রান্নার জন্য আপনি কী তেল ব্যবহার করছেন, তার উপরও অনেকটাই নির্ভর করে আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের হার্ট-এর স্বাস্থ্যের ভালোমন্দের বিষয়টি। তাই জেনে নিন, কোন কুকিং অয়েল ব্যবহার করলে পরিবারের সকলের হার্ট-কে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে পারবেন।
আমরা যখন ভোজ্য তেল কিনতে যাই, তখন প্রথমে দেখি দাম। তারপর যে-ব্র্যান্ড-এর তেলের দাম সব থেকে কম, সেই তেল-ই কিনে নিয়ে যাই। তখন আমরা এটা ভাবি না, যে-তেল কেনা হল তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, নাকি খারাপ। অথচ এটাই সত্যি যে, তেলের ভালোমন্দের সঙ্গে যুক্ত আমাদের হার্ট-এর স্বাস্থ্য। তাই ভোজ্য তেল কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, রান্না করা খাবার সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি, ব্যবহৃৎ তেল যেন হার্ট-এর ক্ষতি না করে।
স্যাচুরেটেড–আনস্যাচুরেটেড অয়েল
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল-এর এক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, যদি হার্ট ভালো রাখতে হয়, তাহলে আনস্যাচুরেটেড অয়েল অর্থাৎ গুড ফ্যাট, যাকে পোলো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট অথবা মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলা হয়— তা ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ রুম টেম্পারেচার-এ এই তেল তরল থাকে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, তা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো বলা হয়। এই ফ্যাট হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক-এর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং ট্রাইগ্লিসারাইডস লেভেল-কেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। শুধু তাই নয়, শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরল-এর মাত্রা কমিয়ে গুড কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেইসঙ্গে, ব্লাড প্রেসার আয়ত্তে রাখে এবং আর্টারিজ-কে ঠিক রাখে। আর স্যাচুরেটেড অয়েল ফ্যাটস বাড়িয়ে দেয়, কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের ক্ষতি করে।
স্যাচুরেটেড অয়েল সাধারণ রুম টেম্পারেচার-এ সলিড হয়ে যায়। তাই আর্টিফিশিয়াল ট্রান্স ফ্যাটস থেকে দূরে থাকা চাই। কারণ, এই ধরনের তেল হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং ওবেসিটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
তথ্যনির্ভর বিষয়
প্রতিদিন যদি আপনার ২০০০ ক্যালোরি-র প্রয়োজন হয়, তাহলে এর মধ্যে ফ্যাট যেন ২০-২৫ শতাংশের বেশি না হয় এবং তা যেন আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হয়। আর যদি স্যাচুরেটেড অয়েল হয়, তাহলে তাতে যেন ৫-৬ শতাংশের বেশি ফ্যাট না থাকে।
কোন কুকিং অয়েল হার্ট–এর জন্য ভালো?
রান্নায় অনেকরকম তেল অনেকে ব্যবহার করেন কিন্তু সেইসব তেলের গুণাগুণ সম্পর্কে তেমন বিশেষ ধারণা থাকে না সাধারণ মানুষের। তাই, এখানে এমন ৫টি কুকিং অয়েল সম্পর্কে জানানো হচ্ছে, যা আমাদের হার্ট-কে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
অলিভ অয়েল : বিশেষজ্ঞ এবং নিউট্রিশনিস্ট-এর পরামর্শ অনুযায়ী, অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য আদর্শ। তাই নির্দ্বিধায় আপনি এই তেলকে আপনার রান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আসলে এই তেল মোনোস্যাচুরেটেড হয় এবং ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত হয়— তাই ক্যান্সার, হৃদরোগ প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে। এরমধ্যে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ব্যাড কোলেস্টেরল আটকায় এবং অনেকরকম রোগ প্রতিরোধ করে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্ট্রোক থেকে মৃত্যু হয়। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের উপর সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যারা দীর্ঘদিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করছেন, তাদের স্ট্রোক-এর সম্ভাবনা কমে গেছে।
অলিভ অয়েল ব্লাড প্রেসার এবং খারাপ কোলেস্টেরল-এর মাত্রাকে আয়ত্তে রাখার পাশাপাশি, ব্লাড ভেসেল-এর কার্যকারিতা ঠিক রেখে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া অলিভ অয়েল ক্যান্সাররোধক। তাই রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো।
(ক্রমশ…)