দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা কি এই সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য? এই ধরনের নিয়মকানুন শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য তৈরি করা হয় কারণ সমাজ কখনওই চায় না যে মেয়েরা তাদের হাতের মুঠো  থেকে ছিটকে যাক, তারা মেয়েদের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে চায়।

আমাদের সমাজ মেয়েদের জন্য অনেক নিয়ম তৈরি করেছে। এর মধ্যে একটি হল মেয়েদের পা ছড়িয়ে বসে থাকাকে খারাপ চোখে দেখা। যদি কোনও মেয়ে তার পা প্রসারিত করে বসে থাকে তবে এটিও একটি যৌন প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। যারা মেয়েদের পা ছড়িয়ে বসে থাকাকে অশোভন বলে অভিহিত করেন তারা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের মেয়েরা ভালো বাড়ির মেয়ে নয়। তাদের মধ্যে সংস্কার ও মূল্যবোধের অভাব রয়েছে। মেয়েরা এ ধরনের আচরণ করে ছেলেদের আকৃষ্ট করার জন্য।

আচার-অনুষ্ঠান বা বিধিনিষেধ

সমাজ মেয়েদের শোষণের জন্য বিভিন্ন নিয়ম নির্ধারণ করেছে শুধুমাত্র কোনও উপায়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা নিয়ে। এর জন্য পর্যায়ক্রমে তাদের নানা ভাবে বাধা দেওয়া, তাদের উপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা, অপমান করা, তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য মেয়েদের মনে ক্রোধ এবং ঘৃণা তৈরি করা, ইত্যদি কোনও কিছু করতেই সমাজ পিছপা হয় না। এই ধরনের মেয়েরা খিটখিটে হয়ে ওঠে, ছোটো ছোটো জিনিসেও তারা রেগে ওঠে। এরা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। এমনকী তারা তাদের সাথে দেখা করাও বন্ধ করে দেয় কারণ তাদের দ্বারা নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অপমানের তিক্ত স্মৃতি সেই সব মেয়েরা বিস্মৃত হতে পারে না। একটা কথা বুঝতে হবে, যদি আপনি চান আপনাকে সকলে সম্মান করুক তবে আপনাকেও সকলকে সম্মান দিতে হবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...