শীতকাল সেরা ঋতুগুলোর একটি হলেও এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। জেনে রাখুন, শীতকালে তাপমাত্রা যত কমে, তত বাড়ে আপনার রক্তচাপ। তাই শীতের জায়গায় বেড়াতে গেলেও এই ধরনের রোগীদের বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। আসলে যত বেশি ঠান্ডা পড়ে, তত সংকুচিত হয় আপনার রক্তবাহী নালীগুলি। তার মধ্যেও রক্ত চলাচল যথাযথ রাখতে গেলে শরীরকে রক্তচাপ বাড়াতেই হয়। ফলে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের এই ঋতুতে একটু বেশিই সাবধানে থাকা উচিত, তা না হলে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার কারণে আপনার দেহকে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করার জন্য বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে আসে। আপনার দেহকে যেহেতু অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন করতে হয়, তাই বলা হয় শীতকালে স্যুপ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। স্যুপ আপনাকে শুধু ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে না, এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
আপনি গাজর, পালংশাক, মাশরুম, মুরগি এবং অন্যান্য সবজির স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন। এটি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এই ঋতুতে আপনি নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। শীতকালে সচরাচর যে রোগগুলো হয়, তার অন্যতম হল ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশি, ভাইরাল ফ্লু, শ্বাসকষ্ট, কফ এবং অন্যান্য ইনফেকশন।
নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগও এসময় মানুষকে আক্রান্ত করে। বিশেষ করে যেখানে তাপমাত্রা অতিরিক্ত কমে যায়। শীতকালে অ্যাজমার মতো রোগও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়া জয়েন্ট পেইন এবং আথ্রাইটিস-এর মতো রোগও আরও জোরালো হতে পারে। কেন-না শীতকালে ঠান্ডার কারণে জয়েন্টে রক্তপ্রবাহের গতি ধীর হয়ে আসে এবং ব্যথা বাড়ে।
কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো শীতকালে খেলে শরীর চাঙ্গা থাকে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ১০টি খাবারের নাম।
১) ঘি
যদিও অনেকেই মনে করেন ঘি খেলে মোটা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, কিন্তু জেনে রাখুন সীমিত পরিমাণে ঘি খেলে স্বাস্থ্যের জন্য তা উপকারী হতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে ঘি দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কারণ ঘি-তে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
২) মাখন
সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর একটি হল মাখন। এতে আছে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি এবং চর্বি। শীতকালে সামান্য পরিমাণে মাখন খেলে দেহের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। বাচ্চাদের ঠান্ডা কম লাগে।
৩) টম্যাটো
একবাটি ধোঁয়া ওঠা টম্যাটো স্যুপ খেলে শীতকালে আপনি দারুণ উপকার পাবেন। টম্যাটোতে আছে ভিটামিন সি এবং লাইকোপেন উপাদান, যা আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলবে এবং শীতকালীন রোগ-বালাই থেকে শরীরকে মুক্ত রাখবে।
৪) সবুজ শাক–সবজি
বছরের যে-কোনও সময়ই সবুজ শাক-সবজি খাওয়া ভালো। তবে শীতকালে দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে, সবুজ শাক-সবজি বেশ কার্যকর।
৫) বাদাম
বাদাম খুবই স্বাস্থ্যকর। খাবারের স্বাদ বাড়াতে সাধারণত বাদাম ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন জলে ভেজানো এক মুঠো কাঁচা বাদাম খেলে, হৃদরোগ এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা প্রতিরোধ হয়। তবে বাদাম আপনার দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে এবং শীতকালে আপনাকে সুস্থ রাখতেও বেশ কার্যকর।
(৬) গোলমরিচ
শীতকালে খাবারের সঙ্গে গোলমরিচ দিলে, তা রোগ-বালাই দূরে রাখে। কালো গোলমরিচে আছে এমন উপাদান, যা নানা ধরনের শীতকালীন রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। যেমন শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লাগা বা সর্দি, কফ এবং জয়েন্ট পেইন।
৭) আপেল
শীতকালে আপেলের উৎপাদন হয় বেশি। এই সুস্বাদু ফলটিতে আছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, নানা ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি। এসব উপাদান হজম ক্ষমতা বাড়ানোর পাশপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয়।
৮) ডার্ক চকোলেট
ডার্ক কোকো পাউডার থেকে তৈরি এক গেলাস গরম চকোলেট খেতে পারলে, শীতকালে আপনার বিপাকীয় প্রক্রিয়া ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এতে দেহের তাপমাত্রাও বাড়বে। শীতে প্রতিদিন আপনি এক টুকরো খাঁটি ডার্ক চকোলেটও খেতে পারেন।
9) খেজুর
শীতকালে আপনাকে ভেতর থেকে গরম রাখতে খেজুরের জুড়ি মেলা ভার। এই সুস্বাদু এবং উচ্চ পুষ্টিকর খাবারটি বছরের যে-কোনও সময়ই খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
১০) দারচিনি
শীতকালে দারচিনি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি দৈনিক মেটাবলিজম বাড়ায়, যা শরীরে তাপ তৈরি করে। এই কারণে, আপনি ঠান্ডা আবহাওয়ায় শুকনো কাশির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। আপনি চায়ে দারচিনি যোগ করে প্রতিদিন এটি খেতে পারেন বা গরম জলের সাথেও পান করতে পারেন।