গণধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত গাড়ির ড্রাইভার কিষাণ লাল এবং ওই গাড়ির অন্য দুই আরোহী সুরেশ আর জ্ঞানচাঁদ তিন মাস পরে গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোর্টে সাক্ষ্য প্রমাণ ঠিকমতো দাখিল করতে না পারায় ধর্ষণকারীরা মাত্র তিন বছর জেলে থাকার পর জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসে।
ওদিকে কোর্টে কেস চলাকালীন বাবা-মা এবং আত্মীয় স্বজনের চাপে পড়ে লোকনিন্দার ভয়ে প্রতীক প্রমিলাকে ডিভোর্স দিতে একরকম বাধ্য হন। পশ্চিম দিল্লির বাঙালিপাড়া মহাবীর এনক্লেভে দু’কামরার ছোটো একটি ফ্ল্যাট কিনে সেখানে প্রমিলা এবং শ্বেতাকে স্থানান্তরিত করে দিয়ে স্বামীর দায়িত্ব পালন করেন প্রতীক। সেদিন থেকে মা-মেয়ের খোরপোশ বাবদ মাসে দশ হাজার টাকা প্রমিলার অ্যাকাউন্টে জমা করে যাচ্ছেন প্রতীক আর বাবা মাকে না জানিয়ে মাঝেমধ্যে এসে প্রাক্তন স্ত্রী এবং কন্যার সঙ্গে দেখা করে যান উনি। এই ঘটনার পর আগের স্কুলের চাকরি চলে গেলে প্রতীকের চেষ্টায় জনকপুরীর একটা প্রাইভেট স্কুলে জুনিয়র টিচারের চাকরি পেয়েছেন প্রমিলা।
শ্বেতাকে নিয়ে নতুন ভাবে যে-জীবন শুরু করলেন প্রমিলা তাতে কোনও আনন্দ ছিল না। পুরোনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিতরা এখন তাঁকে এড়িয়ে চলেন নয়তো এতটাই সমবেদনা দেখান যে প্রমিলা তা সহ্য করতে না পেরে ওদের থেকে দূরে সরে আসেন। যে-প্রমিলা একসময় কথা বলতে, আড্ডা মারতে ভালোবাসতেন তিনি এখন অপ্রয়োজনে মুখ খোলেন না। ওসিডি সনাক্ত হওয়ার পর প্রথমদিকে পুলিশের সহায়তায় কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রমিলা, পরে প্রতীকের অনুরোধে সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারেও কয়েকবার ঘুরে এসেছেন উনি। ওঁরা সবাই প্রমিলাকে একই অ্যাডভাইস দিয়েছেন— ফরগেট ইওর পাস্ট অ্যান্ড স্টার্ট লাইফ অ্যাফ্রেশ। কিন্তু যে ঘটনা ওঁর পুরো জীবনটা তছনছ করে দিল প্রমিলা কী করে তাকে ভুলে যাবেন ?
ঘটনার পাঁচ বছর পরেও মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে জেগে উঠেছেন। গা ঘিন ঘিন করা অসহ্য এক ক্লেদাক্ত অনুভূতি নিয়ে প্রমিলা ছুটে যেতেন বাথরুমে বালতি বালতি জল ঢেলে ওঁর অপবিত্র শরীরকে পবিত্র, নির্মল করবার দুরাশায়! কাউন্সেলিং-এর সময় ওর একবার মনে হয়েছিল সাইকিয়াট্রিস্টকে বলেন, ‘আপনাদের জীবনে এরকম ঘটনা কখনও ঘটেনি তাই আপনারা সবাই আমাকে অতীত ভুলে যাবার উপদেশ দিতে পারছেন।’
তবু শ্বেতা বড়ো হয়ে বাড়ির কাছের সরকারি স্কুলে যেতে শুরু করলে প্রমিলা মেয়ের কথা ভেবেই নিজের জীবনটা আবার গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করেছিলেন। তবে মেয়েকে সন্ধ্যার আগে ঘরে ঢোকানোর ব্যাপারে উনি কোনও সমঝোতা করতে রাজি ছিলেন না। সন্ধের পরে বাইরে থাকার নিষেধ থাকায় স্কুলের বন্ধুদের জন্মদিনের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে শ্বেতা মায়ের নির্দেশ মেনে দুপুরবেলাই গিফ্ট হাতে নিয়ে হাজির হয়ে যেত বন্ধুদের বাড়িতে। প্রথমদিকে অনেকে অবাক হলেও একসময় ওরা শ্বেতার মার সতর্ক, সন্দিগ্ধ ব্যবহারকে মেনে নিয়েছিল।
(চলবে)