বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের বিশেষ করে গাল এবং চোখের নীচের অংশের ময়েশ্চার এবং ভলিউম কমতে থাকে। সুতরাং ফেস সিরাম ব্যবহার করলে ময়েশ্চার এবং ভলিউম দুই-ই ফিরে পাওয়া যায়। আসুন, জেনে নিই কী ধরনের সিরাম আমাদের ব্যবহার করা উচিত।
কী ধরনের সিরাম ব্যবহার করবেন
বাজারে অনেক ধরনের সিরাম পাওয়া যায় যেগুলি দাগছোপ, ফাইনলাইনস, বলিরেখা, নিষ্প্রাণ শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু কোন সিরাম কী ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে সেটা বেছে নেওয়াটাই মুশকিল হয়। সুতরাং নিম্নোক্ত কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখা দরকার—
ত্বকের ধরন
নিজের ত্বকের ধরন আগে থেকে জেনে রাখা দরকার। সাধারণত ৫ ধরনের ত্বক হয় — নর্মাল স্কিন, অয়েলি স্কিন, ড্রাই স্কিন, সেনসিটিভ স্কিন এবং মিক্স স্কিন। যদি আপনার ত্বক অয়েলি হয় এবং আপনি এমন Face Serum ব্যবহার করছেন যা ত্বককে আরও অয়েলি করে দিচ্ছে, তাহলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ত্বক অনুযায়ী সিরাম বাছুন।
ত্বকের নানা সমস্যায়
ফেস সিরাম কেনার আগে চিন্তা করে দেখুন ত্বকের কোন সমস্যার জন্য সিরাম কিনতে চাইছেন। বলিরেখা, দাগছোপ নাকি রোদের তাপে পিগমেনটেশনের সমস্যায় ভুগছেন অথবা ব্রণর সমস্যায় আপনি জর্জরিত? সমস্যা অনুযায়ী সিরাম বাছলে উপকার বেশি পাবেন।
আলাদা আলাদা ফেস সিরামে নানা ধরনের উপাদান থাকে। ডার্মাটোলজিস্ট এবং কসমেটোলজিস্ট ডা. চাঁদনি জৈন-এর মতে, সিরামে সেরামাইড্স গ্লিসারিন, জিংক, আর্ণিকার মতো অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান থাকে। এগুলি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে সারিয়ে তোলে। সিরামে অন্যান্য ত্বকের উপাদানের থেকে অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস-এর কনসেনট্রেশন অনেক উচ্চমাত্রায় থাকে।
এর মধ্যে উপস্থিত সেরামাইড ত্বকের ভিতর ময়েশ্চার ধরে রেখে, ত্বকের রুক্ষতা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। গ্লিসারিন ত্বকের হাইড্রেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শরীরের ন্যাচারাল প্রোটেক্টিভ বেরিয়ার রিস্টোর করে। ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করতে অ্যালোভেরা সাহায্য করে।
ভিটামিন সি, কে, ই প্রভৃতি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস ত্বককে দূষণমুক্ত এবং দূষণের কারণে হওয়া সমস্যাগুলি থেকে ত্বকের সুরক্ষা দেয়। লিকোরিস ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এতে লিকুইরিটিন নামে সক্রিয় যৌগিক পদার্থ থাকে। এছাড়াও জিংক-এ অ্যান্টি এজিং গুণ রয়েছে। একই ভাবে আর্নিকা ত্বকে আঘাত লেগে থাকলে প্রভাবিত অংশ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
সঠিক উপায়
Face Serum ব্যবহারের সঠিক উপায় কী?
- সর্বপ্রথম মুখে লেগে থাকা ধুলোময়লা, নোংরা, অতিরিক্ত তেল মুছে ফেলতে ক্লিনজারের সাহায্যে ত্বক পরিষ্কার করুন
- এবার পছন্দের সিরামের ২ ফোঁটা আঙুলে নিয়ে পরিষ্কার ত্বকে মালিশ করে লাগান। এতে ত্বকে সিরাম ভালো ভাবে অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে। হালকা হাতে মুখে আপওয়ার্ড মোশনে মাসাজ করুন। খুব জোর দিয়ে বা রগড়ে লাগাবেন না
- যাদের ড্রাই স্কিন তাদের ভেজা ত্বকে সিরাম লাগানো উচিত। কারণ আর্দ্র ত্বকেই সিরাম ভালো ভাবে পেনিট্রেট করতে পারে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের উচিত ত্বকে লেগে থাকা জল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে তবেই সিরাম ব্যবহার করা অন্যথায় সিরামে পেনিট্রেশন প্রসেস স্লো হয়ে যাবে— যার ফলে ত্বকে ইরিটেশন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে
- প্রতিবার সিরাম লাগাবার পর ত্বক অবশ্যই ময়েশ্চারাইজ করবেন। দিনের বেলায় ৩০ অথবা এর অধিক এসপিএফ-যুক্ত সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি যাতে রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখা যায়
- সিরামকে আমরা মেক-আপ বেস অথবা প্রাইমার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এরপর খুব সহজেই মেক- আপ ত্বকে চারিয়ে যায়। এতে মেক-আপের ব্যবহারও খুব কমই করতে হয়। এছাড়াও ত্বকে আগে থেকেই সিরাম লাগিয়ে নিলে প্রাইমারের এফেক্ট খুব ভালো আসে
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের আশেপাশে ফাইন লাইনস দেখা দেয়। সামান্য সিরাম ঠোঁটের আশেপাশে লাগিয়ে নিন। এর ফলে লিপস্টিক লাগালে লুক আকষর্ণীয় হয়ে উঠবে।
- কনসিলার লাগানোর আগে চোখের চারপাশে সিরাম লাগিয়ে নিলে আই মেক-আপ স্মাজ করবে না। সিরাম, মেক-আপকে স্মুদ ফিনিশ দেয়। ভিটামিন সি ও কোলোজেন থাকার ফলে মুখের ফাইন লাইনস ঢাকতে সিরাম সাহায্য করে।