মাথেরান পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত ছোট্ট একটি শৈল শহর। সমগ্র ভারতে এটাই সবচেয়ে ছোটো হিল স্টেশন। পুরো মাথেরান জুড়েই জঙ্গল, মাঝে মাঝে ব্রিটিশ স্থাপত্য-রীতিতে তৈরি বাংলো এবং হোটেল। গাড়ি প্রবেশের অনুমতি নেই মাথেরানে, গাড়ি রাখতে হয় ছোট্ট শহরের বাইরে। ভারত তথা সমগ্র এশিয়া মহাদেশে মাথেরানের তুলনা নেই গাড়ি পার্কিং-এর ব্যাপারে। তাই আজও প্রায় দূষণমুক্ত, অনুপম এই শৈলশহর।
এবার ফেরার পালা। দেড়টা নাগাদ লাঞ্চ শেষ করে বিল মিটিয়ে আমরা বিদায় নিলাম। অপেক্ষারত মালবাহক মাথায় লাগেজ তুলে নিল। আমরা চারজন মালবাহকের সঙ্গে গল্প করতে করতে উতরাই পথে চলতে লাগলাম। নাম জিজ্ঞেস করায় সে জানাল, তার নাম আনন্দ। গল্প করতে করতেই পৌঁছে গেলাম ন্যারোগেজ লাইনের ছোট্ট স্টেশন ‘আমন লজ’-এ। সেখান থেকে আর একটু এগিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড।
খানের মাজিওয়াড়া যাবার জন্য ২৩০০ টাকায় রফা হল একটি নতুন হুন্ডাই অরা। দুপুর সোয়া ৩টে নাগাদ গাড়ি চলতে শুরু করল। গরম যথেষ্ট। সদ্য পরিচিত পশ্চিমঘাটের উতরাই পথে গাড়ি নামতে শুরু করল। মাত্র ২০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম নেরাল-এ। পশ্চিমঘাট থেকে নেমে এসে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। পথে আর কোথাও না থেমে সোজা মাজিওয়াড়ায় রুস্তমজির অ্যাজিয়ানো টাওয়ার-এর নীচে গাড়ি এসে থামল বিকেল ৫টা নাগাদ।
গল্পটা এখানেই শেষ হবার কথা ছিল, কিন্তু আমরা তা হতে দিলাম না। কারণ কারুরই ঘরে থাকার ইচ্ছে নেই। ফ্ল্যাটে এসে লাগেজ রেখে নীচে নেমে আবার একটি গাড়ি বুক করা হল। আমরা এবার যাব ভারসোভা বিচ। গাড়ি ছুটতে লাগল ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে। ভারসোভার অবস্থান উত্তর মুম্বইয়ে। থানে থেকে ভারসোভা বিচের দূরত্ব ২৯ কিমি। সেখানে পৌঁছোলাম সন্ধে নাগাদ। ফলে ওই বিচ থেকে অপরূপ সূর্যাস্ত দেখা হল না!
বিশাল ভারসোভা বিচ নিঃসন্দেহে মুম্বইয়ের সেরা বিচ। আরব সাগরের জলে পা ভিজালাম। বিচে জোরে হাওয়া বইছিল। ভারসোভা জেলেদের একটি ছোটো গ্রাম। বিচের পিছন দিকে একটি ছোটো অস্থায়ী দোকানে বসে চা-কফি খেতে খেতে দেখছিলাম – পর্যটক, ফেরিওয়ালা ও স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে বিচে ঘটতে থাকা নৈমিত্তিক ঘটনাগুলো। ৯টায় উঠে পড়লাম বিচ ছেড়ে। গাড়ি বুক করা হল থানে ফেরার জন্য। ভারসোভা বিচ পড়ে রইল পিছনে। গত দেড় দিনে পাহাড়, জঙ্গল ছাড়াও দেখে নিলাম সমুদ্র।
কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
কীভাবে যাবেন: মুম্বই থেকে ট্রেনে নেরাল এসে সেখান থেকে টয় ট্রেনে চেপে আসতে পারেন মাথেরান। অথবা, মুম্বই থেকে নিজের গাড়ি বা ট্যাক্সিতে চেপে চলে আসুন মাথেরানে। সময় লাগবে দুই ঘণ্টা।
কখন যাবেন : সারা বছরই যাওয়া যায় মাথেরানে, যদিও সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বর্ষায় না যাওয়াই ঠিকা
কোথায় থাকবেন : বিভিন্ন বাজেটের (২০০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত) হোটেল রয়েছে মাথেরানে। অনলাইনে অগ্রিম বুকিং বাঞ্ছনীয়।