বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নিয়ে শুনানি শুরু করেছে সুপ্রিম কোর্ট। হিন্দু ধর্মপ্রচারকরা মহারাষ্ট্রের অনেক জায়গায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক নিয়ে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন এবং যারা ধর্মীয় রাজনীতি করছেন, তারা এই অপব্যাখ্যার নেতিবাচক প্রয়োগ করছেন। আর ধর্মের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে যারা মুখ খুলছেন, তাদেরকে দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। ভুলটা ধরিয়ে দিলেও আত্মশুদ্ধির কোনও ইচ্ছেই নেই কারওর। এ বিষয়ে সরকারও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
এই বিষাক্ত রাজনীতির মূলে রয়েছে গভীর চক্রান্ত। অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করে ভোট ব্যাংক মজবুত করার এ এক অদ্ভুত কৌশল। জনগণকে ভুল বুঝিয়ে টাকা আদায়ও চলছে কিছু জায়গায়। নিজের ধর্ম নিয়ে হইচই না করলে মুঘল রাজ ফিরে আসবে, এমনও বোঝানো হচ্ছে হিন্দু ধর্মের মানুষদের।
আসলে বিদ্বেষমূলক ধর্মীয় বক্তব্য এখন আর শুধু চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সভা-সমিতি থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মধ্যে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে অশালীন কিছু শব্দ। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হল এই যে, এক কান থেকে আর এক কানে যেতে যেতে একসময় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে যুক্ত হচ্ছে আরও রং। ফলে মূল বক্তব্য আরও বদলে গিয়ে এক বিকৃত রূপ নিচ্ছে। আর সেই বিকৃত বাক্যগুলোই প্রয়োগ করা হচ্ছে সর্বত্র। সমস্ত অশালীন শব্দ পারিবারিক কলহেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাধারণ ঝগড়ার মধ্যেও অনেক সময় স্বামী তার স্ত্রী-র দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন অশালীন শব্দ। সুযোগ পেলেই যে যখন খুশি টেনে নিয়ে আসছে ধর্মকে। এর ফলে ভিন্ন ধর্মের কাউকে ভালোবেসে বিয়ে করতে গেলে অনেক সময় তাদের মৃত্যুদণ্ডও দিচ্ছে সমাজ কিংবা তার পরিবারের লোকেরা।
অনেক সময় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর মূলেও থাকছে ধর্ম। স্ত্রীর ধর্মীয় আচার ব্যবহারে স্বামী সন্তুষ্ট। না হলেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয়ে যায় ঝগড়া বিবাদ। এই ভাবেই প্রত্যেকের মনের মধ্যে অসন্তোষ ঢুকিয়ে দিয়ে ফায়দা তুলছেন ধর্মান্ধরা। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-ভাই, ভাই-বোন, মা-ছেলে, মা-মেয়ে কিংবা বাবা-ছেলের মধ্যে বিবাদও চলছে আসলে ওই মানসিক অসন্তোষের কারণে। আর এই বিবাদ এক সময় পরিবার থেকে গড়িয়ে চলে যায় সমাজে এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে।
আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, নিজের ধর্ম নিয়ে যদি এতই অহংকার, তাহলে সেই ধর্মের ইতিহাস কিংবা মহাকাব্যে এত ঝগড়া কিংবা হিংসা-বিদ্বেষের হদিশ পাওয়া যায় কেন? সিংহাসনের জন্য কেন বনবাসে যেতে হয়, সতীত্ব প্রমাণ করতে কেন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়, একই ধর্মের মধ্যেই বা কেন উঁচুনীচু জাতিভেদ রয়েছে?
আসলে বিবাদ করে অসভ্য লোকেরা। প্রকৃত ধর্ম তো মনুষত্ব। তাই বলা যায়, ধর্মের নামে চলছে ভণ্ড ধার্মিকদের মিথ্যাচার। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে রয়েছে গভীর চক্রান্ত। ধর্মের অপপ্রয়োগ যারা করে চলেছেন, তারা আসলে ঘৃণ্য অপরাধী, তারা ক্ষমার অযোগ্য। আর যারা ধর্মীয় গ্রন্থের অর্থকে অপপ্রয়োগ করে স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছেন, তারাও নিন্দার পাত্র।
সভা সমিতি থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া, সর্বত্র যেভাবে ধর্মীয় রাজনীতির প্রচার করা হচ্ছে– তা বেশ উদ্বেগজনক। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল এই যে, এই ধর্মীয় আবেগ আজ যেন লাগামছাড়া। তাই প্রশ্ন জাগে,ধর্ম নিয়ে এই রাজনীতি আদৌ বন্ধ হবে কি?