ব্রেকফাস্ট টেবিলে শাশ্বতীর মেজাজের বহর দেখে ভেতরের ভয়টা আতঙ্ক হয়ে দেখা দিল তুহিনের। বউ হিসাবে শাশ্বতী বেশ ধীর- স্থির এবং সহনশীল। কিন্তু শেষ এক সপ্তাহে শাশ্বতীর মেজাজ বেশ তুঙ্গে উঠে আছে। কারণটা নিঃসন্দেহে মেয়ে পর্ণার স্কুলের ফার্স্ট টার্মের রেজাল্টে সায়েন্স গ্রুপে নম্বর কমে যাওয়া। একটা টার্মে নিয়মিত আশি শতাংশ পাওয়া মেয়ে যদি হঠাৎ করে সত্তর শতাংশে নেমে আসে, তার জন্য মেজাজ এতটা উদগ্র হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস তুহিন দেখাতে পারেনি।
কাল রাতে বেডরুমে শাশ্বতী ঢোকার পর নিরীহ গলাতেই বলেছিল, ‘এসিটা একটু চালিয়ে দেবে?'
উত্তর এসেছিল বাজখাঁই গলাতে, ‘ইচ্ছে হলে নিজে চালিয়ে নাও। আমার দরকার নেই।'
এতগুলো বছরের বিবাহিত জীবনের সম্পর্কে সে অর্থে কোনও টানাপোড়েন নেই। গলা তবুও মিনমিনে করে বলেছিল, 'ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ের স্কুল পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আমার মনে হয়, তুমি অতিরিক্ত রিয়্যাক্ট করছ।'
বেশ রূঢ়ভাবে শাশ্বতী বলেছিল, 'নিজে কেরিয়ার তৈরি করার পর যদি দিনরাত অফিস নিয়ে ব্যস্ত থেকে, টিউশনের টাকা দিয়ে নিজেকে খালাস ভাবো, তাহলে এ নিয়ে মন্তব্য করা তোমার সাজে না। বিশেষত যেখানে এক বছরের মধ্যেই বোর্ডের পরীক্ষা মেয়ের।'
পরের বলা কথা বা যুক্তি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে ভেবে চুপ করে গিয়েছিল তুহিন। নিজের ফোন সুইচড অফ করে ঘুমোনোর চেষ্টা করেছিল। এমনিতে নিজের মনও তিনদিন ধরে ভয়ংকর অস্থির হয়ে আছে।
ঘটনার শুরু ঠিক দুদিন আগেই। ফার্স্ট টার্মের পরীক্ষার পর স্কুল হয়েছে একটানা। দিন-দুয়েকের ছুটি পেয়ে শাশ্বতী পর্ণাকে নিয়ে গিয়েছিল বাপেরবাড়ি। শনি-রবি দুদিনই অফিস ছুটি থাকে তুহিনের। রান্নার লোকের করে যাওয়া ডাল-পোস্ত খেয়ে শনিবার দুপুরে একটু তাড়াতাড়ি দিবানিদ্রা যাবার তোড়জোড় করেছিল। বিছানায় শুয়েও এপাশ-ওপাশ করছিল। এসেও যেন ঠিক ঘুম আসছিল না।
নিজের স্মার্টফোন তুলে নাড়াচাড়া করছিল তুহিন। দামি স্মার্টফোনটা কিনেছে মাস দুয়েক। আগে ছোটো টেপা কি-প্যাড ফোন ব্যবহার করত। টেকনোলজি ব্যাপারটায় খুব একটা কোনওদিনই রপ্ত নয়। বিভিন্ন বন্ধুদের অনবরত ব্যবহার করতে দেখে ভেতরে ব্যবহার করার একটা প্রবল ইচ্ছে পেয়ে বসেছিল। নিজের অফিসের ডিপার্টমেন্টে এখনও পর্যন্ত প্রযুক্তির বিশাল ব্যবহার না হওয়াটাও কোথাও গিয়ে তুহিনকে যেন এ ব্যাপারে পিছিয়ে দিয়েছে। ফোন কেনার পরপরই দুমদাম করে নানা অ্যাপ ইনস্টল করে, তাদের ঘিরে একটা প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে শুরু হয়েছিল নিয়মিত নাড়াচাড়া। এটা-ওটার ফাংশানের ভেতর ঢুকে একটা অদেখা পৃথিবীকে আবিষ্কারের নেশা।