সব অভিভাবকেরাই চান তাদের যথাসাধ্য সামর্থ্য দিয়ে সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে এবং এই লক্ষ্যে পৌঁছোতে তারা সারা জীবন পরিশ্রম করেন। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও অর্থের অভাবের কারণে ব্যক্তিকে পরিস্থিতির সঙ্গে অনেক সময়েই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও নামি স্কুল, কলেজে পড়াবার সামর্থ্য তাদের থাকে না। যার ফলে তাদের সন্তানরা কেরিয়ার ওরিয়েন্টেড পড়াশোনা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। অভিভাবকদের বুঝতে হবে যেমন গাছ রোপণ করলেই ফল দিতে শুরু করে না, তাকে সার এবং যত্ন দিয়ে বড়ো করলে তবেই ফল পাওয়ার আশা করা যায়— ঠিক তেমনি একটি বাচ্চাকে সঠিক ভাবে শিক্ষিত করে তুলতে ঠিক সময় Education Planning শুরু করে দিতে হয়।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা
এটি কেন্দ্রীয় সরকারের একটি যোজনা যেখানে কম পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতে বাচ্চার পড়াশোনার জন্য বেশ বড়ো অঙ্কের অর্থ জমা করতে পারবেন। এই যোজনাটি তাদেরই উপকারে আসবে, যাদের রোজগার স্বল্প এবং খুব কম বাজেটে সংসার চালাতে হয়। তবে মনে রাখতে হবে যোজনাটি শুধুমাত্র কন্যা সন্তানের জন্য।
এই যোজনায় আপনি তখনই উপকৃত হবেন, যদি আপনার কন্যা সন্তানের জন্মের ১০ বছরের মধ্যে এই যোজনায় এনরোল করেন। এর জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন মাত্র ২৫০ টাকা।
এই অ্যাকাউন্টে বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকার বেশি জমা করা যায় না। যদি বছরে ১০ হাজার টাকা জমা করেন তাহলে যোজনার নিয়ম অনুযায়ী শেষে গিয়ে ৪ লক্ষ টাকা পাবেন। বেশি টাকা জমা করলে লাভও বেশি পাবেন। কন্যা যখন ১৮ বছরের হবে তখন পড়াশোনায় এই অর্থ ব্যয় করতে পারবে। অভিভাবকদের এর প্রমাণ-পত্রের বিনিময়ে জমানো অর্থ তুলতে দেওয়া হবে।
বর্তমানে বহু অভিভাবকই এই যোজনার মাধ্যমে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছেন। জমা অঙ্ক সামান্য হলেও লং টার্ম-এর পর সেই অর্থ লক্ষ পার করবে। এটি সম্পূর্ণ ভাবে ট্যাক্স ফ্রি।
ফিক্সড ডিপোজিট
অভিভাবকদের মধ্যে এফডি অর্থাৎ ফিক্সড ডিপোজিট খুবই জনপ্রিয়। এতে গ্যারান্টি রিটার্ন পাওয়ার ক্ষেত্রে রিস্কও থাকে না বললেই চলে। এছাড়া সহজেই বিনিয়োগ উইথড্র করেও নিতে পারেন। আলাদা আলাদা ব্যাংকে আলাদা আলাদা রকমের ফিক্সড ডিপোজিট প্ল্যান থাকে। সেটা আপনাকে দেখে নিতে হবে কোন ব্যাংকে এফডি করলে লং টার্ম-এ আপনি বেশি লাভবান হবেন।
বাচ্চারা এফডি টার্ম শেষ হতেই বা ১৮ বছরের পরেই এটি থেকে উপকৃত হতে পারবে। এটাতে জমানো অর্থ সন্তানের পছন্দের কোর্স, অ্যাডমিশন অথবা হায়ার এডুকেশনের জন্য খরচ করতে পারবেন।
স্মার্ট চ্যাম্প ইনশিয়োরেন্স প্ল্যান
এসবিআই-এর স্মার্ট চ্যাম্প, ইনশিয়োরেন্স প্ল্যান বাচ্চাদের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এই প্ল্যানে অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে অর্থ বিনিয়োগ করে বাচ্চার শিক্ষার জন্য বেশ মোটা অঙ্ক জমা করতে পারেন। এর প্রিমিয়াম ও সুবিধামতো বার্ষিক, মাসিক বা ত্রৈমাসিক পদ্ধতিতে জমা করা যায়।
শর্ত এটাই যে, পলিসি যে-নিচ্ছে তার বয়স ২১ থেকে ৫০ এর মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং বাচ্চার বয়স শূণ্য থেকে ১৩- র মধ্যে। কিন্তু বাচ্চার ২১ বছর হলে তবেই স্কিম ম্যাচিওর হয়। এটি বাচ্চার হায়ার এডুকেশন, কোর্স-এর ফিজ ইত্যাদিতে ব্যয় করতে পারেন। এই পলিসির আর একটি ভালো দিক হল কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সংকটের মুহূর্তে পরিবারকে একটা পরিমাণের অর্থ দেওয়া হয়। এছাড়াও এই স্কিম নিলে ট্যাক্স-এও কিছুটা রিবেট পাওয়া যায়।
পিপিএফ
পিপিএফ-এ অনেক কারণেই বিনিয়োগ করা যেতে পারে এবং তা যদি বাচ্চার এডুকেশনের জন্য হয় তাহলে সেটা আরও ভালো। কারণ শুধু বিনিয়োগ করলেই হয় না বরং সঠিক সময়ে সঠিক স্কিমে ইনভেস্ট করাটা খুবই জরুরি।
এই স্কিমটির মেয়াদকাল ১৫ বছর। ব্যাংকের সুদের হারের থেকে এখানে সুদের হারও অনেক বেশি। এমনকী সেকশন ৮০ সি-এর মাধ্যমে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত রিবেট পেতে পারেন। ৫০০ টাকা দিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যায় এবং বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকা জমা করত পারবেন। স্কিম ম্যাচিওর করলে আপনি যত বেশি জমা করবেন, তত বেশি পরিমাণ টাকা আপনি পাবেন। এই পুরো অর্থ আপনি বাচ্চাকে ভালো এডুকেশন দিতে ব্যয় করতে পারবেন।
স্মার্ট প্ল্যানিং
প্রতি বছর শিক্ষা আরও বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠছে। বাচ্চাকে পড়াশোনা করানো এখন আর সহজ নয়। সুতরাং শুরু থেকেই পড়াশোনার জন্য স্মার্ট প্ল্যানিং না করলে লোনের বোঝায় চাপা পড়তে হবে অথবা কোয়ালিটি এডুকেশন দিতে সমস্যায় পড়তে হবে। এর জন্য সময় থাকতে যথাযথ বিনিয়োগ করার সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, মুদ্রাস্ফীতির হিসেবে শিক্ষার জন্য মোট কত ব্যয় করতে হতে পারে এবং সেই হিসেবে বিনিয়োগ করতে হবে।
যেমন ধরুন শিক্ষাক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ১০-১২ শতাংশ এবং যদি ইনফ্লেশন মোটামুটি ৬ শতাংশ হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে যে কোর্স-টি করতে বর্তমানে ৫-৬ লক্ষ টাকা খরচ হয় সেটাই ১৫ বছর বাদে ১৪-১৫ লক্ষ টাকা লাগবে কোর্স-টি করতে। সুতরাং বাচ্চার সু-ভবিষ্যতের জন্য স্মার্ট প্ল্যানিং করা খুবই জরুরি।