মাঝরাতে উঠে মাকে বালতি বালতি জল ঢেলে প্রথমবার স্নান করতে দেখেছিল শ্বেতা পাঁচ বছর বয়সে। কখনও কখনও দিনে তিনবারও স্নান করতেন প্রমিলা। শ্বেতা জিজ্ঞেস করলে উনি বলতেন, “ওঁর গায়ে অনেক নোংরা লেগে আছে, ওঁর গা থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে, তাই ওঁকে বারবার স্নান করতে হচ্ছে।'
শ্বেতা একবার ওর মার গা শুঁকে বলেছিল, 'কই মা তোমার গায়ে তো কোনও খারাপ গন্ধ নেই।' —আছে, তোর নাক এখনও তৈরি হয়নি, আরেকটু বড়ো হ তখন পাবি।
কিন্তু শ্বেতা বড়ো হয়েও মার গায়ে কোনওদিন দুর্গন্ধ পায়নি। শেষে দু'দুবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ঘুরে এসে প্রমিলার নৈশ স্নানের বাতিকটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ক্লাস এইটে উঠে শ্বেতা রজস্বলা হলে প্রমিলা মেয়েকে একরাতে সংক্ষেপে প্রতীকের সঙ্গে কী কারণে ওর ছাড়াছাড়ি হল কিংবা পুরোপুরি ছাড়াছাড়ি হল না সেটা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
ওর বাবা যে কাপুরুষ, লোকনিন্দার ভয়েই মাকে ত্যাগ করেছেন— এটা শ্বেতার মনে গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল। যদিও প্রমিলা ব্যাপারটা একরকম মেনেই নিয়েছিলেন।
প্রমিলা শ্বশুরবাড়িতে থাকলে ওঁর ননদের বিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না— এই ছেঁদো যুক্তিটা যে প্রতীক মেনে নিয়েছিলেন, সেজন্য শ্বেতা ওর বাবাকে কোনওদিন ক্ষমা করতে পারবে না। তাই পুরো ব্যাপারটা মার কাছ থেকে শোনার পর প্রতীক ওর মার সঙ্গে দেখা করতে এলে শ্বেতা অন্য ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকত। ওর বাবা অনেক ডাকাডাকি করলেও ও বাবার সামনে আসত না।
প্রমিলা ওকে বোঝাবার চেষ্টা করতেন যে প্রতীক ওকে ডিভোর্স দিলেও দ্বিতীয়বার যে উনি আর বিয়ে করেননি এবং ওদের খোরপোশ, এমনকী মেয়ের পড়াশোনার খরচ ঠিকভাবেই দিয়ে যাচ্ছেন এটাই বা কম কীসের?
এ নিয়ে মা-মেয়েতে কথা কাটাকাটি হয়েছে বেশ কয়েকবার কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমিলা কান্নাকাটি শুরু করলে শ্বেতাকে চুপ করে যেতে হয়েছে। কিন্তু শ্বেতা কলেজে যাবে শোনার পর থেকেই প্রমিলা আবার তাঁর পুরোনো পাগলামি শুরু করলেন। কান্নাকাটি, চ্যাঁচামেচি এমনকী মেয়ের পায়ে পড়তে বাকি রাখলেন না প্রমিলা।